জীবনকে খুব কাছ থেকে দেখতে চাই। গতানুগতিকতার গন্ডি থেকে মুক্তি চাই। এতে হয়তো শুনতে হবে অনেক অপমানের বাণী। ভয় করি না।
আনিস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইকোনোমিক্সে পড়ছে।
আনিস গ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছে। শুধু গ্রাম বললে মনে হয় ভুল হতে পারে । তাই অজপাড়া গাঁ বলা যেতে পারে। কুড়িগ্রামের কোন একটা গ্রাম থেকে আনিস ঢাকায় এসেছে। উচ্চ শিক্ষার জন্যে সে জীবনের প্রথমবারের মত ঢাকা শহরে এল।
আনিস হত দরিদ্র পরিবারের ছেলে। নুন আনতে পান্তা ফুরায় এরকম পরিবারের ছেলে। অনেক কষ্ট করে সে পড়ালেখা করছে। প্রথম আলোর অদম্য মেধাবীদের মত সেও সারভাইভ করছে। আনিসের বাবা নেই।
আনিস যখন ঢাকায় আসে তার কাছে ছিল মায়ের দেয়া ৫০০ টাকা ,চোখে মুখে বিস্ময়ের ছাপ আর বুক ভরা স্বপ্ন। আনিস গ্রাম থেকে এসেছে তাই অত স্মার্ট হতে পারেনি। এ নিয়ে তার বন্ধুরা তাকে নিয়ে হাসাহাসি করত। তাকে নিয়ে টিজ করত। আনিসকে ওর বন্ধুরা ক্ষেপাত।
তারা আনিসকে মফস(মফস্বলের ছেলের সংখেপ) ডাকত। আনিস খুবই ইমোশনাল টাইপের ছেলে। তার খুবই খারাপ লাগত। প্রতিদিন ক্লাস শেষ করে আনিস রুমে গিয়ে কান্নাকাটি করত। আনিসের শরীর থেকে গ্রাম্য গন্ধ যায়নি তখনও তাই বন্ধুরা ওকে নিয়ে হাসাহাসি করত।
কম যেতনা আনিসের বান্ধবীরা। যারা শহরের ছেলেপুলে তাদের সাথে তারাও তাল মেলাত। আনিসের এক পর্যায়ে ক্লাসের প্রতি একটা বিরক্তি ভাব এসে যেত লাগল। ক্লাস তার ভাল লাগত না। আনিস যেন প্রতিদিনের সবার হাসির খোরাক হয়ে যেতে লাগল।
মফস আনিসকে দিয়ে তার বান্ধবীরা ফোটোকপি করাত। ক্যান্টিন থেকে খাবার এনে দিত আনিস। আনিস যে একেবারে বাধ্য হয়ে করত তা না। আনিস জানত মানুষের উপকার করতে হয়। আনিসের শিক্ষক ভুরুংগমারী উচ্চ বিদ্যালয়ের কার্তিক স্যার আনিসকে বলেছে সব সময় মানুষের উপকার করবি।
জীবে দয়া করে যে জন,সে জন সেবিছে ঈশ্বর। আনিস তার বন্ধুদের বুঝতে পারে না। তারা আনিসের সামনে সমানে সিগারেট টেনে ধূয়া আনিসের মুখের উপর ফেলছে। আনিস বল্ল তোমরা এভাবে ধোঁয়া ফেলছ কেন ?আমার কষ্ট হচ্ছে। বন্ধু রাব্বি বল্ল "আরে দোস্ত খানা" খায়া ক কেমন লাগে?আনিস মাথা নাড়ে।
বলেই ওর বন্ধুরা ওর মুখে সিগারেট গুযে দেয়। ওরা আনিসের ছবি তুলে। সবাইকে সেই ছবি দেখিয়ে বেড়ায়। একজন বুলল এই ছবি ফেইস বুকে দিলে নাকি অনেক কমেন্ট পাওয়া যাবে।
আনিস এমনিতেই দরিদ্র পরিবারের ছেলে।
আনিসের কোন মোবাইল ফোন নেই। শুনলে আসলেই অবাক লাগে। ঢাকা শহরে একটা টিউশুনি করে। কোন মতে সে চলে। তার শার্ট মোটে একটা।
এইটা পরেই তাকে থাকতে হয়। রাতে ধুঁতে দিলে ফ্যানের বাতাসে তা শুকায়। । আনিস সামনের মাসের টিউশুনীর টাকা পেলে একটা শার্ট কিনবে। অব্যশ্য বাড়িতে টাকা পাঠাতে হবে।
ওর ছোট বোন এবার এস এস সি পরীক্ষা দিবে। ওর ফর্ম ফিল আপের টাকা দিতে হবে।
সকালের নাস্তা আনিস খুব সাদা মাটা ভাবে সারে। একটা রুটি আর একটা ডিম। ১০ টাকার মধ্যে হয়ে যায়।
দুপুরে আর রাতে হলের মেসে খায় আনিস। মাঝে মাঝে আনিস ভাবে এত কঠিন কেন দিন গুলো। তবুও আনিস স্বপ্ন দেখতে ভালবাসে। যদি আরেকটা টিউশুনি পাওয়া যায় মাকে একটা শাড়ি কিনে দিবে সে।
চলব............
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।