কোন একদিন.. এদেশের আকাশে... কালেমার পতাকা দুলবে, সেদিন সবাই ... খোদায়ী বিধান পেয়ে দু:খ বেদনা ভুলবে..
৪০০০ হাজার বছর আগে, আরবের এক পূজামন্ডপে নিয়মিত বার্ষিক উৎসব চলছে। প্রায় সকল পূজারী এ অনুষ্ঠানে হাজির। পূজা পরিচালনা করছে প্রধান পুরোহিত। বছরের এ দিনে সকল পূজারী পুরোহিতদের সহযোগীতায় নতুন করে দেব দেবীদের প্রতি বিশ্বাসের ও আনুগত্যের পরিশুদ্ধতা অজর্ন করে। বার্ষিক এ পূজা অনুষ্ঠান তিনদিন ধরে অনুষ্ঠিত হয়।
প্রথম দিন সারা পৃথিবীর সকল পুরোহিত প্রধান পুরোহিতের সাথে মিলিত হন। তারপর সারাদিন ধরে চলে আলোচনা। আলোচনা অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত থাকে বিভিন্ন দেবতার প্রতিনিধিগন। তাঁরা দেব-দেবীদের নিকট হতে তাদের বাণী নিয়ে আসেন এবং তা পুরোহিতদের কাছে পৌছে তার প্রশিক্ষন দেন। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন তারা সাধারন মানুষের সাথে দেখা করেন এবং পুরোহিতদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষন করেন।
তৃতীয় দিন সারাদিন বিভিন্ন দেবদেবীদের উপাসনা শেষে প্রতিনিধিগন অন্তরীক্ষে ফিরে যান।
উপরের গল্পটা নিছকই একটা কল্পনা। উপরের ছোট্ট দৃশ্যপটটিতে একদল মুশরিকের ছবি আঁকা হয়েছে। এরা বিভিন্ন দেব-দেবীর উপাসনা করে। এদের দেব-দেবীগন প্রতি বছর তাদের পূজারীদের কাছে তাদের প্রতিনিধি পাঠায়।
কিন্তু আসলে কি এ ধরনের ঘটনা পৃথিবীতে একবারের জন্যেও ঘটেছিল? অগ্নী পূজারীগন কি কখনো তাদের অগ্নী দেবের সামান্য ভাঁপও কি পেয়েছে যা প্রমান করে আগুন তাদের দেখভাল করবে? অথবা কোন মহাত্না কি এসেছিল এ পৃথিবীতে যে সৃষ্টিকর্তার কাছ হতে মানুষের মাঝে মূর্তি পূজার আদেশ নিয়ে এসেছিল? আমার জানা মতে আসেনি, এবং সত্যিই কেউ আসেনি।
হযরত আদম (আ) ছিলেন পৃথিবীর প্রথম মানুষ। তিনি তাঁর সন্তানদেরকে আল্লাহর একত্নবাদের শিক্ষা দিয়েছেন এবং তাঁর আদেশ মেনে চলার প্রশিক্ষন দিয়েছেন। তাঁর ওফাতের পর মানুষ তাঁর শিক্ষাকে ভুলে থাকার চেষ্টা করল, তারা বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ল এবং আল্লাহর পরিবর্তে শিরকে আসক্ত হয়ে পরল।
এর দশ প্রজন্ম পরে পৃথিবীর ক্ষুদ্র মনুষ্য জাতি আল্লাহর কোন শিক্ষাকেই আর মনে রাখল না, নাফরমানীর চরম পর্যায়ে চলে গেল এরা।
ঠিক ঐ সময় এদের মধ্যকার সেরা একজন মানুষকে বাছাই করলেন আল্লাহ। নিশ্চয়ই আল্লাহ সেরা এই মানুষকে ইচ্ছে করেই নাফরমান মানুষের মাঝে জন্মানোর ব্যবস্থা করেছেন। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে পুনরায় সঠিক পথের প্রশিক্ষন দিলেন এবং সাধারন মানুষের মাঝে সেই আদর্শের দাওয়াত দিতে আদেশ করলেন। অবশেষে দাওয়াত কবুলকারীদের কে রেখে বাকিদের ধ্বংশ করে দিলেন আল্লাহ।
আবার প্রজন্মের পর প্রজন্ম আবর্তিত হতে লাগল পৃথিবীতে।
ধীরে ধীরে মানুষ আবার বিভিন্ন অপরাধে আসক্ত হয়ে যেতে লাগল। তারা আল্লাহর ইবাদাত ত্যাগ করে মূর্তি পূজা ও আল্লাহর বিভিন্ন রহমতের নিদর্শন তথা সূর্য, চন্দ্র ইত্যাদির পূজায় লিপ্ত হয়ে গেল। ভিন্ন ভিন্ন যূগের ও ভিন্ন ভিন্ন স্থানের লোকজন ভিন্ন ভিন্ন দেব-দেবীর পূজা করতে থাকল। আল্লাহ ইসলামের মৌলিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্যে প্রত্যেক জাতির মাঝে তাঁর অসংখ্য প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন। যার ধারাবাহিকতার শেষ হয়েছে মহানবী মুহম্মদ (স.) এর আগমনের মাধ্যমে।
অনেকে সঠিক পথে ফিরে এসেছে, আবার অনেকে নাফরমানীর অপরাধে ধ্বংশ হয়ে গিয়েছে। এসকল ধ্বংশাবশেষ আজও দৃশ্যমান। আবার অনেকে আল্লাহর শিক্ষাগুলোকে বিকৃত করে নিয়ে নিজেদের মত করে পালন করেছে এবং অনেকে এখনো করছে।
এত সুস্পষ্ট নিদর্শন থাকার পরও মানুষ সঠিক পথ হতে দুরে রয়েছে। প্রত্যেক জাতির কাছেই আল্লাহ তাঁর পথের দিশা এবং তাঁর আযাবের ভয়াবহতার ভীতি প্রদর্শন করেছেন।
সূরা আন-নামল এর ৬৭, ৬৮ ও ৬৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ উল্লেখ করেছেন, “এ অস্বীকারকারীরা বলে থাকে, “যখন আমরা ও আমাদের বাপ-দাদারা মাটি হয়ে যাবো তখন সত্যিই কবর থেকে বের করা হবে নাকি? এ খবর আমাদের বাপ দাদাদেরকেও অনেক দেয়া হয়েছিল, কিন্তু এসব নিছক কল্প-কাহিনী ছাড়া আর কিছুই নয়, যা আগের জামানা থেকে শুনে আসছি। ” বলো , পৃথিবী পরিভ্রমন করে দেখো অপরাধীদের পরিণতি কি হয়েছে। হে নবী! তাদের অবস্থার জন্য দু:খ করোনা এবং তাদের জন্য মন:ক্ষুন্ন হয়োনা। ''
উপরের আয়াতগুলো থেকে বোঝা যায়, প্রত্যেক জাতির লোকজনই আল্লাহর আযাব সম্বন্ধে জ্ঞাত ছিল। কিন্তু তা তারা হালকাভাবে দিত এবং তাদের অপরাধ কর্মে লিপ্ত থাকত।
আল্লাহ তাঁর নবীকে এদের ব্যপারে দু:খ প্রকাশ করতে নিষেধ করেছেন। আজও যারা মুশরিক রয়েছে অথবা নাস্তিকতায় লিপ্ত রয়েছে, তাদের এ কাজের জন্য কোথাও হতে কোন প্রতিনিধির আহ্বান ছিলনা। তাদের কাছে কোন যুক্তিও নেই। বরং তাদের অপরাধপ্রবণতাই এর মূল কারন। তারা তাদের অপরাধকর্মগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্যে ইচ্ছে করেই আল্লাহকে অস্বীকার করে।
সঠিক পথে চলার জন্য উপযুক্ত জ্ঞান তাদের রয়েছে। তারা যদি চাইত তবে তারা সঠিক আলোয় উদ্ভাসিত হতে পারত। তারা চায়নি বলেই আজ তাদের জন্য কঠিন আযাব অপেক্ষা করছে। তাদের এ অবস্থার জন্য আল্লাহর রাসূলের (স.) কিংবা অপরাধীদের শুভাকাংক্ষী মুসলমানদের মনক্ষুন্ন হবার কোনই প্রয়োজন নেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।