আজ আমার অনুভূতি টা কেমন ছিল, জানিস?
শুরুতেই সে আমাকে প্রশ্ন করল " কেন ফোন করেন?"
প্রশ্নটার মধ্যে অভিমান এত প্রচছন্ন, অথচ ঠিক ই ঠিকড়ে পড়ল!
মনে হল, আর জনমের জলপ্রপাতের পাড়ে গড়ে তোলা সেই বসতবাড়িতে কথা হচ্ছে ।
কথা'র background এ আকুল জলপ্রপাতের নিয়ন্তর বয়ে যাবার চির ব্যাকুল শব্দ।
আমি অবাক হলাম, " কেন ফোন করেন না? " এটা তার প্রশ্ন হল না।
বলল " আপনি আমার কে হন যে অমন প্রশ্ন করতে পারি?
মানুষ মানুষকে মনে করে?
কেন করে? "
এই যে তোকে বলেছিলাম
জ্বালা বেধেছে মনে, অভিমানে-
কইব না কথা আর খোঁচা বন্ধুদের সনে
নারে, জ্বালা জুড়িয়েছে, এমন করে যার জন্যে কেউ থাকে
তার কি জ্বালা থাকতে পারে? তার কি জ্বালা থাকা হয়? বললাম, আসলে ভাবি
এই করব, করব, প্রতিটা রবিবার, আগে ভাবি করব, পরে ভাবি কেন করা হয়ে ওঠেনি-
কিন্তু আসলে কেন করিনি জানেন? করিনি এই জন্যে যে, করবো, করবো বলে জমিয়ে রাখি।
বলল, তবে ঠিক আছে, জমিয়ে রাখেন, ওটা জমাই থাক, হয়ত কেউ কেউ জমা থাকাটাই সমীচীন।
জানতাম সে বুঝবে, সে যে বুঝবে, সেটা যে আমি বুঝি, সেটাও যে সে বুঝে
যেমনটা সে বুঝে, যখন জমে যায় খুব অনেকটা , থতমত খাই,
কেবল তখনই না এমনি এমনি কথা বলি, জ্বালা জুড়াই
সেতো জানে, ক্ষত কতটা গভীর, কি প্রলেপ লাগবে
আচল ভিজিয়ে তাই সে মুছে দেয় মুখ-
চিরুনি চালিয়ে ঠিক করে চুল-
ভুলিয়ে দিতে চায় ভুল।
সে বলল
"আপনার কথা হয়ত ভুলে যাই
তবে মাঝে মাঝে ভাবতে বসি অনামিকাকে
কেমন যেন গল্প কথার এক নায়িকা'র মত মনে হ্য় তাকে"
করল তার সেই চিরায়ত প্রশ্ন, জানতে চাইল " কেমন আছে সেই অনামিকা?"
কি বলব তাকে? বললাম বাঙালী নারী জীবনের ইতিবৃত্ত, তাদের সম্পর্ক প্রথা। বললাম
" হে বাঙালী নারী
মমতাময়ী মা তুমি,
তুমি প্রেমময়ী বধূ-
অভিমানী অশ্রুসজল বোন তুমি,
বন্ধু হতে শিখনি, শুধু। "
সে বলল , "তবে আমরা কি বন্ধু নই? "
বলল " তবে হা, আমার কোন বালক বন্ধু নেই।
আসলে আমাদের যে তা থাকতে নেই, কারন ওটা বন্ধুত্ব থাকে না।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ছেলেটা, আবার কোন কোন ক্ষেত্রে মেয়েটা ভেঙে পড়ে-
বন্ধুর চেয়ে বেশি কিছু হতে গিয়ে বন্ধুত্বটাকে খুইয়ে ফেলে তারা চিরটা কাল। "
এই শুনতেই শেষ পর্যন্ত বুঝে উঠলাম হঠাৎ বন্ধুবিলাস পেয়ে বসার পেছনের কারনটা।
বলেছিলো, "প্রিথিবীর যে প্রান্তেই থাকি, আপনার সাথে যোগাযোগ থাকবে। "
যোগাযোগ নেই, কারন যোগাযোগ থাকতে নেই, থাকতে নেই-
কিন্তু তাকে নিয়ে তার এতো ভাবনা কেনো?
সুনয়না এলো, সুহাসিনী গেল, সুবচনা খাবি খেল, বাঈজী নাচল ক্ষ্যামটা নাচ-
অথচ? এতো সবের পরেও সে পরে রইল সেই অনামিকাকে নিয়ে?
তবে কি সে শুধু অনামিকা নামটার জন্যেই?
নামহীনতাই যে তার নাম, কারন এই?
হুট করে কি মনে হচ্ছে জানিস? মনে হচ্ছে, এই মেয়েটা অবসরে যখন একান্ত একা থাকে,
তখন সে মনে মনে অনামিকা হয়ে ওঠে, অবহেলায় আমার দিকে পাশ ফিরে শোয় না।
সে ঘুমন্ত আমার মাথাটাকে বুকে টেনে নিয়ে আলতো করে হাত বুলোতে থাকে।
চোখে হয়ত তার তখন জল আসে, তবে সে জল মহাসমুদ্রের না-
সে জল থাকে সমুদ্র থেকে অনেক দুরে, পাহাড়ের গায়ে,
ক্ষয়ে ক্ষয়ে সে ঝরণার মাতম তোলে।
আনমনা অবুঝ বালক,
বুঝে উঠতে পারেনি সময়ের দাবি?
আর বুঝবে কি করে, এও কি হ্য়! হতে আছে?
তবুও যে হয়ে গেছে? যা হবার না, তাই যখন হয়ে গেছে -
রোল তুলে অভিমানী বালক কাঁদেনি, মরুঝর নীরবেই বয়ে গেছে।
ক্ষয়ে আসা চোখে, সুদূর দূরের পানে নিরন্তর দৃষ্টি অভিক্ষেপ সয়ে গেছে।
তবে তার কেনো সয়ে যায়নি? সে কেনো আজো ভোলেনি? কেন সেই নিয়ে বসে আছে?
অনেক হলো বলাবলি- তোকে আর কতটা বলব? আর কতটাই বলা যায়রে?
শব্দ গুলো হ্য়ত লেখা যায়, ভাষার প্রান্জলতা হ্য়ত দেখা যায়, কিন্তু যে ছোট ছোট দী্র্ঘশ্বাস, দিন গোনা'র আভাস
সতত প্রতীক্ষার সুদীর্ঘ বেলা শেষে অধৈর্যের গা বেয়ে একটু কন্ঠ শোনা, একটু সেই হাসি,
যাপিত জীবনের নিরামিষ নিয়মিততার ফাক গলে একটু সুরেলা বাঁশি
একটু প্রকাশের অন্বেষা, একটু অবগুন্ঠনের প্রচ্ছন্নতা
চেনা সমুদ্রে অপরিচিত ঢেউ এর দোলা, চেনা ফেনা
জোস্নাপ্লাবিত বালুচরে বৃষ্টিহীন শুষ্ক ঝর-
কাঙ্খিত ব্যর্থতা।
কি দিয়ে শেষ করি? বলে উঠেছিল, আবার কখনও এক সমতলে এলে-
আবার কখনও এক দেশে, এক সমতলে হলে কি? মুখোমুখি?
মরুভুমি আর সমুদ্রের `জ্বোস্না-জ্বোনাকী আড্ডা`?
কেমন করে হ্য়? সে কি হতে আছে?
তবে যে এতটা আপন?
আসলেই কি কেউ কারো আপন?
নাহ, সে শুধু করে আমার কষ্ট বুকে লালন
কোন কালে, কোন খেয়ালের ভুলে হারিয়েছি আমার নাম-হারা অনামিকা, সেই নিয়ে তার নির্ঘুম রাত্রিযাপন।
বলি, "সে হ্য় না, সে হতে নেই। " সে বলে , " হলে কি হ্য়"? সে কি একটু অপমানিত হ্য়? নাকি মর্মাহত?
সে কি করে হ্য়, সেও তো জানে, মুখোমুখি হওয়াটা তো জরুরী নয়, সেও কি চায়?
চায় তো অবশ্যই, কিন্তু কি করে? সেতো জানে, শিকলে পা তারও বাঁধা।
আর বিবেক? যার ব্যবচ্ছেদেই এই বিভেদ , তাকেই বৃদ্ধাঙ্গুলি?
নাহ, জানে সেও এ হয় না, হতে নেই, এক,দুই, তিন
কেটে যাবে দিন , শুধু তুমি, আমি, সে হীন
উদাস বাঁশ বনে নীরব ঘাসফরিং
দিন থেকে দিন, হবে ক্ষীঁণ
ভাবনা'র অতলান্তে
ভাবনাহীন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।