আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আপনারা কাঁদবেন না, প্লিজ



আমার বোনটিকে কতদিন দেখি না। বিয়ের পর কেন স্বামী, সবাই ভুলে যায় আমার নিজের পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে সময় কাটাতে আমারও ইচ্ছা করে। এবার আমার এই বোনটার বাবু হবে শুনে ডাবল খুশী হলাম। একটা হচ্ছে তার বাবু হওয়া দ্বিতীয়টা হচ্ছে এইবার এদের সঙ্গে কিছুদিন থাকা যাবে। কি আনন্দ যে হচ্ছিল, একটু পর পর চোখে পানি চলে আসে।

কিন্তু ৮ মাসের সময় জানলাম বাবুটি ওর মার পেটে উল্টে আছে। ডাক্তার অবশ্য বললেন, আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু একমাস ধরে বাবুটার নড়াচড়া কমে আসতে লাগল। একসময় বোনটিকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো। ডাক্তার বললেন, সিজার করে ফেলতে হবে, উপায় নেই।

বোনটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হল। আমি শ্বশুরবাড়ি থেকে ছুটে গেলাম আমার ছোট দুটা বাচ্চাকে রেখে। যাদের কাছ থেকে আমি একঘন্টাও দূরে থাকি নাই অথচ এদের ফেলে আসতে হয়েছিল, উপায় ছিল না বলে। এমন অনেক জায়গায় যেতে পারি নি বাচ্চাদের রেখে যেতে হবে বলে। এই প্রথম আমার বাচ্চাদের ছাড়া কোথাও রাত কাটালাম।

আমার বোনটিকে যখন ওটিতে নিযে যাচ্ছে, সবাই কাঁদছে। আমি শক্ত থাকার চেষ্টা করছি কিন্তু আমার ইচ্ছা করছে চিৎকার করে কাদতে। ওটির দরজা বন্ধ হওয়ার আগে আমার বোনটি আমার দিকে কেমন করে যে তাকিয়ে ছিল। সেই দৃষ্টি আমি কোনদিন ভুলব না। সেই দৃষ্টিতে কি ছিল? আপু, জানি না ফিরে আসব কিনা, আমার বাবুটা বেঁচে থাকলে তাকে কিন্তু তুই ফেলে দিস না।

আমার চাচাতো বোনরা পরপর বাচ্চা হওয়ার কারণে মারা গিয়েছিল বলে আমরা প্রচন্ড আতংকিত ছিলাম। তার উপর আমার এই বোনটার অনেক জটিলতা। যাক, একসময় ঝড় যেমন থেমে যায়, আমাদের আতংক শেষ হল। সময়টা কেমন করে কেটে গেছে এটা লিখে বোঝানো যাবে না, এই ক্ষমতা আমার নাই। ঘুমের ওষুধের প্রভাবে বোনটা ঘুমিয়ে থাকে।

আমিই বাবুটাকে নিয়ে রাখি। কেবিনে কতক্ষন থাকা যায়। মাঝে মাঝে করিডোরে বাবুকে নিয়ে হাটি। একদিন বাবু নিয়ে হাটছিলাম। পাশের কেবিন থেকে একটি মেয়ের যন্ত্রণার শব্দ ভেসে আসছে।

দরোজা খুলে ভেতর থেকে একজন বের হয়ে এলে আমি জিজ্ঞেস করলাম, ওনার কি হয়েছে? তিনি বললেন, আজই সিজার হয়েছে। কিন্তু জ্যামের কারণে ডাক্তার আসতে দেরী হয়েছিল, বাচ্চাটাকে বাচানো যায় নি। আমি জানতে চাইলাম, আপনি বাচ্চার কি হন? তিনি চোখে পানি নিয়ে বললেন, আমি বাচ্চাটার বাবা। বলতে বলতে তিনি একটা বাচ্চার মত কাদছিলেন। আমার মাথায় কি হয়ে গেল জানি না।

আমি আমাদের বাবুটাকে এগিয়ে দিয়ে বললাম, ভাইয়া, কাদবেন না। আপনি কি একে একটু কোলে নেবেন, প্লিজ। মানুষটা অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। আমাদের বাবুটাকে একেবারে বুকের মাঝে জড়িয়ে রাখলেন। তিনি দৌড়ে ভেতরে গিয়ে একজন বয়স্ক মহিলাকে নিয়ে এলেন।

তার কাছে বাবুটিকে দিলেন। ইনি মানুষটার মা। এই মহিলাও আমাদের বাবুটাকে বুকে ধরে কাদছেন। এদের কান্না দেখে আমিও কাদছি। অনেকক্ষন পর বয়স্ক মহিলাটি বললেন, মা, আমাদের বাচ্চাটা মারা গেছে জেনেও তুমি আমাদের কোলে দিলে? আমি প্রথমে ওনার কথা বুঝি নাই, বললাম, কেন খালাম্মা? তিনি বললেন, না, সবাই বলে এতে নাকি জীবিত বাচ্চার অমঙ্গল হয়।

আমি দৃঢ় কন্ঠে বললাম, কেন অমংগল হবে? আমাদের বাবুটার জন্য আপনারা যদি একটুখানি শান্তি পেয়ে থাকেন তবে আমাদের বাবুর জন্য এরচেয়ে বড় দোয়া আর হয় না। তিনি আমার মাথায় হাত রেখে কাদতে কাদতে অনেক কথাই বলছিলেন কিন্তু এরা কোনদিনই জানবেন না, আমার আকাশ পাতাল আনন্দের কথা, ভাললাগার কথা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.