আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটা স্মরনীয় ছিনতাই এর ঘটনা

সীমানার প্রাচীর টপকাতে হবে

ছিনতাই আবার স্মরনীয় হয় কিভাবে? ছিনতাই তো এমন একটা ব্যাপার যার শিকার হলে আমরা সেটা ভুলে যেতে চাই। আমি জীবনে একবারই ছিনতাইকারীদের মুখোমুখি হয়েছি। এবং সেটা বেশ আগ্রহের সাথেই মনে রেখেছি। তাহলে আর দেরি না করে মূল ঘটনায় চলে যাই। আমি ভার্সিটি এরিয়া থেকে নয়াপল্টনের দিকে আমার বাসায় যাওয়ার জন্য রিক্সা খুজছি।

রাত তখন মোটামুটি আটটা বাজে। এক দল রিক্সা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। এরাই কেউ ২০ টাকায় আমার গন্তব্যে যাবে না। এরা রীতিমত জোটবদ্ধ হয়ে আছে। ২৫ টাকার নিচে কেউ যাবে না।

এর মধ্যে একটা দলছুট রিক্সা পেলাম। আমার গন্তব্য শুনবার আগেই সে পারলে কোলে করে তার রিক্সায় উঠিয়ে দেয়। আমি গন্তব্য জানিয়ে বললাম ১৫ টাকা দিব। তাতে তার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। আমি রিক্সায় উঠে গেলাম।

রিক্সা প্রেসক্লাবের উলটা দিকে আসবার পর সেগুনবাগিচার দিকে ঢুকে গেল। আর হঠাৎ করেই তার গতি কমে গেল। এতক্ষন ব্যস্ত রাস্তায় সে ওভারটেক করে টরে তুমুল গতিতে চালাচ্ছিল। আর এখন সে খালি রাস্তায় টানছে ঢিমেতেতালা গতিতে। আমার মনে একটু খটকা হচ্ছিল।

তবে সেগুন বাগিচা আমার খুব পরিচিত এলাকা বলে তেমন ভয় লাগছিল না। এর মধ্যে রিক্সা আবার বিজয় নগরের মেইন রোড দিয়ে বের হয়ে গেল। আমার রিক্সা এখনো আস্তেই যাচ্ছে। ডান পাশ দিয়ে একটা রিক্সা আমাকে ওভারটেক করছে। রিক্সার প্যাসেঞ্জার এক লোক আমাকে ডাকছে, “রাকিব ভাই, কেমন আছেন? অনেকদিন পর আপনার সাথে দেখা”।

বলাই বাহুল্য যে আমি রাকিব ভাই টাই কেউ না। কিন্তু সে এত পরিচিত ভঙ্গিমায় বলল যে, মনে হল তার সাথে আমার আগের পরিচয় ছিল। এর মধ্যে সে আমার রিক্সাকে দাড়াতে বলল। আমি হঠাৎ খেয়াল করলাম, ঐ রিক্সাটা ধীরে ধীরে বাম দিকে চেপে এসে আমার রিক্সাকে আটকে দিয়েছে। ঘটনা খুব দ্রুত ঘটে যাচ্ছে।

আমি ততক্ষনে বিপদ টের পাচ্ছি। আমার রিক্সাওয়ালাকে বললাম, “তুমি থামছো কেন? একে আমি চিনি না। তুমি চালাতে থাকো”। কিন্তু কিসের কি? সে খুব সুন্দরভাবে রিক্সা এমন জায়গায় এসে থামালো যে জায়গাটা মেইন রোড হলেও বেশ অন্ধকার। ঠিক পাশে অন্ধকার এবং নীরব এক গলি।

কাজ সেরে ওরা খুব দ্রুতই প্রস্থান করতে পারবে। আমি তখন হিসাব করছি যে, আমার কাছে কি আছে? মোবাইলটাই বেশি দামী। টাকা তেমন নাই। কিন্তু শুনেছি টাকা কম থাকলে ওরা ক্ষেপে যায়। আমার রিক্সা থেমে গেল এবং ঐ রিক্সাটার প্যাসেঞ্জার পরিচিত ভঙ্গিতে আমার কাছে দৌড়ে আসল।

সে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “রাকিব ভাই, আমাকে চিনতে পারলেন না?” আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত হাত বাড়িয়ে তার সাথে হ্যান্ডশেক করলাম। আর বললাম, “আমি তো রাকিব না”। সে বলল, “ওহ, তাহলে তো ভুল হয়ে গেছে”। তার পাশে আরেক লোককে দেখিয়ে সে বলল, “দেখেন তো ভাই, এই ভাইজানকে চিনতে পারেন কিনা?” আমি ঐ ভাইজানের দিকে না তাকিয়ে আরেকটা চিন্তা করলাম। ওরা দুইজনই আমার বাম দিকে।

ডান পাশটা ফাকা। আমি হঠাৎ করেই ডান পাশ দিয়ে রাস্তায় নেমে গেলাম। এবং ওদের কোন কিছু ভাববার সুযোগ না দিয়ে মেইন রোড পার হতে শুরু করলাম। পিছন থেকে ঐ লোক আমাকে ডাকছে, “কোথায় যান ভাইজান? ভাইজান কি মাইন্ড করলেন নাকি? মাইন্ড কইরেন না”। আমি ততক্ষনে রাস্তার মাঝের আইল্যান্ডে চলে এসেছে।

ওখানে কাটাতারের বেড়া। আমি হাইজাম্প দিয়ে সেটা টপকে গেলাম আর ঐ লোককে বললাম, “না, ভাই, মাইন্ড করি নাই, আপনিও মাইন্ড কইরেন না ”। আমি খুব দ্রুত রাস্তার ওপাশে চলে আসলাম। ঐ পার থেকে আমার রিক্সাওয়ালা চিৎকার করছে, “ভাই, আমার ভাড়াটা দিয়া যান”। ফাজিল কোনখানকার! আবার ভাড়া চাই।

তোর গুষ্টি কিলাই আমি। পরে হিসাব করে দেখলাম, ছিনতাইকারীরা আমার তো কিছু নিতেই পারেনি, বরং রিক্সাভাড়া পনের টাকা আমার লাভ হল। এমন টাইপের ছিনতাই হলে তো লাভ বই কোন লোকসান নেই। তবে ঐ লোকদুটো অত অভিজ্ঞ ছিল বলে মনে হল না। দ্বিতীয় জন যদি ডান দিক দিয়ে আমাকে এসে ধরত, তাহলে এত মজা করে আপনাদেরকে এই কাহিনি বলবার সুযোগ পেতাম কিনা কে জানে?


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.