জীবনকে খুব কাছ থেকে দেখতে চাই। গতানুগতিকতার গন্ডি থেকে মুক্তি চাই। এতে হয়তো শুনতে হবে অনেক অপমানের বাণী। ভয় করি না।
প্রথম খন্ড নীচে দেয়া আছে
২
আমি থাকি কমলাপুরের কাছে একটা মেসে।
মেসের অবস্থা খুবই করুণ। রাজনীতিতে কত সংস্কার হচ্ছে। কিন্তু আমাদের মেসে কোন সংস্কার হয় না। সংস্কার কেন হওয়া প্রয়োজন তা আপনাদের বলি,মেসটা অত্যন্ত নোংরা। ভিতরে এত প্রকট দুর্গন্ধ যে সব সময়েই মনে হয় যে কোথাও মরা ঈদুর পরে আছে।
আমি একবার রুম পরিষ্কার করার জন্য মেস ম্যানেজারের কাছে অনুরোধ করেছিলাম। মেস ম্যানেজার রুম পরিষ্কারের কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়ল। আমাকে বলল "মাগার রুমে হাইগা আইচেন আর কন আমি পরিষ্কার করমু। "আমি আর কথা বাড়ালাম না। আমাদের টয়লেট এক খানা।
এই টয়লেট ১৫ জন মানুষের জন্য। সকালবেলা মোটামুটি লাইন ধরে যায়। মাঝে মাঝে কেউ টয়লেটে ঢুকলে বাইরে থেকে ক্রমাগত তাকে বের হয়ে আসতে তাগিদ দেয়া হয়। এর মধ্যে আবার টয়লেটের সিটকিনিটা নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু সেইটা ঠিক করার জন্য কেউ কোন মাথা ব্যাথা দেখাল না।
বরং মেসের সবাই চার কোনা খাট(গোল টেবিল বৈঠকের নতুন সংস্করণ) বৈঠক ডাকল। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হল যে এখন যে টয়লেটে যাবে সে আগে থেকে একটা শিষ বাজাবে। ভিতরে যে থাকবে সেও একটা শিষ দিবে। যদি শিষ শুনা না যায় তাহলে ধরে নিতে হবে যে টয়লেট খালি। এই অত্যন্ত মূল্যবান সমাধান করল আমাদের মেসের গাঞ্জা আবুল।
কেন তার নাম গাঞ্জা আবুল তা নিয়ে বিভিন্ন মতামত আছে। কেউ বলে সে ছ্যাকা খেয়ে গাঞ্জা ধরেছিল আবার কেউ বলে সে তার গানের গলা ঠিক করার জন্য গাঞ্জা সেবন করত। সেই জন্য তার নাম গাঞ্জা। যাই হোক বর্তমানে তার কিভাবে দিন চলে তা নিয়ে সবার মনেই একটা কৌতুহল লক্ষ্য করা যায়। কিছু না করেই যদি এভাবে দিনের পর দিন পার করা যায় তাহলে সে আমার মত লক্ষ বেকারের আইডল হতে পারে।
দুর্ভাগ্য কিনা জানি না এই গাঞ্জা আবুলই আমার রুমমেট। আবুল ভাইয়ের কাজ হল প্রতিদিন পেপারের পাত্রী চাই বিজ্ঞাপন দেখা। অত্যন্ত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তিনি পড়েন। তার বিশসাস একদিন তিনি এভাবেই কোটিপতি কোন মেয়েকে বেয়ে করে আমেরিকা যাবেন। গাঞ্জা আবুল ভাই আবার অত্যন্ত কবি মানুষ।
আমাকে বলে,"বুজলা আনিস তোমারে নিয়ে একটা কবিতা লিখছি। "আমি কবিতা শুনতে চাই কিনা তা জানার চেষ্টা না করেই উনি খাতা বের করে আমাকে কবিতা পড়ে শুনাতে লাগলেন,-
আনিস আনিস
ফানিস ফানিস
মানিস মানিশ
আনিস আনিস
বালিশ বালিশ......
পড়া শেষ করে আমাকে বললে," আনিস কবিতাটা কেমন হইল বল তো"?
আমি বহু কষ্টে বিরক্তি চেপে বললাম," ঝাক্কাস লিখছেন। রবিন্দ্রনাথ ফেইল"
আবুল ভাই একটু লাজুক হাসি হাসলেন। বল্লেন," কবিতাটা আমি মাথার মধ্যে সাজাইছি টয়লেটে বইসা। টয়লেটে গেলে এত কবিতার লাইন মাথায় আসে না.....।
আমার কি মনে হয় জান আনিস?রবীন্দ্রনাথ তার সব কবিতা টয়লেটে বইসা চিন্তা করছে। "
"তাই নাকি ?আপনে কেমন করে বুজলেন?"
বুজা যায় মিয়া। এক জন কবি আরেকজনের কদর বুজতে পারে। তুমি তার কি বুজবা এ্যাঁ?
আমি আর উনার সাহিত্য না শুনে বাইরে চলে আসলাম। প্রচন্ড ক্ষিধা পেয়েছে।
কিন্তু পকেটে কোন টাকাই নেই। আমি কি করব বুজতে পারছিলাম না। হটাত ছোট ফুপুর বাসায় রওনা দিলাম।
আমি কলিংবেল চাপলাম। দরজা খুললেন ছোট ফুপা।
আমাকে দেখে বল্লেন?কি ব্যাপার টো টো কোম্পানির ম্যানেজার সাহেব?আজও নিশ্চয়ই খেতে এসেছ। চাকরি বাকরির আর কত দূর।
ফুপা আগে একটু বসতে দেন তো। আমি অনেক টায়ার্ড।
হুম বেকাররা তো টায়ার্ড বেশী হবেই।
আমি আগে এসব কথায় অনেক মাইন্ড করতাম। কেন যানি এখন আর এসব কথা গায়ে লাগে না। মনে হয় বেকার জীবন যাপন করলে গায়ের চামড়া গন্ডারের মত হয়ে যায়।
ফুপা-ফুপু দু জনই নিঃসন্তান। ফুপুর বাসায় ফুপা-ফুপু দুই জন থাকে।
আর থাকে ফুপার এক দুসম্পর্কের ভাগ্নি মীরা। এর মধ্যে ফুপু এসে উপস্থিত। আরে আনিস কত দিন পরে আসলি?না খেয়ে খেয়ে শরীরের একি হাল করেছিস? আমি বললাম মীরা কোথায় ফুপু?
ও কলেজে গেছে। এক্ষুণি এসে পরবে । আজকে মীরা বলছিল তুই নাকি আসবি।
সকাল বেলায় কাক ডাকা ডাকি করছিল জানালার পাশে। কাক ডাকলে নাকি মেহমান আসে।
আমি হো হো করে হেসে উঠলাম। আমি বললাম প্রতিদিন যদি তোমার কাক ডাকত তাহলে আমার অন্তত একটা গতি হত। ফুপু সারা শরীর গিনগিন করছে।
আমি যাই এক দৌড়ে গোসল করে আসি। ভাল কথা আজকে খাওয়ার মেনু কি?
কই মাছ,চিতল মাছের পেটী,শুটকি ভর্তা.......
থাক থাক আর বলা লাগবে না। শুনে আমার জিবে জল এসে গেল। আমি গোসল করে আসছি।
আমি টেবিলে বসতেই মীরা আসল।
মীরা এবার লালমাটিয়া কলেজে ইংলিশে অনার্স পরছে। মীরাকে অনেকদিন পর দেখলাম। মেয়েটাকে আগের চেয়ে অনেক বেশি রূপবতী লাগছে। ব্যাপার কি?দিন দিন সে এত বেশি সুন্দর হয়ে যাচ্ছে কেন?গল্প উপন্যাস হলে মীরার সাথে আমার প্রেম হয়ে যেত। কিন্তু এটা তো গল্প উপন্যাস না।
আমি মনে মনে একটা দীর্ঘশাস ফেললাম।
মিরা আমাকে দেখেই বলল কি ব্যাপার বেকার উদ্দিন ভাই যে?আবার কি মনে করে?
আমি বললাম ফাজলামো করবি না?তোর কি ধারণা আমি তোর বাসায় খেতে এসেছি?টিউশুনি করতে আসছিলাম। পথে তোদের বাসা পড়ল তাই ভাবলাম দেখে যাই।
মীরা অবিশাসের দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকি বলল," ও"।
ছোট ফুপু বললেন,"কি শুরু করলি তোরা?বেচারেকে একটু শান্তি মত খেতে দে তো।
"
আমি খেতে লাগলাম। রান্নাটা আসলেই চমতকার হয়েছে। অনেকদিন পর পেটভরে খাচ্ছি। ছোট ফুপু বললেন তোর বাবাও ঠিক তোর মত করে বসে খেত। আমি লক্ষ করলাম আমার চোখের কোণা একটু ভিজে গেছে।
কেউ কিছু বুজে উঠার আগেই বললাম,আহ চোখে কি পড়ল আবার। বলেই শার্টের হাতা দিয়ে চোখ কচলালাম।
সমাপ্ত
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।