অজানা জ্ঞানের সন্ধানে চলছি
আমরা বেঁচে থাকার জন্য খাই, খাবার জন্য বাঁচি না‘-এটি কোনো প্রবাদ নয়, এ চিরন্তন সত্য কথা। তবুও জীবন চলার পথে কখনও কখনও এমন কিছু মানুয়ের সন্ধান পাওয়া যায় যাদের দেখলেই মনে হয় তারা বোধহয় খাওয়ার জন্যই ঁেবচে আছেন। তাদের অতি ভোজন রসিকতা আর মেদবহুল শরীর পরিচয়েরই জানান দেয়। পান্তরে আমরা দেখতে পাই কেউ কেউ অনেক খেয়েও শারীরিক গঠন পরিবর্তন করতে ব্যর্থ হন। স্বাস্থ্যহীনতা বা অতিস্বাস্থ্য, কম খাওয়া বা বেশি খাওয়া, কি খাওয়া উচিত বা কি খাওয়া উচিত নয়, কোন খাবার কতোটা খেতে হবে ইত্যাকার নানারকম খাদ্য বিষয়ক ভাবনা-দুভাবনার যেন আর শেষ নেই।
লাইফ চয়েস প্রোগাম ঃ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির খাবার তাহলে কি? লাইফ চয়েস প্রোগামে খাদ্যবিধি সম্বন্ধে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির মূল দিক হচ্ছে, খাদ্যের পরিমাণ ধর্তব্যের মধ্যে না এনে খাদ্যের ধরনকে বিবেচনায় আনা। লাইফ চয়েস প্রোগ্রামে খাদ্যবিধি মতে ব্যাপারটি খবই সহজ। আপনি উদ্ভিজ্জ খাবার বেশি বেশি খাবেন, খেতে হবে প্রচুর শাকসবজি, লতাপাতা- এতে চর্বি কম, জটিল শর্করা বেশি, আঁশ বেশি। প্রাণিজ খাবার-যাতে আছে প্রচুর চর্বি ও কোলেস্টেরল অথচ শর্করা ও আঁশ একেবারেই নেই, সেগুলো পরিহার করতে হবে। এতে এই লাইফ চয়েস ডায়েটটি গর্ভবতী নারী, বাড়ন্ত শিশু বা যেসব লোকের উচ্চ প্রোটিন চাহিদা রয়েছে, এদের জন্য প্রযোজ্য নয়।
প্রোটিনযুক্ত খাবারে শরীর গঠন ঃ আমাদের শরীরের প্রধান উপাদান অ্যামাইনো এসিড্। এ অ্যামাইনো এসিড থাকে প্রোটিনের মধ্যে। প্রোটিন হচ্ছে এক ধরনের অ্যামাইনো এসিড যা দেহ গঠন ও কোষকলা তৈরিতে সাহায্য করে। প্রাণিজ প্রোটিন দুধ, ডিম, মাছ, মাংস ইত্যাদি, উদ্ভিজ্জ প্রোটিন চাল, ডাল, শিম, সয়াবিন, বাদাম, ইত্যাদি। শরীর গঠনের জন্য মোট ২২ রকমের অ্যামাইনো এসিড লাগে।
২২ ধরনের অ্যামাইনো এসিডের মধ্যে মানুষের শরীর থেকে তৈরি হয় ১৩ রকমের অ্যামাইনো এসিড। বাকি ৯ ধরনের অ্যামাইনো এসিড শরীর তৈরি করতে পারে না এগুলো খাবারের মাধ্যমে শরীরে আসে। এ ৯টি অ্যামাইনো এসিডকে অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো এসিডকে অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো এসিড বলা হয়। ডিম, মাছ, মাংস আর দুধে অর্থাৎ প্রোণিজ প্রোটিনে সবগুলো অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো এসিড থাকে। সেজন্যই এসব খাবারকে ফার্স্ট কাস কমপি-ট প্রোটিনের পর্যায়ে ফেলা হয়েছে।
অন্যদিকে চাল, গম, ডাল, শাকসবজি ও ফলে সব কয়টি অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো এসিড একসঙ্গে পাওয়া যায় না। তাই এসব নিরামিষ খাবার-দাবারকে এতোদিন পর্যন্ত অসম্পূর্ণ বা দ্বিতীয় শ্রেণীর খাবারের পর্যায়ে ফেলা হতো। প্রাণিজ প্রোটিনের মূল্য বেশি হওয়ায় আল্লাহ্ গরিবদের জন্যও অল্প মূল্যে ফাস্ট কাস প্রোটিনের ব্যবস্থা করে রেখেছেন। দেখা গেছে দু’তিনটি মিরামিষ খাবার ঠিক মাত্রায় একত্র করে রান্না করলে ফার্স্ট কাস প্রোটিন সম্পূর্ণ পাওয়া যায়। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় চাল ও ডাল একসঙ্গে খিচুরি রান্না করে খেলে বা ডাল-ভাত-সবজি একত্রে খেলে তা কোনো অংশেই মাছ-ভাত বা মাংস-ভাতের চেয়ে কম হবে না।
একইভাবে সয়াবিনের তরকারি, অন্যান্য সবজি ও রুটি খেলে উচ্চমানের প্রোটিনই শরীরে যাবে। পুষ্টিমান বিচার করে দেখা গেছে মাংস, মসুর ডালের পুষ্টিগুণ প্রায় সমান সমান। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো মাছ-মাংসের চেয়ে দুধের নেট প্রোটিন ইউটিলাইজেশান বা ঘচট অনেকটাই বেশি যেমন- মাছ ও মাংসের ঘচট যথাক্রমে ৭৮ ও ৭৬, সেই তুলনায় দুধের ৮৫। বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন খাবারের মধ্যে দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্যের প্রোটিন উৎকৃষ্ট। দুধ থেকে তৈরি দধি অত্যন্ত উপকারী।
দধির প্রোটিন সহজেই হজম হয়। আমাদের অন্ত্রে কোনো তিকর জীবাণূ প্রবেশ করলে দধি সেগুলোকে নষ্ট করার মতা রাখে। রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতেও দধির জুড়ি নাই। তাহলে দধির প্রোটিন স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, সুতরাং আমাদের প্রতিদিনই ১ কাপ পরিমাণ দধি খাওয়া উচিত যা দীর্ঘ এবং নিরোগ জীবন লাভে সাহায্য করবে। শিশু-বৃদ্ধ সবার দেহের গঠন ও য় পূরণের জন্য প্রোটিন অত্যন্ত জরুরি উপাদান।
প্রোটিন জাতীয় খাদ্য খাওয়ার পর তা পাকস্থলিতে পাচক রসের সাহায্যে ভেঙে অ্যামাইনো এসিড পরিণত হয় যা শোষনের পর রক্তে বাহিত হয়ে প্রতিটি কোষের পুষ্টি যোগায়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির দৈহিক প্রোটিনের চাহিদা ৬০ গ্রাম অথবা প্রতি কেজি ওজনের জন্য ১ গ্রাম হিসাবে গ্রহণ করা উচিত। শিশুদের েেত্র প্রতি পাউন্ড ওজনে ০.৫ গ্রাম ধরে দৈনিক প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে হবে। এসময় প্রোটিনের অভাব হলে শিশুর কোয়াশিওরকার বা ম্যারাসমাসের মতো অপুষ্টির শিকার হতে পারে। গর্ভাবস্থায় এবং প্রসূতি মায়েদের প্রোটিনের চাহিদা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি।
তাই দেহ গঠন এবং য়পূরণের জন্য আমাদের দৈনিক চাহিদামাফিক প্রোটিনযুক্ত খাবার গ্রহণ করা উচিত।
চর্বিহীন বা কমচর্বি খাবার ঃ যেমন ডিমের সাদা অংশ, ননী তোলা দুধের দধি, পনির, চর্বিহীন ক্র্যাকারস, টকক্রিম মাছ-মাংস খেতে যদি হয় তাহলে কচি মোরগের বুকের ছোট অংশ, ছোট মাছ, মাছের ঝোল, মাছের তরকারীর সঙ্গে সবজি। মোরগ ও মাছ- এতে চর্বি কম।
তেল খাবেন অতি সামান্য অথবা একেবারেই নয়। তেল থেকে সাবধান।
তেল যতোটা না খেয়ে অথবা যতোটা কম খেয়ে পারা যায় ততোই ভালো। লাইফ চয়েস ডায়েটে তেল খেতে মানা। এমনকি জলপাই তেল, সানফাওয়ার, ক্যানোলা তেলও নয়। মার্জারিন ও সালাড ড্রেসিংও বাদ। এগুলো তরল চর্বিরই নামান্তর।
এ প্রোগ্রামে বলা হয়েছে ব্যায়াম খুবই উপকারী এবং জরুরি। তবে ক্যালোরি প্রথমত, অধিকগ্রহণ করা যতো সহজ ক্যালোরি পোড়ানো ততো সহজ নয়। লাইফ চয়েস প্রোগ্রামে চর্বি যেহেতু খুবই কম খাওয়া হয় সেজন্য এতো কঠোর শরীরচর্চার প্রয়োজন পড়ে না। দিনে মাঝারি কদমে ২০-৬০ মিনেট হাঁটা যথেষ্ট। ডিন অরনিশের ভাষ্য, ’কি পরিমাণ চর্বি গ্রহণ করেছেন, যে চর্বি আসছে প্রাণিজ চর্বি ও তেল থেকে।
এর ওপরই নির্ভর করে স্থুল বা মেদবিশিষ্ট হবেন কিনা। ‘ তবে উপরের খাদ্য সূত্র অনুসরণ করলে বাড়তি ওজন যেমন ঝরনো যায়, তেমনি একে বজায়ও রাখা যায়। কোমর থাকবে ীণ, বাড়বে আয়ু। তাই খাবার নিয়ে অহেতুক দ্বিধান্বিত না থেকে বুঝে শুনে ভালোমন্দ যাচাই করে তৈরি করুন আপনার খাদ্যতালিকা। জীবন একটাই।
সুতরাং জীবনকে সুস্থ্য ও সুন্দর রাখতে মেনে চলুন নিয়মকানুন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।