বৃষ্টিতে হাঁটতে ভাল লাগে আমার কারন কেউ দেখেনা দুচোখের জল ধুয়ে যায় বৃষ্টিধারায়
ঘড়ির কাটাঁয় যখন ঠিক সকাল ৭ টা বাজে আমাদের বাসটি তখন প্রায় মূল শহরের ভেতরে প্রবেশ করেছে । কিছুক্ষন পর দেখলান সুদীর্ঘ লেকের পাশে বিশাল এক হোটেলের সামনে বাস যেয়ে দাড়াল দেখলাম সুউচ্চ হোটেলটির একেবারে উঁচুতে সোনালী হরফে লেখা গ্রান্ড হোটেল।
গ্রান্ড হোটেল টি ১৮৭৪ সালে ১৪ জুনে উদ্বোধন করা হয় । সে সময় হতে এই হোটেলে সুইডেন আগত সব নামীদামী মনীষীরা বিশেষ করে ১৯০১ সাল হতে সব নোবেল বিজয়ীরা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সেখানে অতিথি হিসেবে রাখা হত । এই হোটেলে শুনলাম আমাদের রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর এবং বর্তমানে সদ্য প্রয়াত মাইকেল জ্যাকসনের মত নামী তারকারা এই হোটেলে এসে থেকেছিলেন।
যদি ও আমি এর কোন হিসাবের মধ্যই পড়িনা তারপরও আল্লাহর কাছে ধন্যবাদ আমার কাজের খাতিরে হলেও এই হোটেলের অতিথি হিসেবে সেবা নেয়ার সৌভাগ্য তিনি করে দিলেন বলে। বাসে থেকে নেমেই ছোট্ট এক দৌড়ে শীতের কামড় কে ফাঁকি দিয়ে মূল প্রবেশ পথ দিয়ে দ্রুত ঢুকে পড়লাম হোটেল গ্রান্ডের মূল লবীতে ।
ভেতরে ঢুকেই একটু অবাক হলাম ভেতরে পরিবেশ বেশ আরামদায়ক উন্ষতা। মেইন গেট পেরিয়ে কয়েক ধাপ সিড়ি তারপরে মূল লবী। সামনেই অভ্যর্থনায় দাড়িয়ে থাকা হোটেল স্টাফের কাছ থেকে রুমের পান্চিং কার্ড বুঝে নিয়ে লাগেজ নিয়ে ৪র্থ তলায় চললাম নিজের কক্ষে ।
উদ্দেশ্য প্রথমে কড়া করে একটা শাওয়ার তারপর ড্রেস চেন্জ করেই নিচে এসে কড়া কফিতে ভ্রমনের শেষ ক্লান্তি দূর করা তারপর পরবর্তী পরিকল্পনা ঠিক করা।
৪র্থ তলায় এসে রুম নম্বর খুঁজে বের করলাম আমার সাথে আমার একজন ভ্রমন সংগী আমার রুমমেট । উনি দেখি আমার আগেই এসে পৌঁছে গেছেন । এবং রুমে লাগেজ রেখেই উনি বেরিয়ে গেছেন ।
আমি এই হোটেলে ঢুকে সবচেয়ে অবাক হয়েছি যে হোটেলটি যদিও সব ধরনের আধুনিক সুবিধার ব্যবস্থা রেখেছে কিন্ত সেইসাথে এই হোটেলের প্রাচীন ঐতিহ্যকে একসূতায় বেধে রেখেছে ।
তার প্রমান লবীতে চারধারের দেয়ালে মধ্যযুগীয় বিভিন্ন মনীষীদের পোর্ট্রেট ছোট্ট এক লাইব্রেরী রুমের বইয়ের তাকে অসংখ্য পুরোনো মলাটের বই এবং সব ধরনের আসবাব পত্র দেখে মনে হল অনেক পুরোনো এবং ভারী । এমনকি আমার রুমে একদিকে যেমন বিভিন্ন আধুনিক জিনিষপত্র দেখলাম সেইসাথে দেখলাম দেয়ালে লাগানো খুব পুরোনো এক ছোট্ট আলমিরা টাইপ । এই ধরনের আলমিরা বা দেয়াল তাক আমাদের দেশেও কিছু পুরোনো বাড়ীতে এখনও দেখতে পাওয়া যায় ।
যাই হওক ক্লান্ত শরীরে একে একে শরীর থেকে ওভারকোট এবং এর পড়ে কয়েক স্তরের শীত আবরনী খুলে অবশেষে ঢুকলাম বাথরুমে শাওয়ার নিতে । বেশ কয়েক ধরনের শাওয়ার ফ্লেভার মিক্স করে বেশ কষে গোসল করলাম বেশ গরম পানিতে ।
তারপর ঝরঝরে শরীরে আবার ও সেই ক্লান্তিকর কয়েক স্তরের শীতের আবরনী মানে প্রথমে ইনার তারপরে শার্ট পরে স্যুট এবং সবশেষে ওভারকোট ,গ্লাভস, কানটুপি হাতে নিয়ে চললাম গ্রাউন্ড লবীতে সকালের নাস্তা সারতে। ইতিমধ্যে পেটে অনবরত ঘন্টার বদলে সাইরেন বেজে চলছে ক্ষিধের জ্বালায়। একেতো অনেকক্ষন কিছু খাওয়া হয়নি তারওপর গরমপানির গোসলে সেই ক্ষুধা সূদে আসলে বেড়ে কয়েকগুনে দাঁড়িয়েছে।
নিচে এসে দেখলাম ঠিক রাস্তা ঘেঁষে বিশাল কাঁচের দেয়ালের ভেতরের হলরুমে সারি সারি টেবিলচেয়ারে বসে সবাই নাস্তার কাজ সারছে আর সামনে কাঁচের দেয়ালের ওপারে রাস্তা আর তার পরেই বিশাল লেকের শান্ত সমাহিত রুপ। সেটা ছিল অসাধারন এক সকাল বেলা আমার জীবনে ।
ব্যুফে ছিলো বলে নিজে যেয়ে অসংখ্য খাবারের মাঝে কিছু আইটেম বিশেষ করে অপরিচিত কিছু ফল তুলে নিলাম প্লেটে এছাড়া পরিচিতর মধ্যে নিলাম পাউরুটি,জেলী ,ডিম আর ফলের জুস । সবকিছু নিয়ে বসলাম টেবিলে তারপর শুরু করলাম পেটপূজা ।
কিছুক্ষন পর খাওয়া শেষ করে গরম কফিতে চুমুক দিতেই সুন্দরী এক সুইডিশ ওয়েট্রেস এসে জানতে চাইলো আমার কিছু লাগবে কিনা? উত্তরে ধন্যবাদ জানিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম কিছু সময়ের জন্য আশেপাশে আমি কি কোন দর্শনীয় জিনিষ দেখতে পারবো কিনা ? সে বিনীতভাবে আমাকে এই বিষয়ে হোটেল গাইডকে জিজ্ঞেস করতে বলে চলে গেলো। ঘড়িতে তখন প্রায় ৯ টা বাজতে চলেছে। আমার আজকে কোন কাজ নেই শুধু স্টকহোম শহর দেখে বেড়ানো ছাড়া ।
আগামীকাল থেকে শুরু হবে আমার অফিসিয়াল কাজ । যাই হওক এই পোস্টে আমার অফিসিয়াল কাজকে উহ্য রেখে আমি শুধু আমার ব্যক্তিগত ভ্রমনের বিষয়ে কথা বর্ননা করব ।
চলবে
বিশেষ দ্রষ্টব্য : আমার তোলা ছবিতে বেশ কয়েকজনের ছবি থাকাতে তাদের বিনা অনুমতিতে ছবিগুলো পোস্ট করতে না পারায় পোস্টের সাথে প্রসংগিক বিষয়ের ছবিগুলো নিজ সংগ্রহ থেকে না দিয়ে ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করে দিলাম । তবে এবিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারেন দেয়া ছবিগুলোর সাথে বাস্তবের কোন হেরফের নাই। এই অসুবিধার জন্য আমি দুঃখিত।
তবে পরের পোস্টে কিছু নিজের তোলা ছবি থাকবে অবশ্যই।
আগ্রহীরা গ্রান্ড হোটেলের এই ওয়েব এড্রেস থেকে হোটেলটি সম্পর্কে একটি ধারনা নিতে পারেন
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।