অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা
আমাদের সংস্কৃতি চর্চাই নির্ধারণ করে দেয় আমাদের প্রচলিত এবং প্রসারিত ধর্মে কি কি উপাদান থাকবে, মানুষের জন্ম-মৃত্যু এবং সন্তানউৎপাদন প্রক্রিয়া কিংবা সমাজের জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া এবং সম্পদের বিলিবন্টন কিভাবে হবে সেটা আমরা ধর্মীয় নীতিতে নির্ধারণ করি। এবং একই সাথে এটাও সত্য বিদ্যমান ভৌগলিক পরিস্থিতিও নির্ধারণ করে আমাদের সংস্কৃতি চর্চার ধরণ কিরকম হবে।
মৃতের সৎকার মৃতের জন্য নয় মোটেও, বরং সেটা জীবিতের প্রয়োজনে, তাকে মাটি চাপা দেওয়া, তাকে পুড়িয়ে ফেলা কিংবা নির্জন কোনো ভাগাড়ে ফেলে আসা এই সব কর্মসূচিই জীবিত মানুষের নিরাপত্তার প্রয়োজনে, কোনো সৎকার প্রক্রিয়াই আসলে প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার সুবিধা ও সুযোগের বাইরের কিছু না।
পার্সিয়ানরা নিজের মৃতদেহকে টাওয়ার অফ সাইলেন্সে রেখে আসে, এটার সপক্ষে তাদেরও যুক্তি আছে, মৃতদেহকে বিনস্ট না করে পশুপাখীদের ভক্ষণের জন্য রেখে আসা, আরও ৫০০০ বছর অতীতে গেলে দেখা যাবে এই সংকার প্রক্রিয়ার শুরু হয়েছে এমন এক সমাজ ব্যবস্থায় যেখানে গোরখোদার কোনো ব্যবস্থা ছিলো না।
যেহেতু গোরখোদার কোনো ব্যবস্থা ছিলো না, সুতরাং এই মৃতদেহ পচে জীবিত মানুষকে অসুস্থ এবং জীবানুআক্রান্ত করবার আগেই তাকে সমাজ থেকে দুরে কোথাও ফেলে আসাটাই মূল সৎকার ছিলো।
এই সৎকারের প্রক্রিয়া থেকেই একটা লোকাচারের সূচনা এবং সেটা পরবর্তীতে যখন পার্সিয়ান কিংবা অগ্নিউপাসকেরা ক্ষমতায় আসলো তখন সবার ভেতরে প্রচলিত হলো।
মরুভুমিতে এমন কোনো সুবিধা ছিলো না, কিংবা এত কাঠখড় ছিলো না, সুতরাং সেখানে একমাত্র বিদ্যমান ব্যবস্থা মৃতদেহকে বালির নীচে দাফন করে দেওয়া, সেটাও স্থানীয় সংস্কৃতি নির্মাণ করেছে, সেটাও সেই সংস্কৃতিচর্চাকারী মানুষেরাই নির্ধারণ করেছে, তাদের নিজেদের নিরাপদ রাখবার অন্য কোনো বিকল্প ছিলো না। সেটা আমরা ধর্মসূত্রে ধর্মীয় আচার হিসেবে অনুসরণ করছি,
এখানে কাঠ এবং জলের অভাব ছিলো না, এমন কি কবরখোদারও তেমন সমস্যা নেই, সুতরাং এখানের আদিবাসিরা এই তিন প্রক্রিয়ায় শবদেহের সৎকার করে, আগুণে পুড়ানো এবং ভস্মাবশেষ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট ভাবনাগুলো সামাজিক সংস্কৃতিকে মাহত্ব্য দেওয়ার ধারণায় নির্মীত।
যদি এমন প্রমাণিত হয় মৃতভক্ষণ করলে ভালো কিছু হওয়া সম্ভব কিংবা অমরত্ব পাওয়া সম্ভব এবং যদি এটা বিজ্ঞান প্রমাণ না করেও গণমাধ্যম প্রচারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে, তুমি আমি সমস্ত সমাজ মৃতদের টেবিলে সাজিয়ে খেয়ে ফেলবো কাঁটা চামচ দিয়ে। তখন সেটাই সংস্কৃতি এবং সৎকাররীতি হবে।
এবং এখন যতটাই অবাস্তব এবং ঘৃণ্য মনে হোক না কেনো যদি সমাজের অধিকাংশই এটার চর্চা শুরু করে তবে আমরাও প্রিয়জনের মৃতশবের উপরে ছুড়ির আঁচর টানতে দ্বিধাবোধ করবো না। বরং তখন আমাদের দৈনিকের সাপ্লিমেন্টারিতে আমরা মৃত দেহ রান্না করবার হাজার উপায়ের সন্ধান পাবো, হয়তো মুচমুচে অন্ডকোষ ভাজা, প্রিয়জনের কিডনি কিভাবে পরিবেশন করবেন খাওয়ার টেবিলে- এসব নিয়ে বিশেষজ্ঞরা ব্যতিব্যস্ত সময় কাটাবে। হয়তো শরীরের কোন অংশ কিভাবে খেলে অতিথিরা আনন্দিত হবে এ নিয়ে টেলিভিশনে টক শো হবে। এটার বাণিজ্যিক দিকটা খতিয়ে দেখে, হয়তো প্রাণ কিংবা রাঁধুনি এসব রান্নার জন্য বিশেষ মসলার প্যাকেটের বন্দোবস্ত করবে।
মানুষের সংস্কৃতি খুব দ্রুতই পরিবর্তিত করা যায়- এবং যেকোনো জিনিষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব এর প্রসারকে নিয়ন্ত্রন করে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।