শুনতে কি চাও তুমি সেই অদ্ভূত বেসুরো সুর? ফিরে পেতে চাও কি সেই আনচান করা দুপুর?
দেখতে কি চাও তুমি সেই খেলনাওয়ালাটাকে? তার খেলনার দোতারা সে বাজাচ্ছে কবে থেকে।
স্কুলের টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে কেনা, সেই অদ্ভূত ফাটা বাঁশ আর মাটির সুর টানা টানা।
দু’দিনের সম্পদ দু’টাকার বাজনার বিস্ময়।
তারপর কখন হঠাৎ সুখের মানে পালটে যায়।
তারপর টিফিনের পয়সা দিয়ে সিগারেট, কলেজগেটে সিনেমা, বান্ধবীর সাথে কাটলেট।
আসে দশটা পাঁচটা সেই এক রুটের বাসটা তারপর।
সবার মতই পরতে হয় যে কাগজের টোপর।
এখন মাসের শেষে মাঝে মধ্যে কান্না পায়, মিনিবাসে দাঁড়িয়ে অফিস যাবার সময়।
এখন বুঝেছি সে অদ্ভূত সুরের কি মানে,
ফিরে তো যাওয়া যায় না যে আর সেখানে।
যেতে হবে যে তোমাকে আমাকে চলে।
লুকোনো টেক্কা সংসারের এক্কা দোক্কা ফেলে।
প্রথমে যাবে ঘরদোর দোকানপাট তারপর হৃদয়
কিছুই হল না, বাজানো গেল না সময়।
ইদানিং সে সুরটা শুনতে যে খুব ইচ্ছে হয়,
কিন্তু সে খেলনাওয়ালা আর আসে না পাড়ায়।
হয়ত কোন অন্য অলিগলি ঘুরে, অন্য কোন কাউকে সে টানছে সে অদ্ভূত সুরে।
-অঞ্জনের একটা গান।
শীতের বিকালে একা ঘরে বসে থাকা একটুও সুখের না। মাঝগগন থেকে সূর্য আস্তে আস্তে পাটের পথে নামতে থাকবে আর তোমার মাথার মধ্যে মনের মধ্যে যেন একসাথে অনেকগুলো দরজা জানালার কপাট খুলবে আর বন্ধ হবে, বন্ধ হবে আর খুলবে। তারপর ইতোমধ্যে বেঁচে ফেলা তোমার সবগুলো দিন সেই কপাটগুলোর ওপাশে রাশি রাশি মুখ হয়ে উঁকি দিবে। আবার পালাবে। পুরানো সব সুর তোমার কানে বাজতে থাকবে।
মন আনচান করা দুপুরগুলোকে একটা একটা করে ঢেলে দিতে ইচ্ছা করবে ক্যালেন্ডারের অনাগত পাতায়। তুমি যদি একটু বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াও তো চাক্ষুষ দেখবে পথে পড়া হলদে রোদটা কেমন ফিকে হয়ে ঘিয়া রং বাধিয়ে বসছে আস্তে আস্তে। অস্থির ভাবটা লুকিয়ে আদুরে লক্ষ্মীপানা মুখ করে তুমি বলতে চাইবে, দুপুর শেষ তো মা সবাই নেমে গেছে, এবার খেলতে যাই না! ঠিক তখুনি আবার বুঝে ফেলবে কিসের খেলা কিসের কি। আবার হয়ত শালে জড়িয়ে গুটিসুটি হয়ে ক্যাম্পাসের ফুটপাথে বসতে চাইবে, ধোঁয়া উঠা চায়ে চুমুক দেয়ার জন্য। আশপাশ তাকালেই দেখবে উঁহু সে হবার নয়।
আরো যখন বেলা পড়বে, আলো কমতে থাকবে আরো, তখন একটা অদ্ভূত মিষ্টি গন্ধ পাবে। তুমি ঠিক নাম বলতে পারবে না কিসের গন্ধ এটা, ধোঁয়া ধোঁয়া একটা ঘ্রাণ। তোমার ভাল লাগবে। যখন টের পাবে ভাল লাগলেও ভাললাগাগুলোকে হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে পারছ না, তখন আবার খারাপও লাগবে। তারপর পাখপাখালির কিচমিচ শুরু হবে অনেক, কারণ ঘরে ফিরছে তারা।
তোমার ভাবতে ভাল লাগবে এই শীতের পড়ন্ত বেলায় কুয়াশা মাথায় করে ফিরতে পেলে বেশ হত। কিন্তু কোথা থেকে কোথায় ফিরবে ঠাহর করতে পারবে না। সন্ধ্যা নেমে যাবে। তুমি ঘরে আসতে চাইবে, আবার বেরিয়ে যেতে চাইবে, কিছু একটা করতে চাইবে আবার কিচ্ছুটা করতে ইচ্ছা হবে না। অনেক কিছুকে তুমি ধরতে ছুঁতে পেতে বুঝতে বা দেখতে চাইবে, যার রহস্য কেবল তুমিই জানো।
কিন্তু সেই সবগুলো কিছুই মুঠিতে ধরা পানির মত আঙ্গুলের ফাঁক গলে হারিয়ে যাবে। তোমার একটু দুঃখ দুঃখ লাগবে। শীতের অলস বিকাল বড়ই লক্ষ্মীছাড়া, কিন্তু তুমি অস্বীকারও করবে না যে চাপা একটা কষ্ট দেয় বলেই তুমি তাকে ভালবাস।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।