আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মানবাধিকারের রক্ষক সেজেছে মানবাধিকার লংঘনকারী পশ্চিমারা

Right is right, even if everyone is against it; and wrong is wrong, even if everyone is for it

বর্তমান সময়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে মানবাধিকার একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে এবং বিশ্বের প্রতিটি দেশ মানবাধিকার রক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এছাড়া একটি দেশকে কোন কারণে অভিযুক্ত করতে চাইলে তার বিরুদ্ধে খুব সহজেই যে অভিযোগটি আনা হয় তা হচ্ছে মানবাধিকার লংঘন। বিশ্বের তিন চতুর্থাংশ দেশ মানবাধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কনভেনশনে স্বাক্ষর করেছে এবং বাকি এক চতুর্থাংশ দেশ ঐ কনভেনশনে স্বাক্ষর না করলেও এর ধারাগুলো মেনে চলার চেষ্টা করছে। এখনো মানবাধিকার সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞার ব্যাপারে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহিত না হলেও সার্বিকভাবে মানবাধিকার রক্ষার ব্যাপারে সকল দেশ কমবেশী চেষ্টা করছে। এদের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, কানাডা ও ফ্রান্স নিজেদেরকে মানবাধিকারের রক্ষক বলে দাবি করে এবং বিভিন্নভাবে এ দাবির যথার্থতা প্রমাণের চেষ্টা করতেও ভুল করে না।

এসব দেশ তাদের নিয়ন্ত্রিত প্রভাবশালী গণমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বব্যাপী এমন একটা ধারণা তৈরি করে দিয়েছে যে, এসব পশ্চিমা দেশ মানবাধিকারের লালনভূমি। পশ্চিমা দেশগুলো এমন সময় নিজেদের মানবাধিকারের ধ্বজাধারী বলে দাবি করছে যখন ঐসব দেশে কিংবা ঐসব দেশের নাগরিক ও সামরিক বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা জঘন্যতম পন্থায় মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। কিন্তু গণমাধ্যম নিজেদের হাতে থাকায় তারা এসব মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা অতি সাধারণ বিষয় হিসেবে তুলে ধরছে এবং অন্য কোন দেশের অতি সাধারণ ঘটনাকে মানবাধিকার লংঘন বলে হৈ চৈ ফেলে দিচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলো বিশ্বের স্বাধীনচেতা দেশগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য মানবাধিকারকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। এদিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পাশাপাশি এসব পশ্চিমা দেশের অনেক সংগঠনও তাদের দেশগুলোতে মানবাধিকার লংঘনের অসংখ্য চিত্র তুলে ধরেছে।

এখানে আমরা অতি সংক্ষেপে মানবাধিকারের ধ্বজাধারী দেশগুলোতে মানবাধিকার লংঘনের চিত্র তুলে ধরবো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। কিন্তু ঐ প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের ভয়াবহ মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর দৃষ্টিপাত করা হয় না। অথচ যুক্তরাষ্ট্রে খুন, ধর্ষণসহ এ ধরনের অপরাধ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে। কিন্তু মার্কিন কর্মকর্তাদের চোখে এসব ঘটনা যেন কোন অপরাধই নয়।

অতি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার এক দম্পতি কর্তৃক ১১ বছরের এক বালিকাকে অপহরণ এবং তাকে ১৮ বছর যাবৎ যৌন-দাসী হিসেবে ব্যবহার করার খবর প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৯১ সালে নিজ বাড়ির সামনে থেকে অপহৃত হয়েছিলো জায়সী লি ডুগার্ড। জায়সীর বয়স বর্তমানে ২৯ বছর এবং গত ১৮ বছর ধরে তাকে সান ফ্রান্সসিস্কো থেকে ৫০ মাইল দূরে অবস্থিত গ্যারিডোর বাড়ির পেছনে একটি তাবুতে আটক রাখা হয়েছিলো। ঐ তাবুতে জয়সীর ওপর উপর্যপুরি শারিরীক নির্যাতন চালানো হয়েছে এবং অপহরণকারী উগ্রবাদী খ্রীস্টান গ্যারিডোর মাধ্যমে জায়সী ১৫ ও ১১ বছরের দুই কন্যা সন্তানের মা হয়েছে। গ্যারিডো স্বীকার করেছে যে, সে ১৯৯১ সালে জায়সীকে অপহরণ করেছিলো।

ধর্ষণের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিয়েই গ্যারিডো ক্ষান্ত হয় নি, ঐ দুটি অবুঝ সন্তানকে সে কোনদিনই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায় নি এবং লেখাপড়ার সুযোগ থেকেও তাদের বঞ্চিত রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এই লোমহর্ষক ঘটনাটি এমনভাবে বর্ণনা করেছে, যেন কিছুই ঘটে নি। জীবনের গোপন রহস্যগুলো বুঝে ওঠার আগেই ১১ বছরের একটি মেয়ের ওপর এতবড় পাশবিক অত্যাচার চাপিয়ে দেয়া হলেও সেখানে মানবাধিকার লংঘনের লেশমাত্র খুঁজে পায়নি পশ্চিমা গণমাধ্যম বা সরকারগুলো। এর আগে অস্ট্রেলিয়ার এক ইহুদীবাদী তার নিজের মেয়েকে বছরের পর বছর নিজ বাড়ির গোপন কক্ষে আটকে রেখে ধর্ষণ করেছে বলে খবর বেরিয়েছিলো। নিজের মেয়ের গর্ভে তার অনেকগুলো সন্তানও রয়েছে।

পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর সে তার অপরাধগুলো অকপটে স্বীকার করেছে। ঐ ঘটনাটি দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা গণমাধ্যমে শীর্ষ খবর হিসেবে ছাপা হয়েছে। কিন্তু ঐ খবরের প্রকাশভঙ্গিও এমন ছিলো যে আর দশটা অপরাধের মতো এটিও একটি অতি সাধারণ অপরাধ এবং তেমন কোন মানবাধিকারই লঙ্ঘিত হয় নি। এছাড়া ইরাক, আফগানিস্তান ও গুয়ান্টানামো বন্দী শিবিরসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মার্কিন সেনাদের লোমহর্ষক ও পাশবিক নির্যাতনের স্মৃতি বিশ্ববাসী কখনোই ভুলতে পারবে না। ঐসব নির্যাতন যে এখন বন্ধ হয়ে গেছে তা নয়, বরং এ ধরনের নির্যাতনের খবর যাতে আর প্রকাশ হতে না পারে মার্কিন কর্তৃপক্ষ সে ব্যবস্থা নিয়েছে।

মানবাধিকার লংঘনের দিক দিয়ে সাম্রাজ্যবাদী বৃটেনও কোন অংশে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে পিছিয়ে নেই। বৃটেনের পারিবারিক সহিংসতার ওপর গবেষণাকারী একজন সমাজবিজ্ঞানী বলেছেন, দেশটির অসংখ্য নারী তাদের স্বামীদের হাতে নির্যাতিত হলেও সে খবর কেউ রাখছে না। অনেক অভিবাসী নারী তাদের ওপর নির্যাতনের খবর ঘুনাক্ষরেও প্রকাশ করে না, কারণ তাতে করে তাদেরকে বৃটেন থেকে বহিস্কার করা হতে পারে। বৃটেনে যে শুধু অভিবাসী ও অবৃটিশ নারীরা ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয় তা নয়। এক জরীপে দেখা গেছে, প্রতি ৪ বৃটিশ নারীর একজন তার পুরুষ সঙ্গীর দ্বারা শারিরীক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

বৃটেনে প্রতি সপ্তাহে ২ জন নারী খুন হচ্ছে এবং শতকরা ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে খুনের সময় হতভাগ্য নারীর শিশুসন্তান খুনের ঘটনা প্রত্যক্ষ করছে। ইংল্যান্ডের লাইচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত এক জরীপে দেখা গেছে, প্রতি ৫ বৃটিশ নারীর একজন জীবনের কোন না কোন সময়ে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। এদিকে বৃটেনে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় পাঁচ'শ অভিবাসী শিশুকে বন্দি শিবিরে আটক রাখা হয়েছে বলে দেশটির ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট বিভাগ জানিয়েছে। এসব শিশু দারিদ্র্যপীড়িত ও যুদ্ধ বিধ্বস্ত জিম্বাবুয়ে, সুদান, শ্রীলংকা ও কঙ্গোর মতো দেশগুলো থেকে তার অভিভাবকদের সাথে বৃটেনে প্রবেশ করেছিলো। বছরের প্রথম তিন মাসে ২২৫ টি শিশুকে মুক্তি দেয়া হলেও এর মধ্যে মাত্র এক'শ শিশু বৃটেন থেকে চলে গেছে।

অধিকাংশ শিশুকেই চার সপ্তারও বেশি সময় ধরে আটক রাখা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে আটকে রাখার কারণে কোমলমতি শিশুরা নানা মানসিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে গার্ডিয়ান পত্রিকা খবর দিয়েছে। মানবাধিকারের ধ্বজাধারী আরেক দেশের নাম কানাডা। দেশটি রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়ার নামে এবং অন্যান্য অজুহাতে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার অভিবাসী গ্রহণ করে। লোভনীয় প্রচার চালিয়ে কানাডাকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মানুষের কাছে ভূপৃষ্ঠের স্বর্গ হিসেবে তুলে ধরা হয়।

কিন্তু কানাডায় যাওয়ার পর তারা চরম বর্ণবাদী আচরণের শিকার হয় অত্যন্ত অমানবিকভাবে তাদের অধিকার লংঘিত হয়। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত বছর 'কানাডায় মানবাধিকার লংঘন' শীর্ষক একটি বই প্রকাশ করেছে। বইটিতে কানাডায় মানবাধিকার লংঘনের যেসব অভিযোগ তুলে ধরেছে সেসবের মধ্যে রয়েছে আশ্রয় গ্রহণকারী ও অভিবাসী জনগোষ্ঠির অধিকার লংঘন, অভিবাসীদের ওপর পুলিশী হয়রনি ও নির্যাতন, নারী ও শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতন, স্থানীয় অধিবাসীদেরকে সব ধরনের অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা ইত্যাদি। ফ্রান্সে মানবাধিকার লংঘনের কথা বললে অনেকেই হয়তো বিশ্বাস করতে চাইবেন না। কারণ, দেশটিকে মানবাধিকার রক্ষার আদর্শ বলে মনে করা হয় এবং মানবাধিকার রক্ষার ব্যাপারে প্রথম ঘোষণাটি ঐ দেশে প্রকাশিত হয়েছিলো।

তবে বিশ্ব মানবাধিকার ঘোষণায় বাক স্বাধীনতার কথা সুস্পষ্টভাবে বলা হলেও ফরাসী আইনে হোলোকাস্টের সমালোচনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিশিষ্ট ফরাসী ইতিহাসবিদ ও গবেষক রজার গারুদি বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল প্রমাণ উপস্থাপন করে অত্যন্ত বৈজ্ঞানিক উপায়ে হোলোকাস্টের ঘটনাকে অতিরঞ্জিত বলে ব্যাখ্যা করেছেন। সত্য ঘটনাটি তুলে ধরার অপরাধে তাকে জেল খাটতে হয়েছে। এছাড়া ফ্রান্সে ধর্মীয় সংখ্যালঘু মুসলমানদের অধিকার লংঘিত হচ্ছে পদে পদে। ফ্রান্সের মোট জনসংখ্যার শতকরা ১০ ভাগ অর্থাৎ ৬০ লাখ অধিবাসী মুসলমান।

অথচ সেকুলারী শাসনব্যবস্থার অজুহাত তুলে মুসলিম মেয়েদের মাথায় স্কার্ফ পরতে দেয়া হচ্ছে না। ফলে হাজার হাজার মুসলিম মেয়ে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর ফ্রান্সের মুসলমানরা ফরাসী নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা চরমভাবে লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়েছেন। #

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.