লেকশোর দিয়ে গার্ডিনার ধরতে আমার সবসময়ই ভালো লাগে। এটা আমার কাজে যাবার একটা নিয়মিত রাস্তা। তবে ঐ ভালো লাগাটা কাজে যাতায়াতের সুবিধার্থে নয়, ওখানে এবং ঠিক ঐ মূহুর্তে আমার ভেতরে একটা অনুভূতি কাজ করে। যখন আমার গাড়ি গার্ডিনারে উঠতে থাকে, তখন টরেন্টো শহরটাকে অন্যভাবে দেখতে শুরু করি। মনে হয় যেন শহরটা জেগে উঠছে ধীরে ধীরে।
সি.এন.- এর চূড়ার সাথে সাথে অন্য উঁচু বিল্ডিং গুলোও জেগে উঠে। পুরোপুরি উঠে আসার পর টরেন্টোকে দেখা যায় অন্যরূপে। ডানদিকে ছোট-বড় উচ্চতার বিল্ডিং গুলো দাঁড়িয়ে আছে, আর বামে আরও কিছু বিল্ডিং-এর মাঝে বা ওপর দিয়ে চোখ চলে যায় দূরে- অন্টারিও লেকে। ড্রাইভ করার সময় এক-দু সেকেন্ডের বেশী তাকানো যায় না বলে আমি রোজই একটু একটু করে দেখি। গত এক ব্ছর ধরে দেখছি, কিন্তু তাতে মোটেই দেখা শেষ হয় না।
বিরক্ততো লাগেই না। গার্ডিনারে উঠেই আমার বড় করে দম নিতে ইচ্ছে করে। মাঝে মাঝে নেইও। বুকটাও ভরে যায়। হয়তো এই ভেবে যে, এরকম একটা বড় শহরে আমিও একটা ছোট্ট বাসিন্দা! এটা আমার জন্মভূমি বা মাতৃভূমি না হলেও, বাসভূমি তো বটে!
মাঝে মাঝেই তখন ভাবি, এ ভাবেই দুচোখ ভরে দেখতাম আমার দেশটাকে।
দূরপাল্লার বাসে-ট্রেনে-স্টিমারে করে ঢাকার বাইরে কত জায়গায় গিয়েছি। তখন শুধু প্রাণভরে দেখা। সাথে থাকতো আরেকটি চোখ। ঐ চোখেও অনেক স্মৃতি ধরে রেখেছি। সেই কান্তজির মন্দির থেকে বান্দরবন বা জাফলং থেকে কুয়াকাটা।
কিন্তু জানি, ঐ চোখ আর নিজের চোখের দেখার অনেক তফাৎ। কারণ, ছবি শুধুই ছবি! এখন আর আমার মাতৃভূমিকে দেখা হয় না। ইচ্ছে নেই, তা বললে মিথ্যে বলা হবে। আসলে, সময় নেই, সুযোগ নেই, সামর্থ্যও নেই। একদিন আবার সব হবে, একদিন আবার নয়ন ভরে দেখবো আমার জন্মভুমিকে - এই আশায় আশায় দিন কেটে যাবে আমার।
কিন্তু প্রশ্ন জাগে মনে, যে ছবি শেষবারে দেখে এসেছি, যে ছবি মনের গহীনে সাজিয়ে রেখেছি, আমার মাতৃভূমিকে কি সেইরকম দেখতে পাবো, যখন আমার আশা পূরণ হবে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।