Digital Bangladesh Warriors - fb.com/openbd
২৭ নভেম্বর ২০০৯ আগামি কাল পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদকে সামনে রেখে গতকাল এবং আজ দেশের বিস্তৃর্ন একটা এলাকা মোটর সাইকেলে ড্রাইভ করলাম। মোটর সাইকেলে আসলে দেশটাকে ভালো দেখা যায় তাই এই বাহনটাকে আমি বরাবরই পছন্দ করি। গতকাল সকালে ঢাকা থেকে গাজিপুর রাজেন্দ্রপুর হয়ে কিশোরগঞ্জ আজ দুপুরের পরে কিশোরগঞ্জ থেকে মাইমেনসিং ।
রাস্তা দুইশ কিলোমিটারের উপরে হবে।
মাঝে যা দেখলাম গ্রাম ধান ক্ষেত বাজার উপজেলা আর মানুষ। শুধু মানুষ আর মানুষ, লক্ষ কোটি মানুষ, গিজগিজ করছে মানুষ। এত মানুষ যে কেউ যদি রাস্তায় কোথাও দাড়িয়ে ফরিদ, কবির বা কাদির এরকম কোন একটা নামে ধরে জোরে ডাক দেয় নির্ঘাত এই নামেই আট দশজন লোক ঘুরে দাড়াতে পারে। সন্ধার একটু আগে আগে ঈশ্বরগঞ্জ বাজার পার হচ্ছি। এত মানুষ চারদিকে যে রাস্তার উপরও মানুষ জন গুটি গুটি পায়ে ইতস্তত চলাফেরা করছে।
মাঝে মাঝে গাড়িগুলি এই ভিরের মধ্যে স্লোমোশনে এগুচ্ছে আর গাড়িটা পাস হয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই ছোট কচুরিপানার পুকুরের মত মানুষগুলো আবার রাস্তাটা ঢেকে ফেলছে। এই বাজারের শেষ মাথায় একটা চা দোকানে চা খেতে দাড়ালাম। এক মুরুব্বী চা বানাচ্ছে। একটা চা ওডার দিলাম, আমি জিজ্ঞেস করলাম মুরুব্বী আজ থেকে বিশ ত্রিশ বছর আগে এমন দিনে এই বাজারে কেমন মানুষ দেখেছেন ? উত্তরে সে সহজ করে বললো সংগ্রামের সময় এই বাজারে লোকজন গোনা যেতো।
দেশে অংকের হিসাবে ১৬ কোটি লোক সংখ্যা, প্রকৃত হিসাব অনেক বেশি হওয়াই স্বাভাবিক তা চারপাশের ডেন্সিটি দেখলেই বলা যায়।
হাইওয়ে লেন্ডস্কেপেও কোথাও চোখ মেলে অন্তত একশ বর্গ মিটারে জায়গায় কোন মানুষ দেখা যাবে না এমন জায়গা পাওয়া যাবে না। টেম্পু লেগুনা বাস ট্রাক ট্রেন লঞ্চ স্টিমার সব জায়গায় ছাদের উপর পর্যন্ত তিল ধারনের ঠাইটিও নাই। লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি মানুষ। কালো রোদে পোড়া জীর্ন পরিশ্রমী মানুষ। কোথাও কোথাও এই ছাদ ভর্তি মানুষ নিয়ে বাস খাদে পরছে আবার কোথাও লঞ্চ ডুবছে প্রিয় জনকে নিয়ে ঈদ করার স্বপ্ন বুকে নিয়ে এদেশের এই মুল্যহীন মানুষগুলো মরছেও।
দীর্ঘ পথ ধরে এইযে এত মানুষ দেখলাম একটা জিনিষ দেখলাম না খুজে পেলাম না। তাহলো এইযে এত মানুষ তাদের কোন ভবিষ্যৎ দেখলামনা। এইযে যে এই রাস্তাটি, প্রতিটি বাস যাওয়ার পর গত পনের বছর যাবৎ পিছনে কুয়াশার চেয়ে ঘন ধুলা রেখে যাচ্ছে, সিটিও ভবিষ্যতে কখও হয়তো কমপ্লিট হবে কাজ শেষ হবে কিন্তু এই মানুষগুলো এদের কোন ভবিষ্যৎ দেখা যাচ্ছে না গত চল্লিশ বছরও ছিল না আগামী চল্লিশ বছরেও সম্ভাবনা নেই।
এই সমাজ এই রাষ্ট্র এদের জন্য কোনই ভবিষ্যৎ তৈরী করতে পারছে না। এই মানুষগুলিই খেটেখুটে, খেয়ে না খেয়ে প্রতিটা দিন প্রতিটি ঈদ পার করছে, আবার পরের দিন আবার সেই তিমির।
অথচ এই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এই মানুষগুলোর সামান্য অভিযোগটিও নেই। যেখানে শুধু মাত্র রাষ্ট্র যন্ত্রে স্বচ্ছতা এবং সঠিক সময়ে দুনিয়ার অন্য দেশের সাথে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্তটা নিলেই এই রাষ্ট্রই পারে এই সমস্ত মানুষের ভাগ্য ও ভবিষ্যৎ সব নির্ধারন করতে সেখানে এই মানুষগুলো বছরের পর বছর ধরে গায়ে গতরে দিন রাত পরিশ্রম করে পাহাড় ঠেলে যাচ্ছে ওপারে একটু পরিবর্তন দেখার আশায়, একা একা কোন অভিযোগটিও না করে।
শুধু মাত্র রাষ্ট্র যন্ত্রে স্বচ্ছতা এবং সঠিক সময়ে দেশের প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্তটা।
কোরবানী মোবারক, ঈদ মোবারক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।