তোকে দেখিনা, কতো হাজার বছর হয়ে গেলো...
কলেজের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্র। খুব শান্ত, ভদ্র। পড়াশোনায় খুব পরিশ্রমী ও অধ্যবসায়ী। সততা ও নম্রতা ওর চরিত্রের ভুষণ। সবাই ওকে ভালোবাসে।
সারাক্ষণ ওর চিকন অধর দুটিতে মন পাগলকরা হাসি লেগেই থাকে। ক্লাসমেটরা তাই মজা করে বলে- ওর চেহারাটাই ও রকম!
ওর ব্যবহার ও স্বভাবসূলভ মিষ্টি হাসিটার জন্য শিক্ষকরাও ওকে খুব স্নেহ করে। ওর সুন্দর ও সাফল্যমন্ডিত ভবিষ্যত কামনা করে। বরাবরই ক্লাসের মেধা তালিকায় ও শীর্ষে থাকে। মাঝে মধ্যে এমন রেজাল্ট করে যে, ক্লাসমেটরা বলেই ফেলে-
: আরিফ, আমরা বোধহয় তোর আর পেরে উঠবো নারে!
ও তখন খুব লজ্জা পায়।
লজ্জায় ওর চোখ মুখ লাল হয়ে যায়। ও লাজুক একটা হাসি দিয়ে বলে-
: কেন পারবিনা? তোরা আমার মতো চেষ্টা কর, দেখবি- তোদের রেজাল্টও আমার মতো হবে।
ক্লাসমেটরা তখন চোখ বড় বড় করে বলে-
: তো..র মতো রেজাল্ট! থাক, বাবা! আমরা আমাদের রেজাল্টেই খুশি!
=============================================গল্পটি ২০শে জুলাই ২০০৬ইংরেজি তারিখে দৈনিক নয়া দিগন্তের প্রিয়জনে প্রকাশিত হয়েছে... মুহাম্মাদ সাইফ নামে। =============================================
একজন আধুনিক তরুণের সবগুলো গুণই ওর মধ্যে আছে। কিন্তু ও অন্য সবার মতো আধুনিকতার নোংরা স্রোতো গা ভাসাবার পাত্র নয়।
ও খুব অবাক হয় যখন দেখে- আধুনিকতার নামে সারা বিশ্বে চলছে নোংরামি। অপসংস্কৃতির বিষাক্ত ছুড়ির আঘাতে ক্ষত বিক্ষত করা হচ্ছে দেশীয় সংস্কৃতিকে। কথিত 'হাই সোসাইটি''তে অবহেলিত হচ্ছে বিদ্বান ও শিক্ষিত জনের পরামর্শ। নেতৃত্বের ছড়ি উঠেছে সব অযোগ্য লোকের হাতে। ক্ষমতার ঝাঁঝ দেখিয়ে, আধুনিকতার দোহাই দিয়ে হাই সোসাইটির হাই পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে যোগ্য ব্যক্তিদের।
আরিফ ভাবে। অনেক ভাবে। আর অবাক হয়। খুব অবাক হয়। ওর বুকের ভিতর জমে থাকা কষ্টেরা ‘শরীর’ লাভ করে।
বুকের খাঁচা ভেঙ্গে বেরিয়ে আসতে চায়। ওর বুকটা চিনচিনিয়ে ব্যথা করে। কষ্টেরা বের হতে পারেনা; বুকের ভিতর নতজানু হয়ে পড়ে থাকে। কিছুক্ষণ পর হামাগুড়ি দিতে দিতে ফিরে যায়- বুকের কোণের কষ্টের ঘরটাতে। সেখানে গিয়ে গুমড়ে কাঁদে।
কষ্টদের কান্নায় ওর হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়।
দুই
একদিন আরিখ রুমে বসে একাগ্রচিত্তে পড়ছিলো। হঠাৎ ওর কানে ভেসে আসে প্রচন্ড শোরগোলে শব্দ। ও চমকে ওঠে। বারান্দায় এসে দাঁড়ায়।
কলেজের মাঠে ঝগড়া হচ্ছে। ঝগড়া না, যুদ্ধ। হিংসার যুদ্ধ। ক্ষমতার যুদ্ধ। রাজনীতির যুদ্ধ।
ওই যুদ্ধবাজদের সঙ্গে ওর কোনো সম্পর্ক নেই।
ও যোদ্ধাদের দিকে তাকায়। আশ্চর্য! ওখানে তো কোনো যোদ্ধা নেই! সবাই এ কলেজেরই ছাত্র! তাহলে ওরা যুদ্ধ করছে কেন? হাজারটা প্রশ্ন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ও উত্তর খোজে, কিন্তু পায়না। ও ভাবে।
অনেক ভাবে। ভাবতে ভাবতে ভাবনার সাগরে তলিয়ে যায়। সেখানে প্রশ্নের অক্টোপাসরা ওকে ঘিরে ধরে।
তরুণরা জাতির প্রাণশক্তি। তরুণরা জাগলে পৃথিবী সরব হয়ে ওঠে।
তরুণরা জাতির ভবিষ্যত। কিন্তু এরা যদি হিংসার অনলে পুড়ে পুড়ে বড় হয় তাহলে এরা ভবিষ্যতে করবেটা কী? আগামী প্রজন্মকেও হিংসার আগুণে পুড়তে শিখাবে? নাকি এখনই শোধরে নিবে নিজেদের?
ও বারান্দায় দাড়িঁয়ে যুদ্ধ দেখে আর ভাবে। কিন্তু কোনো কুল-কিনারা পায়না…
হঠাৎ একটা বুলেট এসে লাগে তার বুকে। মুহুর্তেই একটা প্রাণের স্পন্দন বন্ধ হয়ে যায়। যুদ্ধও থেমেও যায়।
যুদ্ধে লাভ ক্ষতি কী হলো সে হিসাব কেউ রাখেনা।
তিন
সবাই ঘিরে আছে আরিফের লাশ। ওসি সাহেব প্রশ্ন ছুড়ে দেন, কী অপরাধ করেছিলো ছেলেটি?
সবাই নিশ্চুপ।
শুধু বৃদ্ধ মালি এসে ওসি সাহেবের সামনে দাঁড়ায়। বলেন, আসলে ওটাই প্রাপ্তি ছিলো।
ওসি সাহেব দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। কী আসে যায় আরিফের মতো মেধাবীদের মৃত্যুতে? গ্রামে ওর বাবা মা কাঁদবে। সাংবাদিকরা ছবি ছাপাবে। গরম গরম খবরটা মুখে মুখে ছড়াবে…
তারপর… তারপর সেই আগের মতো- নতুন আরিফদের মৃত্যু-পর্ব। কেউ কি কখনো মনে রাখে?
হয়তো রাখে, হয়তো রাখেনা…
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।