আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মৃত্যুদন্ড সংক্রান্ত কোরানের বিধান কি ধনী-গরীব বৈষম্যহীন?



সুরা আল-বাকারাহ : আয়াত ১৭৮ ''O ye who believe! the law of equality is prescribed to you in cases of murder; the free for the free, the slave for the slave, the woman for the woman. But if any remission is made by the brother of the slain, then grant any reasonable demand, and compensate him with handsome gratitude, this is a concession and a Mercy from your Lord. After this whoever exceeds the limits shall be in grave penalty.'' উপরে উল্লেখিত সুরা আর বাকারহ্- এর ১৭৮ তম আয়াতটি হচ্ছে হত্যাকান্ডের বিচার সংক্রান্ত কোরানীক আইনের ভিত্তি। এই আয়াত টি পাঠ করে আমার মত অনেকের মনে হয়তো প্রশ্ন জাগবে মৃত্যুদন্ড সংক্রান্ত কোরানের আইন কি ধনী-গরীব বৈষম্যহীন? আসুন ইসলামের উৎস ভুমি সৌদি আরবের কোরানের এই বিধান অনুসৃত মৃত্যৃদন্ডের প্রক্রিয়া কিছু দিক নিয়ে আলোকপাত করি। জুলাই ২০০৬ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে ২ কোটি ৭০ লক্ষ জনবসতির সৌদি আরবে অনাগরিক বিদেশী সংখ্যা ৫৫ লক্ষ । অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার ২৩%। ১৯৮৫ সাল হতে মে ২০০৮ পর্যন্ত ১৬৯৫ জন ব্যক্তির উপর বিভিন্ন কারণে (হত্যাকান্ড, অবৈধ সম্পর্ক, যাদুবিদ্যা বা তান্ত্রিক সাধনা, মদের ব্যবসা ,ইসলাম ধর্মে ও ওহাবী মতবাদ অবমাননা) মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।

এদের মাঝে ৮৩০ জন অনাগরিক বিদেশী, ৮০৯ জন সৌদি বংশ উদ্ভুত নাগরিক এবং বাকি ৫৬ জনের নাগরিকত্ব সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যায় নি। অর্থাৎ মৃত্যৃদন্ড কার্যকর হওয়া ব্যক্তিদের মাঝে ৪৯% বিদেশী নাগরিক। এই বিদেশি কারা? এরা মূলতঃ বিশ্বের বিভিন্ন দরিদ্র দেশ হতে সামান্য রুটি রোজগারের আশা ছুটে আসা শ্রমজীবি মানুষ। প্রশ্ন উঠতে পারে এই বিদেশী শ্রমিকরা কি উচ্চহারের পাশবিক ও হত্যাপ্রবণ কিংবা ধর্ম দ্রোহী? আমার মতে উত্তর ' না'। তবে কেন এই উচ্চ হার? এ মূলত কারণঃ সৌদি আরবে অনুসৃত কোরানী আইনের দুই টি দূর্বলতা বা বৈষম্যমূলক দিক।

এক, সৌদি আরবের শাস্তি প্রক্রিয়া প্রকাশ্য হলেও এর বিচার প্রক্রিয়া গোপনী ও সংক্ষিপ্ত। দূর বিদেশ বিভুই স্বজন বিবর্জিত অভিযুক্ত দরিদ্র বিদেশি শ্রমিকটি অজানা দেশের বিধি বিধান যেমন বুঝে উঠতে পারে না, তেমনি জিজ্ঞাসাবাদ কালে আত্নপক্ষ সমর্থনে পরে ভাষাগত সমস্যায় পরতে হয়। ভাষ্যগত সমস্যা টি দ্বিপাক্ষিক । এটা যেমন তদন্তকারী কর্মকর্তার অক্ষমতা তেমনি অভিযুক্তে শিক্ষাগত দূর্বলতা। ২০০৭ সালে এমনি এক মৃত্যুদন্ড সাজা প্রাপ্ত্বি বিদেশি নাগনিকের মা বাদশার নিকট সন্তানের প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে পত্র লেখেন।

“My son… being a poor, uneducated person and having no knowledge of Arabic, was unaware of the proceedings and was having no means or knowledge to defend himself and convince the court of his innocence…[He] is the sole bread winner of a large family consisting of myself who is sick and aged, his wife and his four-year-old daughter…[we] are solely dependent on him for our livelihood.” দুই, বৈষম্যমূলক ক্ষমা প্রক্রিয়া। ক্ষমাটা সাধারণ ক্ষমা নয়। এর নাম 'দিয়া' বা Blood Money Pardon. যা সম্পর্কে সুরা আল বাকারাহ্ এর উপরের আয়াতে স্পষ্ট ভাবে বলা হযেছে। আসুন 'দিয়া ভয়াবহ বৈষম্য টা দেখি। কয় টি নমুনা দেখি।

পশ্চিম সৌদি আরবের 'নাজরান' অঞ্চলের মৃত্যুদন্ড সাজা প্রাপ্ত আহমদ নামক এক সৌদি নাগরিক এর ক্ষমার জন্য মৃতের পরিবার ১.৫০ কোটি রিয়াল ( ৪০ লক্ষ মার্কিন ডলার) 'দিয়া' দাবী করে। পরে বর্ষীয়ান গোত্রপতিদের এবং 'নাজরান' এ যুবরাজ Mish’al bin Abdul Aziz bin Saud এর মধ্যস্থতায় ২৫ লক্ষ সৌদি রিয়াল ( ৬.৬ লক্ষ মার্কিন ডলার) এ শেষ পর্যন্ত সমঝোতা হয়। অভিযুক্ত আহমদের সামর্থ্যবান পরিবার উক্ত 'দিয়া' পরিশোধ করে এবং আহমদ ক্ষমা পেযে যায়। কিন্তু, ৩০ বছর বয়সী অপর সৌদি নাগরিক Abbas Bakhit Faraj আহমদের মত সৌভাগ্যবান নয়। ২০০২ সালে সংগঠিত হত্যাকান্ডের জন্য আব্বাস দোষী সাবস্ত হয়।

মৃতের পরিবার ৪০ লক্ষ সৌদি রিয়ালের বিনিময়ে ক্ষমা প্রদানে সম্মত হয়। কিন্ত, আব্বাসের দরিদ্র বৃদ্ধ পিতা 'দিয়া' অর্থ প্রদানে অক্ষম এবং প্রভাবশালি দাতা সংগ্রহেও অযৌগ্য। Al-Riyadh পত্রিকায় আব্বাসের জন্য 'দিয়া' অর্থ সাহায্য চেযে বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়। মার্চ ২০০৭ পর্যন্ত মাত্র ৭০০০ সৌদি রিয়াল সংগৃহীত হয়। এখন সহজেই অনুমেয়, কেন মৃত্যুদন্ড সৌদি আরবে কার্যকর হওয়া বিদেশি নাগরিকের সংখ্যা এত বেশি কেন? তাঁদের এক দিকে যেমন নেই সোদিদের তৃপ্ত করার মত 'দিয়া' প্রদানের বিপুল অর্থ পরিশোধ করার সামর্থ্য ,অপর দিকে নেই আরবদের মত প্রভাবশালি গোত্রপতি কিংবা যুবরাজদের দৌর গোড়ায় পৌছানোর দুঃসাহস ।

২০০০ সাল হতে ২০০৮ সাল পর্যন্ত 'দিয়া'র বিনিয়মে ক্ষমাপ্রাপ্ত ১০৪ টি কেইস অনুসন্ধানে দেখা যায় ক্ষমা প্রাপ্তদের ৯২ জন সৌদি নাগরিক, ১০ জন বিদেশী শ্রমিক এবং বাকি ২ জনের পরিচয় পাওয়া যায় নি । সৌভাগ্যবান দশজন বিদেশি নাগরিকের মাঝে ৭ জনের ক্ষেত্র হত্যাকান্ডের স্বীকারও বিদেশী নাগরিক এবং এ সকল ক্ষেত্র 'দিয়া' পরিমান অনেক কম। এই ১০ জনের মাঝে ৬ জনই ফিলিপাইনের নাগরিক, যাদের ক্ষমা প্রক্রিয়ায় সে দেশের দুতাবাস শক্তিশালি ভুমিকা রাখে এবং খ্রিস্টান চার্চ যুগিয়েছে 'দিয়া' অর্থ। যেমন,মৃত্যুদন্ড সাজ্জাপ্রাপ্ত দুই ফিলিপিন নারী হত্যাকান্ডে স্বীকার অপর দুই ফিলিপিন নারীর পরিবার কে ২০ লক্ষ পেশো (৪৪ হাজার মার্কিন ডলার) ক্ষতিপুন প্রদানের মাধ্যমে ক্ষমা পায়। উপরের গ্রাফে দেখানো হয়েছে মৃত্যৃদন্ডাদেশ কার্যকর হওয়া বিদেশী নাগরিকরা কত জন কোন দেশের নাগরিক।

লক্ষণীয় এরা সবাই এশিয়া ও আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলো থেকে ভগ্যের অন্বেষায় আসা দরিদ্র মানুষ। তালিকায় ইউরোপ কিংবা উত্তর আমেরিকার একটি দেশের একজন নাগরিকও নাই। উপসংহারঃ ১৪০০ বছর আগে একটি বিশেষ প্রেক্ষাপটে সেই সমযে উক্ত অঞ্চলের বিদ্যমান সমাজ কাঠামোর সাথে সমন্বয় করে এবং বিদ্যমান সমাচের ইতিবাচক দৃষ্টি ভঙ্গি কে গ্রহণ করে , কোরানের বিধানসমূহ এসেছিল। সেটাকে সার্বজননী সর্বকালের বলা কখনই সমোচীন নয়। মনে রাখা দরকার, বদ্ধ জলাশয়েই মশা জন্ম নেয়।

সূত্র ঃ Affront to Justice: Death Penalty in Saudi Arabia

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.