বৃষ্টিতে হাঁটতে ভাল লাগে আমার কারন কেউ দেখেনা দুচোখের জল ধুয়ে যায় বৃষ্টিধারায়
সুইডেনের স্টকহোমের আরলান্ডা এয়ারপোর্টে অবশেষে আমাদের কাতার এয়ারলাইন্সের বিমানটি ক্লান্ত শরীরে রানওয়ের টারমাকে এসে দাড়ালো। তখন ও সকালের ঘন কুয়াশার চাদরে জড়িয়ে আছে স্টকহোমের শহরের অলিতে গলিতে আর রাস্তায়। ঘুম ভাংগা ক্লান্ত চোখে চোখ মেলে দেখতে চেষ্টা করলাম বিমানের ছোট্ট জানালা দিয়ে বাইরেরে অজানা পরিবেশকে ।
কিছুক্ষন পর বিমানে স্বল্প কজন সুইডিশ যাত্রীর সাথে নেমে আসলাম আমরা কিছু বাংলাদেশী। দরজার সামনে এসে দাড়িয়ে প্রথম টের পেলাম ঠান্ডা আর শীতের কামড় কাকে বলে ।
ভাগ্য ভাল বিমান থেকে বের হবার আগেই আমি গায়ে এই প্রথম ওভারকোট নামে একটি বিশাল বস্তু গায়ে চাপিয়ে দিয়েছিলাম । যার কারনে ঠান্ডার কামড় থেকে শরীর কোন মতে বাচঁলেও বিমানের সিড়ি থেকে নেমে কিছু দূরে অপেক্ষামান বাসে পৌছাঁনোর আগেই গ্লাভস বিহীন হাতে জমে বরফ আর কান যেন ঠান্ডায় ভোঁ ভোঁ করছিলো। এই প্রথম জীবনে টের পেলাম ১ ডিগ্রী তাপমাত্রা কাকে বলে ।
বাসে উঠে বসতেই আমাদের কজন যাত্রী নিয়ে মসৃন গতিতে ছুটে চললো বিশাল আরামদায়ক বাসটি খোলা প্রান্তরের মাঝ দিয়ে। আরলান্ডা এয়ারপোর্টি স্টকহোমের মূল শহরটি থেকে বেশ কিছুটা দূরে ।
এয়ারপোর্ট থেকে মূল শহরে পৌঁছুতে সময় লাগে প্রায় ৪০ মিনিটের মত। ঘুম ঘুম চোখে তাকালাম বাইরের অজানা প্রকৃতিকে দেখবার জন্য। সারা আকাশ মেঘলা সূর্যের কোন দেখা নাই । এই সময়টা মানে অক্টোবার মাস থেকে এই স্কান্ডিনেভিয়ান দেশগুলো তে নাকি একদিকে যেমন ঠান্ডা পড়তে শুরু করে অন্যদিকে তুষার পড়ে নাকি সব রাস্তাঘাট সব বন্ধ হয়ে যায়।
আমাদের ভাগ্য ভাল আবহাওয়া পূর্বাভাষে নাকি এখনও পর্যন্ত নাকি তুষার পড়ার কোন সম্ভবনা দেখা যায়নি ।
আর এখানকার জনগন ও খুবই নির্ভরশীল এই আবহাওয়া পূর্বাভাষের উপর কারন এদের অনুমান এতটাই বিজ্ঞান নির্ভর যে অতীতে এর ব্যতিক্রম নাই বললেই চলে। বাইরের খোলা প্রান্তরের বেশ কিছুদূর পর চোখে পড়ে খামারবাড়ি বিস্তীর্ন সবুজ প্রান্তর আর নানান রং এর পাতা যুক্ত বৃক্ষের সমাহার। অদ্ভুত সেই দৃশ্য ফুল ছাড়া শুধুমাত্র বাহারী পাতার সমারোহে প্রকৃতি যে এত সুন্দর হতে পারে সেটা চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করতামনা।
কিছুক্ষন পর বাসটি মূল শহরের ভেতরে প্রবেশ করলে রাস্তার দুপাশে খোলা প্রান্তরের চেহারা বদলে গেলো । বিস্তীর্ন সবুজ প্রান্তর, ফার্ম হাউস আর উইন্ডমিলের পরিবর্তে চোখে পড়লো বড় বড় দালানকোঠা যার বেশীর ভাগ পৃথিবীর নামকরা সব কোম্পানীর অফিস।
স্টকহোমের শহরের রাস্তাগুলো যেন এক বিশাল গোলকধাঁধার চক্কর । শহরের বুকে রাস্তাগুলো যেন মাকড়সার জালের মত ছড়িয়ে আছে । কিন্ত সুশৃন্খল আর নান্দনিকতার ছোঁয়া নিয়ে । মসৃন রাস্তাগুলোর উপরে বটবৃক্ষের মত ছায়া দিয়ে আগলে রেখেছে অসংখ্য ফ্লাই ওভার । এখানে যারা গাড়ীচালক তাদের খুব সাবধানতার সাথে দেখে গাড়ী চালাতে হয় কারন একবার লেন ভুল করলে সঠিক রাস্তায় আসা অথবা পার্কিং এর জন্য লম্বা পথ পাড়ি দিতে হয় ।
সুইডিশরা জাতিগত ভাবে নিয়ম পালনে অভ্যস্ত তাই সড়কে কোন সমস্যা কারও খুব একটা হয়না।
রাস্তা ধরে আমাদের বাস এগিয়ে চলছে স্টকহোমের মসৃন রাস্তা ধরে তখন সকাল আনুমানিক ভোর ছয়টা বেজে ৩০ মিনিট । রাস্তায় দেখলাম অসংখ্য গাড়ী ছুটে চলেছে। জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম সপ্তাহের দুইদিন বাদে বাকী পাঁচ দিন এরা খুব ভোরে প্রায় ০৫৩০ থেকে বাসা থেকে বের হয় কাজের উদ্দেশ্যে
প্রথম পর্ব শেষ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।