Right is right, even if everyone is against it; and wrong is wrong, even if everyone is for it
সিআইএ-র বন্দি নির্যাতনের ব্যাপারে নয়া প্রতিবেদনে আরও কিছু লোমহর্ষক ঘটনা ফাঁস হয়েছে। সিআইএ সন্দেহের বশে আটককৃত ব্যক্তিদের ওপর পাশবিক কায়দায় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়েছে,যা ঐ প্রতিবেদনে স্বীকার করা হয়েছে। সিআইএ-র কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বন্দি নির্যাতনের নয়া তথ্য প্রকাশিত হবার একই সময়ে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তৎপর চিকিৎসকদের একটি সংস্থা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সিআইএ-র মনোবিজ্ঞানীরাও বন্দিদের ওপর অমানুসিক নির্যাতনে অংশ নিয়েছেন। এছাড়া তারা বন্দিদের ওপর ভয়াবহ ও অবৈধ কিছু পরীক্ষা চালিয়েছে বলে সংগঠনটি দাবি করেছে। মানবাধিকারের সমর্থক চিকিৎসকদের ঐ সংগঠনটি তাদের প্রতিবেদনে ২০০৪ সালের একটি রিপোর্টকে উদ্ধৃত করেছে, যা আদালতের চাপের মুখে সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়েছে।
২০০৪ সালে সিআইএ-র বন্দি নির্যাতন সম্পর্কিত প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হলেও এত দিন তা প্রকাশ করা হয় নি। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন মামলা করার পর কর্তৃপক্ষ তা প্রকাশ করতে বাধ্য হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের এটর্নি জেনারেল এরিক হোল্ডার সম্প্রতি জন দোরহামকে সিআইএ-র বন্দি নির্যাতন সম্পর্কিত মামলা তদন্তের জন্য বিশেষ প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। বারাক ওবামা ক্ষমতায় আসার ৭ মাস পর এ সংক্রান্ত বিষয় তদন্তের জন্য বিশেষ প্রসিকিউটর নিয়োগ দেয়া হয়। বারাক ওবামা ক্ষমতায় আসার পরপরই বন্দি নির্যাতনের হোতাদের বিচারের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন বলে মানবাধিকার সংগঠনগুলো আশা করেছিলেন।
কারণ বারাক ওবামা নির্বাচনী প্রচারের সময় বন্দি নির্যাতনের ব্যাপারে জনগণকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এছাড়া ওবামা হোয়াইট হাউসে প্রবেশের পর দিনই কলংকজনক গুয়ান্তানামো বন্দি শিবিরকে ২০১০ সালের জানুয়ারির মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দেয়ায় এ ব্যাপারে প্রত্যাশা আরও জোরালো হয়েছিল। পাশাপাশি বুশ প্রসাশনের মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইন লংঘনকারীদের বিচার হবে বলেও আশা করা হচ্ছিল। কিন্তু কিছু দিন না যেতেই এই আশা ফিকে হতে থাকে। বারাক ওবামা ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যে সিআইএ-র কার্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে সংস্থাটির পদস্থ কর্মকর্তাদের এ নিশ্চয়তা দেন যে, বন্দি নির্যাতনের দায়ে সিআইএ-র কোন কর্মকর্তার বিচার করা হবে না।
ওবামা সিআইএ-র কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, এখন প্রতিশোধ গ্রহণের সময় নয়। অতীত কাজের পেছনে শক্তি ও সময় ব্যয় করে কোন লাভ হবে না।
বন্দি নির্যাতনের বিচারের ব্যাপারে বারাক ওবামার স্ববিরোধী বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে, তিনি এ ব্যাপারে আন্তরিক নন। বারাক ওবামা একদিকে বন্দি নির্যাতনের নিন্দা জানাচ্ছেন,অন্যদিকে এ অপরাধের সাথে জড়িতদের বিচার না করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। এর মাধ্যমে তিনি দুটি লক্ষ্য বাস্তবায়নের চেষ্টা করছেন।
এর একটি হলো, বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি উদ্ধার করা এবং অন্যটি হলো, বন্দি নির্যাতনের কলংকজনক এ অধ্যায়টিকে পুরোপুরি ধামাচাপা দেয়া। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অবশ্য এ ধরনের কলংকজনক ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগেও যুক্তরাষ্ট্র ; ল্যাটিন আমেরিকা, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে মানবাধিকার লংঘন করেছে এবং সেখানকার স্বৈরাচারী সরকারগুলোর প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন দিয়েছে। ফিলিস্তিনে দখলদার ইসরাইলের মানবতা বিরোধী সকল তৎপরতায় সর্বাত্মক সমর্থন যুগাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বরে টুইন টাওয়ারে হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাস দমন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অজুহাতে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ওপর অকথ্য নির্যাতনের পথ বেছে নেয়।
এ ধরনের নির্যাতনের পেছনে জর্জ ডাব্লিউ বুশের পাশাপাশি সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির ভূমিকাই ছিল সবচেয়ে বেশি। ডিক চেনি ১১ ই সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর যে কোন পন্থায় হামলার কারণ উদঘাটনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। সিআইএ-র কোন কোন কর্মকর্তাও প্রকাশ্যেই মানবাধিকারের তোয়াক্কা না করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু সন্ত্রাস দমনের ব্যাপারে বুশের একপেশে নীতি শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়। মার্কিন নিয়ন্ত্রিত আবু গারিব, বাগরাম ও গুয়ান্তানামো কারাগারে বন্দিদের ওপর অকথ্য ও নৃশংস নির্যাতনের ঘটনাও ফাঁস হয়ে যায়।
ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে এবং বহির্বিশ্বে মার্কিন সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও ঘৃণা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। দেশে বিদেশে মার্কিন সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ ও ঘৃণা এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌছে যে, জর্জ ডাব্লিউ বুশ বিশ্বের সবচেয়ে ঘৃণিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। সে সময় বারাক ওবামা জনগণের প্রত্যাশা উপলব্ধি করতে সক্ষম হন এবং গুয়ান্তানামো কারাগার বন্ধ ও বন্দি নির্যাতনের হোতাদের বিচারের প্রতিশ্রুতি দেন। বারাক ওবামার এই প্রতিশ্রুতি মার্কিন জনগণের পাশাপাশি গোটা বিশ্ববাসীর কাছে প্রশংসিত হয়। গুরুত্বপূর্ণ এসব প্রতিশ্রুতিই বারাক ওবামার বিজয় নিশ্চিত করে।
বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর ৭ মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু সময় যতই গড়াচ্ছে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে ব্যবধান ততটাই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বারাক ওবামা পরিবর্তনের যে শ্লোগান দিয়েছিলেন তাতে মনে করা হয়েছিল, তিনি বুশের মানবতা বিরোধী নীতি থেকে নিজেকে পুরোপুরি দূরে সরিয়ে নেবেন। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন চোখে পড়ছে না। গণমাধ্যম ও বিচার বিভাগের ব্যাপক চাপের মুখে অনেক বিলম্বে বন্দি নির্যাতনের বিষয়টিকে আবারও সামনে আনা হয়েছে এবং অপরাধীদের বিচারের কথা বলা হচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা গুয়ান্তানামো কারাগার বন্ধের ঘোষণা দেয়ার পর বন্দি নির্যাতন ইস্যুটিকে পুরোপুরি ধামাচাপা দেয়ার জন্য সার্বিক চেষ্টা চালান। আসলে বন্দি নির্যাতনের কলংকজনক অধ্যায়টিকে পুরোপুরি উন্মোচিত হলে তা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ওয়াটার গেইট কেলেংকারির চেয়েও ভয়াবহ হতে পারে এবং তা ওবামা প্রশাসনকে কঠিন সংকটের মুখে ঠেলে দিতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পালাবদলের পর সাধারণত নয়া প্রেসিডেন্ট তার পূর্বসুরীর অন্যায়-অপকর্ম ঢাকা দেয়ার চেষ্টা করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৮ তম প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ড তার পূর্বসুরী রিচার্ড নিক্সনকে ওয়াটার গেইট কেলেংকারির জন্য ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। কাজেই বন্দি নির্যাতনের ঘটনা তদন্তের জন্য একজন প্রসিকিউটর নিয়োগ দেয়া হলেও এখনই এটা বলা যাবে না যে, অপরাধীরা শাস্তি পাবেই।
যুক্তরাষ্ট্রে এখন বন্দি নির্যাতনকারীদের বিচারের বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক মহল ও গণমাধ্যমে যে আলোচনা হচ্ছে, তা আসলে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের প্রচেষ্টার ফসল। কিন্তু বারাক ওবামা প্রশাসন এ ব্যাপারে আন্তরিক না হওয়ায় বন্দি নির্যাতনের বিষয়টির তদন্ত খুব বেশি দূর এগোবে না বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এছাড়া বন্দি নির্যাতনের ব্যাপারে সাক্ষ্য-প্রমাণ সিআইএ-র কর্মকর্তারা আগেই ধ্বংস করে ফেলেছেন। বন্দি নির্যাতনকারীদের শাস্তি হবে কি না সে ব্যাপারে মার্কিন গণমাধ্যমে সন্দেহ প্রকাশ করা হচ্ছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।