কালকে সন্ধ্যায় বেশ পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিলাম, হঠাৎ চিৎকার- চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙ্গে গেল। একটু পর অবশ্য বুঝলাম ব্যাপারটা কী। আমার রুমটা আমাদের বিল্ডিং এর পেছন দিকে। ওপাশে একটা চিপা গলি আর তারপর আবার বিল্ডিং এর সারি... ঢাকায় টিপিক্যালি যেমনটা দেখা যায়। সেই গলিটা দিয়ে সন্ধ্যার দিকে গাড়ি-ঘোড়া খুব একটা যাওয়া-আসা করে না।
তো সেই চিপা গলিতে আমাদের এলাকার বেশ কয়েকজন পিচ্চি(!) মিলে কিছু একটা খেলছিল, এবং সেই কারণেই এই চিৎকার- চেঁচামেচি। তখন আমার হঠাৎ মনে পড়ল যে আমিও তো এককালে এরকম করে খেলেছি! এখন সেটার সাথে স্কুল বাস এর কী সম্পর্ক সেটাই হল ভাববার বিষয়।
আমি যখন ক্লাস থ্রি তে পড়ি, তখন থেকে আমার স্কুল বাস এ যাতায়াত শুরু হয়। কারণ- আমার স্কুলের সময়ের সাথে মা-বাবার টাইমিং এর গণ্ডগোল। এই স্কুল বাস যাত্রা অব্যাহত ছিল ক্লাস সেভেন কি এইট এর প্রথম দিক পর্যন্ত।
এবং সেই স্কুল বাস নামক বাহনটায় যদ্দিন যাওয়া-আসা করেছিলাম, সেটা ছিল আমার স্কুল জীবনের বেস্ট পার্ট।
আমাদের সেই বাহনের চালক ছিলেন বেঞ্জামিন আংকেল...the sweetest guy ever...। তবে কোনো এক অজ্ঞাত কারণে আমরা তাকে বেগুনিঞ্জিন আংকেল ডাকতাম। সেই রহস্যের মীমাংসা এখনো হয়নি।
ক্লাস থ্রি থেকে ফাইভ পর্যন্ত আমাদের ছুটি হত সিক্স থেকে টেন এর ক্লাস শেষ হওয়ার পঁয়তাল্লিশ মিনিট আগে (correction,পঁয়তাল্লিশ মিনিট না, আধঘণ্টা আগে হবে।
তবে সবাই আসতে আসতে পঁয়তাল্লিশ মিনিটই লেগে যেত)। ফলে স্কুল বাস ততক্ষণ অপেক্ষা করত। এবং সেই পঁয়তাল্লিশ মিনিট আমরা কয়েকজন ফ্রেন্ড মিলে পুরো স্কুল কম্পাউন্ড চষে ফেলতাম। আমাদের স্কুলে বিশাল মাঠ ছিল না, কিন্তু যতটুকু ছিল, ততটুকুকে আমরা রীতিমত হালুয়া বানিয়ে ফেলেছিলাম। খেলার কোনো অভাব কখনো ছিল না, আমরা কিছু না কিছু বের করেই নিতাম।
সেইরকম দৌড়াদৌড়ি, লাফালাফি কতদিন করিনাই...
এটা তো গেল স্কুল কম্পাউন্ড এর কথা। স্কুল বাসের ভেতরও মজা কম হত না। আমাদের বাস এ যারা যেত, সবাই ছিল খুবই...যাকে বলে fun loving। ফলে সময়টা খুব মজার কাটত। স্কুল থেকে বাসা কাছেই ছিল, এমন না যে খুব বেশি সময় পেতাম।
তবে যতটুকু সময় পেতাম, ততটুকুর সদ্ব্যবহার করতে কখনোই কার্পণ্য করতাম না। গল্প-গুজব, হই-হুল্লোড় লেগেই থাকত। নানাবিধ বিষয় নিয়ে জ্ঞানগর্ভ (!) আলোচনা ছিল খুবই কমন। হেন কোন টপিক নাই যেটা নিয়ে আমরা মাথা ঘামাই নাই। পেপার, রহস্য পত্রিকা কিংবা তিন গোয়েন্দায় পাওয়া তাবৎ বিষয়ে আমাদের নাক গলানো চাই।
আমার এখনও মনে আছে, আমাদের এক্সাইটমেন্ট যে বিষয়টা নিয়ে সবচেয়ে বেশি ছিল, সেটা হল FIFA World Cup। ওই সময়টায় আমাদের (আমাদের মানে, অপেক্ষাকৃত বাচ্চা যারা) কথা বলার favorite topic ছিল ওইটা। ভাবখানা এমন ছিল যেন না জানি কত বুঝি!
কারও জন্মদিন হোক, কিংবা আর যে উপলক্ষ্যই পাই না কেন, সেইরকম(!) কিছু একটা করতেই হবে এরকম একটা অলিখিত নিয়ম ছিল। ওহ্, একবার কী উপলক্ষ্যে যেন আমরা তিনজন (আমার খুব ক্লোস দুইজন ফ্রেন্ডও ছিল আমার সহযাত্রী, হে হে!) সবাইকে চকলেট বিলি করলাম...শুধু চকলেটের প্যাকেটের মধ্যে চকলেটের পরিবর্তে মাটি ছিল, এই আর কি...। এরকম আরও কত ঘটনা আছে...
মাঝে মাঝে খুব মিস করি ওই সময়টা।
এসব কথা সবসময় মনে পড়ে না। রুটিনমাফিক দিন কেটে যায়, এসব ঘটনা মনে আসার সুযোগই পায় না। তারপরও, ঘটনাচক্রে মনে পড়ে আর কি... কাল যেমন পড়ল। আবারও হয়ত হঠাৎ কোনো একদিন আবার সন্ধ্যায় ঘুম ভেঙ্গে যাবে, আর মনে হবে, আরে! আমিও তো একসময়...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।