এমনিতেই বাসা থেকে বেরুতে একটু দেরী হয়ে গেল। দ্রুত হেটে বাসস্টপেজে এলাম। এসেই বুঝতে পারলাম কাহিনী খারাপ। কয়েক শ মানুষ দাড়িয়ে আছে। অনেকক্ষন থেকে বাস আসছেনা।
টেক্সী খোজার চেষ্টা করলাম, যথারীতি উনারা যাবেন না। এদিকে দেরী হয়ে যাচ্ছে। কোন উপায়ও দেখছিনা। হঠাৎ মানুষের ছোটাছুটি শুরু হলো, সবাই গিয়ে হামলে পড়লো কাউন্টারে। উল্টোদিকে তাকালাম।
দেখলাম রক্ত খেয়ে ঢোল হয়ে উড়তে না পারা মশার মতো হেলেদুলে একটা বাস আসছে। হার্টবিট বেড়ে গেল। যে কোন মূল্যে উঠতেই হবে। ত্বরিত সিদ্ধান্ত, টিকেট কাটতে গেলে এই বাস আর ধরা হবেনা। টিকেট না নিয়েই উঠবো।
পরে যা হয় হবে। দরকার পড়লে জরিমানা সহ দেব। ততক্ষনে বাস চলে এসেছে কাছে। চলন্তু বাসের হ্যান্ডেল ধরার জন্য মানুষের প্রানান্ত চেষ্টা শুরু হলো। সে এক কঠিন অবস্থা, আমার পক্ষে এর বর্ণনা দেয়া অসম্ভব, কেবল ভুক্তভোগীই বুঝতে পারবে সে মূহুর্তটা।
যা হোক কিছুক্ষন পর বুঝতে পারলাম আমি সফল হয়েছি। এক হাতে ধরা ব্যাগ এক হাত দিয়ে ঝুলে আছি। জুতা, প্যান্ট, জামা, মাথার চুলের কি হাল তা বলার অপেক্ষা রাখেনা (অফিসে এসে বাথরুমে গিয়ে জুতা, প্যান্ট ধুতে হয়েছিল)। এভাবেই ঝুলছি। অবস্থাটা এমন যে এখন যদি কোন আরেকটি বাসের কাছাকাছি আমাদের বাসটি চলে আসে এক সেন্টিমিটারও আমার পক্ষে নড়া সম্ভব না, বাড়ী খেয়ে রাস্তায় পড়ে সোজা চাকার তলে।
ওদিকে হেলপার ব্যাটা পাদানীতে যায়গা না পেয়ে ছাদে উঠে বসে আছে। যাই হোক, কষ্টের প্রহর আর শেষ হয়না। একসময় টের পেলাম হাতে ব্যথা আরম্ভ হয়েছে। বেশীক্ষন আর এভাবে ঝুলা সম্ভব না। চোখে প্রায় পানি চলে আসার অবস্থা।
অবশেষে সহ্য করতে না পেরে জানালা দিয়ে ভেতরের মানুষগুলোকে আরেকটু চাপতে বললাম। শুনছে বলেও মনে হলোনা। উপায় না পেয়ে গালাগালি শুরু করলাম। তাতে কিছুটা কাজ হলো। সামান্য একটু নাড়াচাড়া হলো।
ঠেলে গেইটে দাড়ানো দুজনের মাঝে নিজেকে সপে দিলাম। কিছুই ধরতে হলোনা। কারন সামনে পিছনে দুজনের মাঝে যে কঠিন গাদাগাদি অবস্থা তাতে অন্য কিছু ধরার প্রয়োজন পড়েনা। এ অবস্থায় প্রায় ১ ঘন্টা। যখন নামলাম ততক্ষনে বিষিয়ে উঠেছে মন, এই কি মানুষ জীবন?
এ ঘটনা আমার জীবনে প্রথম না, বরং প্রতিনিত্য।
প্রতিদিনই আমার মতো লক্ষ লক্ষ মানুষ কে এ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। নারীদের অবস্থা আরো ভয়াবহ, তাদের দুর্ভোগ অবর্ণনীয়। আমি এটাকে খুব দৃঢ়ভাবে 'মানবিক বিপর্যয়' বলি। এটা কোন অবস্থাতেই স্বাভাবিক সুস্থ পরিস্থিতি হতে পারেনা। কিন্তু কতৃপক্ষ নামক বস্তুটির এতে কোন মাথাব্যাথা নেই।
কারণ তাদেরকে এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হয় না। তাদের চলাচলের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আরামদায়ক গাড়ীর ব্যবস্থা আছে। আমরা ম্যাঙ্গো পিপল (মগবাজারের জ্যামে, ঘামে, নুনে, ঠাসাঠাসি অবস্থায় ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থাকার সময় নিজেকে ;পিপল' ও মনে হয়না, কুত্তা বিলাই শ্রেনীর কোন প্রাণী মনে হয়) কেমন কষ্টে দিনাতিপাত করছি তাতে তাদের কিই বা আসে যায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।