১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩:
# ১। শান্তির নোবেল ইউনুস সাহেবের কার্যক্রম দেখছি। জনাব ইউনুস, নিশ্চিত থাকুন, এ দেশ কিছুই ভুলবে না। খুনি-সন্ত্রাসীদের মাফ করে দিলেও আপনাকে করবে কি-না ভেবে দেখবেন। ক'দিন ধরে ময়মনসিংহে সমাবেশে আছি।
প্রতিটা মানুষ বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে গালি না দিয়ে কথা বলে না।
২। দেশের সব বড় শহরে দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভির ক্যাবল কেটে দিয়েছে ক্যাবল অপারেটররা। রেটিনা-ফোকাস ভাঙা হয়েছে। গতকাল চোখের সামনে ইসলামিক ব্যাংক ভাঙতে দেখলাম।
গোলাম আজমের গ্রামের বাড়িতেও নাকি হামলা হয়েছে শুনলাম। ভাঙাভাঙিতে থাকিনি কখনো। থাকবোও না। এসবের জন্য সমাবেশে যাই না। তবে কেন জানি এসব শুনে এবার আমার খারাপ লাগছে না।
৩। কবির সুমনের দেখানো পথে দেশের ব্যান্ডগুলো প্রজন্ম চত্বরের জাগরণ নিয়ে একটার পর একটা গান গাচ্ছে। 'শিরোনামহীন' দিগন্ত টিভিতে গান গাওয়ার জন্য ক্ষমা পর্যন্ত চেয়েছে। সেদিন পড়লাম নাট্য অভিনেত্রী মৌসুমী হামিদ তার বাসা থেকে এক ছুপা ছাগুকে অপমান করে বের করে দিয়েছে। সবই প্রাপ্তির খেরো খাতায় যোগ হচ্ছে।
৪। সাকিব-তামিম, আপনারা খুব ব্যস্ত জানি। সব ক্রিকেটার গেলেও আপনারা দু'জন, দেশটার সবচেয়ে বড় তারকা, শাহবাগে যাননি। কী কারণ তা আমার মত ক্ষুদ্র সমর্থক জানে না। তবে এটুকু জেনে রাখুন, মাথায় ওঠাতে যদিও কিছু সময় লাগে, কিন্তু গ্রাভিটির অনুকূলে নামাতে তার থেকে অনেক কম সময় লাগে।
৫। ফেসবুক-ব্লগে সময় দিতে পারছি না বেশি। তবু যেটুকু আসি তাতে দেখি কী সুন্দর সুন্দর সব স্ট্যাটাস! পেপার খুললেই রক্তে দোলা লাগানো সব ছবি। টিভি খুললেই চিত্তাকর্ষক সব খবর। সবই ভালো লাগছে শেষ কিছুদিন।
গত রাতে এক মুহূর্ত ঘুমাই নি। খুব ক্লান্ত। একটা পুরো ঘুম দিতে পারলেই শাহবাগে ছুটবো। শাহবাগের ডাক আর উপেক্ষা করা সম্ভব না!
৬। বিপিএল-প্রিমিয়ার লীগ-লা লিগা কিছুই দেখতে পারছি না।
মাঝে মাঝে ফোনে একটু স্কোর দেখি, এই যা। আমার শহর খুলনাকে হারানোর পরেও আশরাফুলকে ধন্যবাদ। এরকম একটা ইনিংস ওর খুব দরকার ছিলো। তাছাড়া পেপারে দেখলাম আশরাফুলকে শাহবাগে সংহতি প্রকাশ করতে।
৭।
অমিত খুব ঘরকুনো পোলা। কুনোব্যাঙ তবু পানি ঢাললে গর্ত থেকে বের হয়। অমিতের উপর মুতে দিলেও বাড়ি থেকে বের হতে চায়না। 'চোরাবালি' দেখবো দেখবো করে ওর বের হতে হতে দুই সপ্তাহ থেকে সিনেমাটা চলেও গেছিলো শহরতলি থেকে। 'টেলিভিশন' দেখার ধৈর্য ধরতে ধরতে না পেরে একাই দেখে নিয়েছি।
অথচ সেই অমিতকে বিক্ষোভ সমাবেশে যেতে বলার আগেই বেরিয়ে আসে।
৮। দু'দিন আগেও সবার একটাই দাবী ছিলো, 'যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি চাই'। ক'দিনের মাঝে দাবী বদলে গেছে। এখন দুই দাবী।
ফাঁসির সাথে জামাত-শিবির নিষিদ্ধও চাই।
১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩:
# ৫০ ঘন্টায় মাত্র ৫৮ মিনিট ঘুমানোর পরে যখন চোখের নিচে পুরু কালির স্তর জমে গেছে, তখন ঘন্টা তিনেকের একটা ঘুম দিলাম। ঘুম থেকে উঠার পর সবার মুখে শুনছি আজ নাকি বসন্ত শুরু হয়েছে। আমি তো জানি বসন্ত ৫ ফেব্রুয়ারি বিকাল থেকেই শুরু হয়ে গেছে। ময়মনসিংহে বসেই সেই ফাগুনের আগুন মেখেছি গত ক'টা দিন।
মুঠোফোনের ক্যামেরা তুলে গেছে পিচ ঢালা রাস্তায় বসন্তের গাঁদা ফুলের পাপড়ি দিয়ে লেখা '৭১ এর ছবি। আজ আরেক বসন্তের মিছিলে যোগ দিতে শাহবাগ যাবো। দেখা হবে নতুন বসন্তে। যে বসন্ত আনতে খরচ করেছি ৪২ টা বছর!
১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩:
# ময়মনসিংহের গন্ডি ভেঙে অবশেষে শাহবাগে। নবজাগরণের চত্বরে।
স্লোগানে-স্লোগানে নেশা ধরে গেছে। ঘোরে আছি। বেঘোরে আছি।
# গতকাল শাহবাগ আসার পর টিভিতে জামাত-শিবিরের তান্ডব দেখেই সম্ভবত মা বার বার ফোন দিচ্ছিলো। খোঁজ খবর নিচ্ছিলো স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশিই।
বিরক্তিতে হোক আর ইচ্ছে করেই হোক একবার বলে দিয়েছি, 'জাহানারা ইমাম মা এখন আমার দেখভাল করছেন। তুমি চিন্তাটা বাদ দাও এখন। উনি রুমিকে দেশের জন্য কোরবানি দিতে পেরেছেন আর তোমার ছেলে দু'টো স্লোগান দিতে এসেছে দেখে চিন্তায় মরছো! তোমার তো দুই ছেলে, একটা না হয় উচ্ছন্নে গেলোই। '
মা অবশ্য ফোনটা কেটে দিয়েছিলো কথাটা শুনেই। আর ফোন করেনি।
# একটা প্রেমিকা থাকা বেশি হলে ভাবের কিন্তু আপনার প্রেমিকা আছে এবং সে 'ছাগু' না, ব্যাপারটা সত্যিই গর্বের।
# শাহবাগে যখন অন্যান্য স্লোগান দিতে দিতে শব্দের ফ্রিকোয়েন্সি ক্রমান্বয়ে নিচের দিকে নামতে থাকে ঠিক তখনই সঞ্চালনকারী বলে ওঠেন 'জয় বাংলা'। আর সাথে সাথেই প্রত্যুত্তরে তারস্বরে সবাই বলে ওঠে 'জয় বাংলা'। এই স্লোগানটা ছাড়িয়ে যায় বাকি সব আওয়াজকে। '৭১ নেমে আসে '১৩ র ভোকাল কর্ডে।
নি:সন্দেহে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বকালের সবচেয়ে সুন্দর স্লোগানটির নাম 'জয় বাংলা'।
# প্রজন্ম চত্বরের মূল মঞ্চে বসে স্লোগান দিচ্ছিলাম। পাশে বসা একটা ছেলে আগ্রহী হয়ে কথা বলে। স্লোগানের মাঝের বক্তব্য গুলোর সময়ে টুকটাক কথা হয়। নাম আবীর।
মোহাম্মদপূরে বাসা। ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। নিতান্তই ছোট। সাইজেও ছোট। কিন্তু গলার জোর আমার থেকে ঢের বেশি।
দূপুর ১২ টার দিকে হঠাৎ স্লোগান বলা বন্ধ করে দিতে দেখি। জিজ্ঞাসা করি সমস্যা কিনা। বলে ওর মাইগ্রেনের সমস্যা। আমি উঠে যাই। ওকে একটা রিকশায় উঠায় দেই।
যাওয়ার সময় আমাকে ধন্যবাদ দিয়ে বলে, 'ভাই, পারিনা। প্রতিদিন আসি। এই রোদ্দুরটা বড় ঝামেলা করে। ঘন্টা দুই থাকার আগেই প্রচন্ড মাথা ব্যথা শুরু হয়। সবাই সকাল থেকে রাত একটানা স্লোগান দিতে পারে, আমি পারিনা।
দেশ আমার পরীক্ষা নিচ্ছে। গত ৮ দিনই ফেল মারছি। তবে আগে থেকে এখন বেশি সময় থাকতে পারি। দোয়া কইরেন, একদিন সারাদিন থাকমু। পাশ করমু'।
বলে হাসে। রিকশাটা ওকে নিয়ে চলে যায়। ফিরতে ফিরতে ভাবি এইসব আদু ভাইরা আছে যে দেশে, সে দেশে ভয় কী?
# সন্ধ্যা ৭ টায় যে মোমবাতিটা জ্বালিয়ে লক্ষ হাতের সাথে একসাথে উঁচু করে ধরে রেখেছিলাম সেটা পুরোপুরি নি:শ্বেষ করিনি। একটা অংশ রেখে দিয়েছি ভবিষ্যতের জন্য। যেদিন এই যুদ্ধটা জয় দিয়ে শেষ হবে সেদিন জ্বালাবো বলে।
# যে দিনটা ছিলো প্রেমিকার হাত ধরে ছুটে বেড়ানোর, সেদিন শাহবাগে ধরে ছিলাম মোমবাতি। যে দিনটা ছিলো প্রেমিকার সাথে কন্ঠ মিলিয়ে 'ভালোবাসি' বলার, সেদিন লাখো মানুষের সাথে স্লোগান মিলিয়ে হাঁক ছেড়েছি, 'রাজাকারের ফাঁসি চাই'। আমি একা না, হাজারও তরুণ; একসাথে। এই ত্যাগ বৃথা যেতে পারে না। ইতিহাস বলে দেশটা এত অকৃতজ্ঞ না! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।