আমার হাতদুটো পা হয়ে গেলে আর পা হাত; তাহলে কি তুমি করমদর্নের সজ্ঞাটা পালটে দিবে
আজ হুট করেই দেখলাম আয়না আর শীত বিষয়ক বেশকয়েকটা কবিতাই লিখে ফেলেছি। বস্তুত এই দুই বিষয়ের উপর আমার একটু দূর্বলতা রয়েছে। আয়নায় আমি আমাকে দেখি, আমার পাশে থাকা নারী কে দেখি, আমার ভেতরের আমি কে দেখি, আবার আমার বক্ষ চিড়ে বের হয়ে যাওয়া সবুজ মানুষটাকে দেখি, যেই শহরে থাকি তাকে দেখি। শীত সেতো আমাকে আলসে করে দিল, আবার কখনো বানিয়ে দিল লক্ষিন্দর। তাই ভাবলাম এই দুই বিষয়ক কবিতাগুলোকে একসাথে করে রেখে দেই, দেখা যাক আয়নার ভেতর শীত কেমন জেঁকে বসে।
ব্যস্ত নাগরিক আকাশে রঙচঙ্গাঘুড়ি
-----------------------------------------
শীত নেমে আসছে
চোখ থেকে ধুয়ে গেলে শেষ অহঙ্কার, চাইলেই
নিঃশ্বাসের কাছে আসতে পারো। ঘাসেরডগায়
শিশিরবিন্দু; রোদ বাড়লেই হারিয়ে যাবে যেমন
ছিড়ে যায় প্রিয় মুক্তোরমালা। মন চাইলেই
ডেকে নিতে পারো বিজন চিলেকোঠায়, স্তনের
উদ্যত গর্বে আয়নার মত ভেঙ্গে দিতে পারো আস্ত
একটা অলস দুপুর।
উরুর উষ্ণতায় নিঃশ্বাস কাঁপানো রোদে পেশাগত
কাগজপাতি দিয়ে বড়জোড় একটা ঘুড়ি বানাতে পারি,
চাইলেই শাড়ীর আঁচল থেকে দিতে পারো সুতো
এবং
অফিস কামাই দিয়ে এমন শীতে
ব্যস্ত নাগরিক আকাশে
উড়তে পারে অসংখ্য রঙচঙ্গাঘুড়ি। ।
শীতের আয়না
----------------------------------------------
শীতটা প্রায়ই চলে এলো
বাতাসের বিশেষণ বদলে গেলে আমরা সবকটা জানলার কপাট বন্ধ করে দেব।
শীতলনদী ধীরলয়ে ভিজিয়ে দিলে কাচেরপার অতিথিপাখীরা ঠোঁটে বয়ে আনবে
কুয়াশাভেজা ধোঁয়াটে ভোর। অ-নে-ক দহনের পর বাহুর ভাঁজ খুলে উদোম
বক্ষে দাঁড়িয়ে থাকবে পাহাড়
কোথাও
------কেউ থাকবেনা
---------------------কোথাও
------------------------------- না
চাষাবাদী জমি ফলফলাদি শস্যাদি নিয়ে সব নেমে আসবে সমতলে। বাতাস,
তুষার আর জোছনার মেশামেশিতে নেমে আসবে অশরীরী স্তব্ধতা।
গেলোবার এক অতিথি পাখীর চোখে স্থির সময় চেয়ে শরীর ছাড়িয়ে গিয়েছিলাম
শুন্যে।
আমি শুন্যকে আলিঙ্গন করতে চেয়েছিলাম
আমি স্তব্ধতাকে ভেঙ্গে
আরেকটা নৈঃশব্দকে ছুঁয়েছিলাম
দর্পনে দ্রবিত মুখ
--------------------------
সুইচটায় ছোঁয়া পরতেই রাতটা বরং লজ্জাবতী
নিঃশব্দে গুজে যায় অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড হর্ষেরা
খুব সন্তর্পনে এসে বসে ফেরারি কেউ
এতোটা বিশ্বাসী কেন তার অবয়ব?
চাইলেইতো রাতের শরীরে সাদাকালিতে রটাতে পারি আদিম কাব্য
বনবাসিসীতার চোখের তারায় ক্লান্ত ঘাসফড়িং
কারো অভিশাপে হয়তো কবিরা রাবন হতে পারেনা
আয়না নগর থেকে লিখা শেষ চিরকুট
--------------------------------------------
শিশুর মত ক্লান্তি কাঁধে জেঁকে বসেছে, নিজেকে সবুজ ভাবতে পারিনা। আয়না
নগরের বৃদ্ধদের স্থির চোখে সহস্র অলৌকিক সেতু গড়ে বুঝতে পারছি প্রীয়
পালকগুলো খসে-খসে ধীরতাললয়ে সময় গভীর অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে
বিনীতভাবে। দৃশ্যমান চেনাবলয় থেকে টুকরো-টুকরো হয়ে যাচ্ছে অযুত পাখা,
পাঁজরের চিড় দিয়ে বেরুচ্ছে মৃত বাতাস। অশ্রুর ঝরে যাওয়ার জন্য কোথাও
কোন মসৃন গ্রীবা নাই।
কোথাও উড়ে হারিয়ে যেতে হবে বলেই শেষবার উড়ছি।
আলোর অনেকদূর
ভ্রমনের পর যদি কোন পালক তোমার কাছে এসে পড়ে; তাতে অবশ্যই
লিখা থাকবে_______________
কিভাবে সুন্দরের শত্রু হয়ে গিয়েছিলাম, বিছানায় শুধু মানুষের ছায়া পড়েছিল।
কিভাবে ঠোঁটেঠোঁট রেখে শেষবারের মত ঘুমানোর মিনতি করেছিলাম
এবং
হৃদয়ের চারদিকে নির্জনতার দেয়ালে কোথাও কোন শব্দ চুমু খায়নি।
আয়না
----------------------------
গত কয়েকদিন ধরেই রোদের মুখ দেখছিনা । ঘড়িরকাঁটায় গেঁথে আছে কি
অদ্ভুত এক ধর্মগ্রন্থ! এবং তা মেনেই স্কুলে বাজছে ঘন্টা, সকালের ট্রেনে
দাপ্তরিক ঘ্রান, ফ্যাক্টরীতে দুপুরের সাইরেন, দিবারাত্রী রুগীসেবা, দোকান-
পানশালা সবকিছুই ঘুরছে। ঘুরছে বাজার-হেঁসেলের হাঁড়ি আমাদের মুখ
ও মুখোশ।
কামনার পর্দা সরিয়ে ঘুরে-ঘুরে আসছে অর্থবহ দাম্পত্য রাত।
অথচ আমার চুপসে থাকা ফুলওপাতার বুক চিঁড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে উদোম
উরুর সবুজ ছেলে। তর্জনী ঘুরিয়ে বাতাসের খেরোখাতায় লিখে রাখি তার শ্লোক
"বুইরার শইল্ল্যে চিনা জোঁক চ্যানচ্যানাইয়া রোইদ উঠ"
ত্বরণ পুজারীর ডায়েরী ছেঁড়াপাতা
-----------------------------------------
আমি জানি কতটা হিমাঙ্কের নীচে শাহরিক হর্ষরা মৌনতার সুতোরগিঁটে
তাপজননের অঙ্ক কষে । দরজার বরফহাতলের ব্যাঙ্কারে চুপসে থাকা
তড়িৎ আততায়ীর আঘাতে জ্বলে উঠা আঙ্গুল, বিছানায় সংবেদনশীল
অবয়বে তাপজনিত দাঁগ, শুষ্ক মেদহীন আসবাবের বোবাকথন, জানালার আয়নায়
শীতলনদীর বাঁকানো শরীর,সন্ধ্যার বাতিতে ভেন্টিল্যাটরের ফাঁকেফাঁকে কুয়াশার
ছলচাতুরি অল্প অল্প হিমেল আঁচ, হাতদুটোকে নতুন করে আরেকবার ঘষে নেয়া,
বরফাবৃত আশ্চর্য শীতল পাহারের গায়ে নিস্তব্ধতার ঘ্রান আর সামনে পরে থাকা
অনন্ত একটা রাত;
নাহ! আর ভাল্লাগেনা।
বরফগলানদীর জলে প্রনামরত সবুজঘাসের ধ্যান ভেঙ্গে বেরিয়ে আসুক
গতিশীল কোলাব্যাঙ, পাহাড়ের লালপিপড়ে খোরগোশ।
আমি চিঠি বেধে
দেব ঘাসফড়িঙ্গের পা'এ খোপায় ঘাসফুল গুজে এবার গল্প শুনিয়ে যেও।
দেহজঘামে অঙ্কুরিত চিরহরিৎ বনে ময়ুরের পায়ে ঘুঙ্গুর পেখমে ঝলকানোরোদ
আছড়ে পরে চোখে, এতদিনের লেপ্টে থাকা শরীরের পুলোভার খুলে সমকামী হতে
বিন্দুমাত্র জড়তা নেই আমার।
একটা বেগ দরকার - ত্বরিত একটা বেগ।
এবং অবশ্যই তা অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো সত্য। দ্যাখো,বোকা পর্যটকের করতলে
এখনো তুষার__________
শীতলকন্যা এসেছিল আমারে কেউ ডাকেনাই
---------------------------------------------------
আজ ছুটির দিন ছিল
সচরাচর আমি ছুটিতে খুব বেলা করে উঠি কখনো সূর্যকে দেখি
পশ্চিমের লিফট ধরে বাড়ী হাঁটে দপ্তর ছেড়ে
আজ কিন্তু বেলা করিনাই
জানালায় দেখি শীতের কান্না ঝুলে আছে হিমাঙ্কের নীচে
শীতল চোখের মেয়েটি তাহলে এসেছিল ডাকেনাই কেউ
ডাকেনাই
পাতাহীন কুকড়ে থাকা গাছের নীচে শ্বেতশুভ্র ভালোবাসা রেখে গেছে
একটা স্পিরিচুয়াল একাকীত্বে, সেখানে দেখি নির্বিকার কয়েকটি
কবিতার লাইন ও একটা বরফের টিপ
বিকেল ভাসিয়ে কালোসাদালাল রাত ঘরে ফিরিয়ে আনে
ডিপফ্রিজারে তাকে সাজানো দেখি আরো কিছু বরফের টিপ
নিউরনের মরিচিকা সাফ করে ভাবি এতোগুলো দিন ডাকেনাই কেউ
ডাকেনাই
গন্ধবণিক
----------------------
হরিনীর উরুতে শীতের অপগম চিহ্ন
আহা! সূর্য্যটা ক্ষেপলো বুঝি
মৌনব্রতী পাহাড় নীলাকাশের গ্রীবায় ফোটায় দুপুরের ফুল
আমিতো তোমার শিয়রের গোপন গন্ধবণিক
অভিষঙ্গে খুঁজি মৃগনাভী
মধুকূপের গিঁট খুলে দাও এমন তৃণভূমে বাঘের ভয় নাই
কবিতা লিখতে যাবনা
রমণে কবি তোমার আপন গন্ধবণিক-------
শীতের কিছু খসড়া কবিতা
-----------------------------------
(১)
ড্রেসিংটেবিলে লোশন আফটার শেভের খালি বোতলগুলো
একেকটা যৌবনহারা বারবনিতা
যে এসেছিল সে গন্ধ নিয়ে গেছে আমিও নিয়েছি মুখ শরীর মেখে
এখন কেউ আসেনা দাঁড়ায়না ওখানে আমিওনা
ওদেরামার মাঝে নদীতে বরফাচ্ছিদ এক প্রলেপ
আমি সেই শর না ভেঙ্গেই রোজ শীতের পাখি হই
এখন ভাবাযাক ডাঙ্গায় বসে আছে কে এবং কেউ কি আসবে?
বাতি নিভিয়ে দিলে জড়রা প্রান পাবে আমাদের লোশন মাখামাখিতে
(২)
হিমাঙ্কের নিচে শহর ডুবে গেলে আমি সরাইখানায় যাই
তখনো আমার চোখে তুষার আর সাপেদের চোখে গনগনে আগুন
বিয়ার ভিজাঠোট সেখানে ইচ্ছাকৃত এক লখিন্দর
বাস্তব প্রতিবিম্বে তুমি থাকো সাথে
----------------------------------------
রাতের আঁধার ঢেলে দিয়েছে পারদ
চলমান স্বচ্ছ জানালায়
তোমার গ্রীবা চিড়ে ছুটে যায় মোটরযান;
দূরের আলোগুলো উঁকি দিলে
তুমি তখন ঈষৎ ঝাপসা।
তোমার বুক ভেদ করে উঠে আসে পাহাড়গুলো--
আবার মিলিয়ে যায় পশ্চাতে
তোমার চোখে মুখে চলমান পাইন গাছ দেখি আমি।
পাশের সিটে নিরেট তুমি এভাবেই সাথে থাকো
চলমান জানালায়-----
কোলাহল ফিরে এলে পারদ মিলিয়ে যায়
হারিয়ে যায় তোমার মুখ -মুখের ভীড়ে;
কবিতার সীমানা ছাড়িয়ে আমি তখন
আলোকবিজ্ঞানের পাতা উল্টাই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।