আমি একজন বাঙ্গালি রমনী.......
একটি আদর্শ শিক্ষনীতি : আমাদের ভাবনা
১. শিক্ষানীতির একটি দর্শন শিক্ষানীতিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে।
২. শিক্ষনীতিতে শিক্ষাব্যবস্থার শুধুমাত্র অবকাঠামোগত উন্নয়নের কথা নয় বরং প্রায়োগিক উন্নয়নের কথাও থাকবে।
৩. প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামুলক ও এই সাংবিধানিক অধিকার জনগাণের হাতে ন্যস্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের কথা থাকতে হবে।
৪. প্রতি ২০০ পরিবারের জন্য একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
৫. উচ্চশিক্ষা সবার জন্য উন্মুক্ত হবে এবং এর জন্য সকলের বহনযোগ্য বেতন ফি আরোপ করা যাবে ।
৬. শিক্ষার বিষয়বস্তু হবে তথ্যনির্ভর ও বিজ্ঞানভিত্তিক।
৭. সকল ক্ষেত্রে একমুখী শিক্ষার প্রসার করতে হবে, শিক্ষাব্যবস্থার একাধিক ধারা থাকবে না।
৮. কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষা সংশ্লিষ্ঠ সকল প্রতিষ্ঠানগুলোকে সায়ত্বশাসন প্রদান করা হবে।
৯. শিক্ষকাদের বেতন ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধাসম্পর্কে প্রয়োজনীয় নিদের্শনামা শিক্ষানীতিতে থাকবে।
১০. শিক্ষার্থী মুল্যায়ন পদ্ধতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশিকা থাকবে।
১১. শিক্ষানীতিতে শিক্ষার্থীর শারীরিক মানসিক সর্বাঙ্গীন বিকাশের উপযোগী প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন সুনিশ্চিত করতে হবে।
১২. ক্ষুদ্র উপাজাতিদের তাদের নিজস্ব ভাষায় শিক্ষা গ্রহণের অধিকার প্রদান করা হবে।
১৩. শিক্ষার সকল আর্থিক দায়িত্ব সরকার গ্রহন করবে।
১৪. প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার অধিকারের কথা শিক্ষনীতিতে উল্লেখ থাকবে।
১৫. দেশীয় সংস্কৃাতির মান রক্ষার শিক্ষানীতির সুস্পষ্ঠ দিক নির্দেশনা থাকবে।
১৬. শিক্ষাক্রমের কোন একধাপে শিক্ষাবিজ্ঞান বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করা হবে এবং উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষবিজ্ঞান পঠন পাঠনের ব্যবস্থা করতে হবে।
১৭. বিজ্ঞান শিক্ষার সুনির্দিষ্ঠ দর্শনসহ বাস্তবভিত্তিক বিজ্ঞান শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করতে হবে।
১৮. শিক্ষা সকল স্তরে অভিন্ন গ্রেডিং পদ্ধতির সমন্বয় সাধন ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
১৯. প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেন একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার এবং কম্পিউটার ল্যাবের স্থাপন করা হয়, সে বিষয়ে নীতিমালা থাকবে।
২০. সকল স্তরের শিক্ষক্রমে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সেবার বিষয়বস্তুর অন্তর্ভূক্ত কারণসহ প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা মনোবিজ্ঞানী/ কারিগর নিয়োগ দিতে হবে।
২১. প্রাথমিকস্তরে কোন ধরনের ভর্তি পরীক্ষা না নিয়ে বরং ভর্তির জন্য একটি নির্দিষ্ট নীতিমালার প্রণয়ন করতে হবে।
২২. সকলস্তরের শিক্ষকদের সম্মানজনক পদমর্যাদা ও স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রদান করতে হবে।
২৩. শ্ক্ষিাক্রম, পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে।
২৪. প্রতিটি জেলার ঝপযড়ড়ষ উরংঃৎরপঃ অঁঃযড়ৎরঃু স্থাপন করে বিদ্যালয় প্রশাসন, ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধান পরিচালনা করতে হবে।
২৫. জাতীয় আয়ের একটি নির্দিষ্ট অংশ শিক্ষাক্ষেত্রে বিনিয়োগের প্রতিশ্র“তি করতে হবে।
২৬. মাতৃভাষা ও অন্যান্য ভাষা শিক্ষা শিখন ও ব্যবহারের লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি সুনির্দিষ্ট নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।
২৭. শিক্ষার্থীদের গবেষণার উৎসাহিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের কথা শিক্ষানীতিতে থাকবে।
২৮. শ্ক্ষিাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে একটি ব্যবহার উপযোগী ল্যাবেটরি স্থাপনের প্রয়াজনীয় পদক্ষেপের কথাও শিক্ষানীতিতে থাকা প্রয়োজন।
২৯. সকল ধরনের নোটবইগুলো যেন বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং শ্ক্ষিার্থীদের সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের উল্লেখ থাকবে শিক্ষনীতিতে।
৩০. শিক্ষানীতিতে শ্ক্ষিারমান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা থাকবে, শিক্ষাক্রম, পাঠ্যসূচী, শিক্ষা উপকরন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ, শিক্ষকের যোগ্যতা ও বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান, শিখন শেখানোর পদ্ধতি, অর্জিত জ্ঞানের পরিমাপ ও মূল্যায়ন থাকবে।
৩১. সাধারন শিক্ষাব্যবস্থার সাথে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার যে পার্থক্য তা দূর করে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিকায়নের ব্যবস্থা করা।
৩২. শিক্ষার প্রসারে দূরশিক্ষন পদ্ধতি যেমন: রেডিও টেলিভিশন ও অন্যান্য প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা।
৩৩. বর্তমানে প্রচলিত কোচিং ব্যবস্থা বন্ধ করার জন্য ক্লাসে যথাযথ শিক্ষা প্রদান ব্যবস্থা থাকবে।
মন্তব্য
মান সম্মত শিক্ষার উর গুরুত্ব আরোপ করে দেশে প্রচুর সেমিনার সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হয়েছে। লেখালেখিও কম হয়নি।
একাদিকে চলছে নামিদামি বিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধ, অর্থ-খরচ আর কোচিং করার প্রবণতা বৃদ্ধি পাশাপাশি অন্যদিকে পড়ে আছে জরাজীর্ণ ক্লাসরুম, শিক্ষকের অপ্রতুলতা, শিক্ষার উপকরণের অভাব। দেশে মানসম্মত শিক্ষা উর্ধ্বে যেতে বসেছে এমন অভিযোগ বহুদিনের, তবে আমার প্রশ্ন দেশে মানসম্মত কোন শিক্ষা আদৌ আছে কী?
একটা ভাল বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য শিশুদের ভর্তিযুদ্ধ, প্রমান করে যে, বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর অভিাভবকদের আস্থা নাই, গ্রামেও স্বচ্ছল পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের শহরে বা উপজেলা শহরে শিক্ষা গ্রহণের জন্য পাঠিয়ে দেয়। এসবই প্রমাণ করে দেশে মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা নেই।
বিভিন্ন শিক্ষাবিদও শিক্ষা বিষয়ক গবেষকরা শিক্ষার মান বৃদ্ধি সংক্রান্ত হাজারো বক্তব্য প্রদান করেন কিন্তু পরিবর্তন সেই অবস্থার। এসব থেকেই বেলা যায় দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে যতসব কথা নীতিবাক্য ব্যয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে তা খুব একটা কাজে আসছে না।
কারণ গত ৩৮ বছর ধরে বাংলাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা কোন নীতি, আদর্শ কিংবা পরিকল্পনা বিহীন ভাবেই গড়ে উঠেছে। শিক্ষার ব্যাপক চাহিদা পূরনের জন্য গড়ে উঠেছে একাধিক ধারা আর উপধারা পাশাপাশি নানা প্রকারের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আসলে কোন শিক্ষানীতিবিহীন অনিয়ন্ত্রিত বা অপরিকাীল্পত ভাবে যে শিক্ষাব্যবস্থা বাংলাদেশে গড়ে ওঠেছে তাতে শিক্ষার মান রক্ষা আশা করাই নিরর্থক। পাশাপাশি স্বাক্ষরতার হার ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের অভাবও বিদ্যামন। এমন অবস্থা থেকে উত্তোরনের জন্য একটি শিক্ষানীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
ইতিপূর্বে বাংলাদেশ স্বাধীন বাংলাদেশে ৬টি শিক্ষানীতি প্রণীত হলেও বিবিধ অসঙ্গতির কারণে তার কোনটাই বাস্তবায়িত হয়নি ফলে এগুলোকে বলা হয় প্রস্তাবিত শিক্ষানীতি। রাজনৈতিক পালাবদল, শিক্ষনীতির গ্রহণযোগ্যতার অভাব ইত্যাদির কারণে এক এক করে কবর রচিত হয়েছে ৬ টি প্রস্তাবিত শিক্ষানীতির তবে শিক্ষনীতিগুলো প্রায়ই কাছাকাছি ধরনের কোনটিতেই সাধারণ জনগন ও ছাত্রদের আকাক্সক্ষার পূর্ণ প্রতিফলন পরিলক্ষিত হয়নি, পাশাপাশি হাজারো অসঙ্গতি বিদ্যমান বর্তমানের প্রস্তাবিত শিক্ষানীতি-২০০৯ এ।
কোন শিক্ষনীতিতেই দেশের জনসাধারণের সাংবিধানিক অধিকার শিক্ষা গ্রণের পূর্ণ সুযোগ প্রদত্ত হয় নি, প্রাথমিক শিক্ষাকে আবশ্যক করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের অভাব ও বিদ্যমান। এত সব অসঙ্গতি করণেই আজ আবাদি কোন শিক্ষানীতি বাস্তবায়িত হতে পারে নি। যার ফলে ব্যাঙ্গের ছাতার মত পরিচর্যাহীনভাবে ঘড়ে উঠেছে আশাদের শিক্ষাব্যবস্থা।
যার উন্নয়ন ও মানসম্মত শিক্ষার নিশ্চয়তা প্রদানের জন্য প্রয়োজন যুগোপযোগী শিক্ষানীতি। তাই ২০০৯ সালে প্রন্তাবিত খসড়া শিক্ষানীতিতে আলোচনা সাপেক্ষে পরিবর্তন করে একটি চূড়ান্ত শিক্ষানীতির বাস্তাবায়ন করা একান্ত প্রয়োজন। কারণ একটি শিক্ষানীতিই পারে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন করে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার মানোন্নয়ন করতে পাশাপাশি একটি শিক্ষিত ও সচেতন জনগোষ্ঠী বিনির্মাণ করতে।
উপসংহার
বাংলাদেশের শিক্ষার নীতি সম্পর্কিত তুলনামুলক আলোচনার এ কাজটি করতে গিয়ে আমরা সকলেই যে কষ্টটি অনুভব করলাম সেটি হল, শিক্ষানীতি শব্দটিকে এর শব্দগত অর্থে শিক্ষার জন্য নীতি হিসাবে ছাত্রসমাজকে পাশাপাশি পুরো জাতিকে জানানো হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষানীতির অর্থ হওয়া উচিত নীতির জন্য শিক্ষা।
একজন মানুষকে নীতিবান, নিষ্ঠাবান, মানবীয় গুনাবলীতে মণ্ডিত এবং মনুষত্বের প্রতিমা হিসাবে গড়ে তোলাই শিক্ষার উদ্দেশ্য। শিক্ষার উদ্দেশ্য জাতিকে কতগুলো ডিগ্রি কিংবা সনদপত্রের ধারক করা নয়। এ পর্যন্ত প্রস্তাবিত সকল শিক্ষনীতিই কোন না কোন দিক থেকে অপূর্ণ। আর এ অপূর্নতার মাশুল দিতে হচ্ছে গোটা জাতিকে। তাই শিক্ষানীতি প্রনয়নে আমাদের দাবি, শিক্ষাকে যেন আমাদের মানবিক উন্নতির জন্য দান করা হয়।
এজন্য শিক্ষানীতি প্রণীত হওয়া উচিত সে সকল ব্যক্তিবর্গের হাতে যারা শিক্ষার অর্থ বোঝে জাতিকে অশিক্ষার শাপযুক্ত করতে নিবেদিত প্রান এবং প্রয়োজনে খড়গহস্ত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।