দেশের ভাল মন্দ দেখার দায়িত্ব আমাদেরই...আসুন দেশটাকে সুন্দর করি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. এমাজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, জাতীয় শিক্ষানীতি থেকে সেক্যুলার শব্দটি প্রত্যাহার করতে হবে। জাতীয় স্বার্থ ও জন স্বার্থের কথা বিবেচনা করে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হবে। কারণ এটা কোন দলের শিক্ষানীতি নয়। এমনকি সরকারের শিক্ষানীতিও নয়।
এটাকে সমৃদ্ধ করার জন্য এবং ভুল ভ্রান্তি দূর করার জন্য প্রয়োজন হলে দীর্ঘদিন অর্থ্যাৎ ১ বছরের বেশী সময় নিয়ে হলেও এ বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা-পর্যালোচনা করতে হবে। এ নীতির উপর আরো বিশ্লেষণ, আরো ব্যাখ্যার জন্য সময় দিতে হবে। দেশের মানুষ কি ধরণের শিক্ষানীতি চায় তাদের মতমত নিতে হবে। এতে যদি ১০ বছর সময় লাগলে লাগুক। তিনি বলেন, জাতীয় শিক্ষানীতি ছাড়া ৩৮ বছর দেশ চলতে পারলে আরো কয়েক বছর চলতে পারবে।
দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা বিবেচনা করতে হবে। হুট করে কিছু করা ঠিক হবে না। ধমীর্য় শিক্ষা বাধ্যতামুলক না হলে কমলমতি শিশুরা বিপথগামী হবে। এতে পুরো জাতিই ক্ষতিগ্রস্থ হবে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে চিরন্তন বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘‘প্রস্তাবিত শিক্ষানীতি : মূল্যায়ন ও বাস্তবতা’’শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক হামদুল্লাহ আল মেহেদীর সঞ্চালনে আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। বক্তব্য রাখেন, সাবেক সচিব শাহ আব্দুল হান্নান, জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরীর আমীর রফিকুল ইসলাম খান, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটির ভিসি প্রফেসর ড. আব্দুর রব, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. মোশাররফ হোসেন মিয়া, সাবেক তথ্য সচিব ব্যারিষ্টার হায়দার আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এম মুজাহিদুল ইসলাম, প্রফেসর লোকমান হোসেন, তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা যাইনুল আবেদীন, মাওলানা এম এ লতিফ, ছাত্র শিবিরের সভাপতি রেজাউল করিম প্রমুখ। প্রফেসর ড. এমাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, জাতীয় স্বার্থ ও জন স্বার্থের কথা বিবেচনা করে জাতীয় শিক্ষানীতি করতে হবে। সরকারকে মনে রাখতে হবে, জাতীয় শিক্ষানীতি হতে হবে জাতির জন্য, এটা কোন দলের শিক্ষানীতি নয়। এমনকি সরকারের শিক্ষানীতিও নয়।
এ নীতি বাস্তবায়নে এত তারাহুরা করার দরকার কি? তিনি বলেন, ৯০ পৃষ্ঠার শিক্ষানীতিতে অনেক ভাল দিকও আছে আবার মন্দ দিকও আছে। এ নীতিতে ধর্মীয় বিষয়গুলো বাদ দেয়া হয়েছে। সংবিধানের দোহাই দিয়ে সেক্যুলারের কথা বলা হয়েছে। এসব অসম্পূর্ণতাগুলো দূর করতে হবে। তিনি বলেন, কমিশন অথবা যে কোন সংস্থা যে কোন কথা বলতে পারে কিন্তু সংবিধানের দোহাই দিয়ে কোন মিথ্যার আশ্রয়তো নিতে পারে না।
তিনি বলেন, ১ম শ্রেণী থেকে ৯ম শ্রেণী পর্যন্ত ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক হতে হবে। ঐচ্ছিক করলে হবে না। ধমীর্য় শিক্ষা বাধ্যতামূলক না হলে কমলমতি শিশুরা বিপথগামী হবে। এতে পুরো জাতিই ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তিনি উল্লেখ করেন, সেক্যুলার কথাটি সংবিধানের দোহাই দিয়ে বলা হচ্ছে কেন?।
এটা আপত্তিকর। জাতীয় শিক্ষানীতি থেকে সেক্যুলার শব্দটি প্রত্যাহার করতে হবে। কমিশন একদিকে সেক্যুলারের কথা বলবে আর আরেক দিকে নীতি নৈতিকতার কথা বলবে তাতো হয় না। মাদরাসা শিক্ষা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মাদরাসার কথা শুনলে কারো এলার্জি হওয়ার কারণ নেই। কারণ পৃথিবার অনেক জ্ঞানীগুণি,কবি সাহিত্যিক, রাজনীতিকরা মাদরাসার ছাত্র ছিলেন।
১৮৩৫ সালের আগে কোন স্কুল কলেজ ছিল না। তিনি মাদরাসা শিক্ষাকে আরো শক্তিশালী ও যুগোপযোগী করার জন্য সরকারে প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন আমাদের দুর্ভাগ্য যে সমাজের বঞ্চিত ও দরিদ্ররা মাদরাসায় পড়া লেখা করে। সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করতে হলে এ নীতির উপর আরো বিশ্লেষণ, আরো ব্যাখ্যার জন্য সময় দিতে হবে। দেশের মানুষ কি ধরণের শিক্ষানীতি চায় তাদের মতমত নিতে হবে।
প্রয়োজনে আরো ১ বছর আলোচনা-পর্যালোচনা করে উপযুক্ত শিক্ষার পরিবেশ তৈরী করে কোর্স রেডি করে তার পর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এতে যদি ১০ বছর সময় লাগলে লাগুক। জাতীয় শিক্ষা নীতি ছাড়া ৩৮ বছর দেশ চলতে পারলে আরো কয়েক বছর চলতে পারবে। তিনি বলেন, দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা বিবেচনা করতে হবে। হুট করে কিছু করা ঠিক হবে না।
কারণ এখনো এদেশে ৫০ ভাগের বেশী মানুষ নিরক্ষর। ৪৪ থেকে ৪৫ ভাগ মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। তিনি বলেন, এসব দরিদ্র মানুষের কাছে কিসের জন্য লোলিত কলার কথা বলা হচ্ছে। আগে দারিদ্রমোচনের কাজ করতে হবে। আগে স্বাক্ষরতা আনতে হবে।
তার পর লোলিতকলার কথা ভাবা যাবে। তার আগে নয়। শাহ আব্দুল হান্নান বলেন, সেক্যুলার সমাজ তৈরীর উদ্দেশ্যেই সরকার এ নীতি বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে। জাতিকে ধর্মহীন করার চক্রান্ত চলছে। তিনি বির্তকিত কমিটি বাতিল করে নুতন কমিটি গঠনের দাবী জানান।
রফিকুল ইসলাম খান বলেন, পুরো শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করে মেরুদন্ডহীন জাতি তৈরীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সেক্যুলার শিক্ষানীতি করতে যাচ্ছে সরকার। তিনি বলেন, ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশের ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করতে দেয়া হবে না। ইতোমধ্যে দেশের মানুষ এ নীতিকে প্রত্যাখান করেছে। তিনি উল্লেখ করেন, সরকার যদি সংবিধান বিরোধী এ নীতি জাতির উপর জোর করে চাপিয়ে দেয় তাহলে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলে সরকার পতন আন্দোলন শুরু করা হবে। প্রফেসর ড. আব্দুর রব বলেন, ধর্মহীন এ নীতি বাস্তবায়ন হলে দেশে যৌন নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে।
জাতি বিভক্ত হয়ে পড়বে। সমগ্র দেশে চরম নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে। তিনি দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে ৯০ ভাগ মুসলমানের কাছে গ্রহণযোগ্য জাতীয় শিক্ষা নীতি করার দাবী জানান। প্রফেসর ড. মোশাররফ হোসেন মিয়া বলেন, সেক্যুলার শিক্ষানীতিতে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠির কোন সমর্থন নেই। এ কারণে এটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।
তিনি উল্লেখ করেন, ধমীর্য় অনভুতিতে আঘাত দিয়ে কোন শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। তিনিও বির্তকিত কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি গঠনের জন্য সরকারে প্রতি আহবান জানান। ব্যারিষ্টার হায়দার আলী বলেন, বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে মুসলমানদের দ্বারা। এদেশে ধর্মকে বিলুপ্ত করার চেষ্টা হলে এ রাষ্ট্রেরই বিলুপ্তি ঘটবে। এদেশে ইসলাম বিরোধী কোন শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করতে দেয়া হবে না।
প্রফেসর এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, সরকারের এ নীতিতে স্ব-বিরোধী বক্তব্য রয়েছে। এ গুলো দূর করতে হবে। সেক্যুলার শব্দটি তুলে দিতে হবে। প্রফেসর লোকমান হোসেন, এ নীতিতে খুব কৌশলে ধর্মকে বাদ দেয়ার ষড়যন্ত্র হয়েছে। এদেশে সেক্যুলার শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।
মাওলানা যাইনুল আবেদীন বলেন, জাতির সাথে প্রতারণার মাধ্যমে যে নীতি করা হয়েছে তা জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, মিথ্যার আশ্রয় নেয়া এ নীতি তৈরীর সময় কোন শিক্ষক সংগঠনের সাথে আলোচনা করা হয়নি। এ নীতিতে ধর্মকে উপেক্ষা করা হয়েছে। মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, এ নীতি বাস্তবায়ন হলে ৯০ ভাগ মুসলমান শিক্ষার্থীদের মনে ভাস্কর্য তৈরীর নামে মূর্তি পূজার প্রতি আগ্রহ এবং নারী পুরুষের অবাধ মেলা-মেশার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।