আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কুরবানী ঈদের সময়গুলো-২



আমাদের বাসায় কুরবানীর গরু-খাসী কেনা হত ঈদের এক দিন আগে। কেনার পর থেকে কুরবানী পর্যন্ত ছোট ভাই তাদের সাথে থাকত, সারাদিন। নিজের নাওয়া-খাওয়া ভুলে গিয়ে তাদের যত্ন-আত্তিতে সমস্ত দিন পার করে দিত। সকালে কোনমতে নাস্তা খেয়েই দৌড়ে চলে যেত ওগুলোর কাছে, দুপুরে আম্মা বহুকষ্টে তাকে ঘরে এনে ভাত দিতেন। অনেক সময় বিকালও হয়ে যেত।

এরপর অনেক রাত পর্যন্ত গরু-ছাগলের সাথে থেকে যখন ঘরে ফিরত, তখন তার চেহারা আর চেনা যেত না। সবার কাছে গল্প করত, গরুটা আর খাসীটা নাকি তার নাম ধরে ডাকে। ভাগ্নে একটু বুঝতে শেখার পর একবার কুরবানীর খাসী কেনা হলে দেখতে চাইল। আমি কোলে করে নিয়ে গেলাম খাসীর কাছে। প্রথমে খুব আগ্রহ দেখালেও যেই না খাসীর কাছাকাছি গেছি, সে আমার কোলে থেকেই নিজের পা দুটো আকাশে তুলে রাখল শক্ত করে, যাতে কোনভাবেই খাসীটা তাকে ছুঁয়ে দিতে না পারে।

আমি ভয় কাটানোর জন্য খাসীটাকে আদর করে দেখালাম। খাসীটাও আমার পা চেটে দিল, মাথা ঘষে দিল আমার জামার সাথে। ভাগ্নে ঐরকম করেই শক্ত হয়ে থাকল। এখন অবশ্য ভাগ্নের ভয় কেটে গেছে, নিজেই খাসীকে আদর করে করে খাওয়ায়। একবার একটা ভীষণ রাগী কালো গরু কেনা হয়েছিল, যে হাট থেকে দৌড়ে দৌড়ে বাসায় এসেছে আর মেইন গেট খোলার আগেই ছোট গেট টা দিয়ে নিজেই লাফ দিয়ে ঢুকে পড়েছে।

রাতে কিনে এনেছিল, তখন শুধু সিড়ি থেকে দেখেছিলাম, সকালে ভালো করে দেখার জন্য গেলাম। একটু ভয় ভয় লাগছিল রাতের কাহিনী শুনে। দেখলাম শান্ত হয়ে বসে জাবর কাটছে। আমি আস্তে আস্তে কাছে গিয়ে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে গলায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকলাম। গরুটা দেখলাম গলা বাড়িয়ে দিল আরামে।

যাক সমঝোতা করা গেল তাহলে। কিন্তু ঝুঁকে দাঁড়ানোর কারণে পিঠ ব্যথা হয়ে যাচ্ছিল। ভাবলাম একটু সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পা দিয়ে আদর করে দিই। কিন্তু সেই উদ্দেশ্যে পা বাড়ানোর সাথে সাথেই দেখি গরুটা তার শিং বাড়িয়ে দিচ্ছে আমার দিকে। তাড়াতাড়ি পা সরিয়ে নিতেই সে শিং সরিয়ে নিল।

আরেকবার চেষ্টা করতে গেলাম, এবারও শিং বাড়িয়ে দিল। নাহ, বুঝলাম, এভাবে হবে না, গরুটার মনে হয় লাথি খাওয়ার অভ্যাস আছে, পা বাড়ানো দেখলে রাগ উঠে যায়। কষ্ট করে ঝুঁকে আরও কিছুক্ষণ আদর করে দিলাম। একবার একটা খাসী এনে আম্মার বাগানে রাখা হয়েছিল। তার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে কাঁঠাল পাতাও রাখা হয়েছিল।

কিন্তু বেরসিক খাসী সবার অগোচরে আম্মার শখের বনসাইয়ের স্বাদ গ্রহণ করতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। পরে অবশ্য বনসাইটাকে উদ্ধার করা গেছে, তবে অনেক সময় লেগে গিয়েছিল তার পুরনো চেহারা ফিরে আসতে। এবার ভাগ্নেকে জিজ্ঞেস করলাম, কি দিচ্ছ কুরবানী। গম্ভীর হয়ে বলল, খাসী দেয়ারই ইচ্ছা আছে। বললাম, গুড, তা কি রঙের দিবা।

সে জানাল, ব্রাউন কালারের খাসী কিনব এবার। দেখা যাক তার ইচ্ছা পুরণ হয় কি না। সবাইকে ঈদের দাওয়াত রইল। ঈদ মুবারক।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.