এইমাত্র আপনি সামুর সবচেয়ে ফালতু ব্লগে ঢুকলেন ;/ কয়েকদিন পরপর দেশে একেকটা আকাম-কুকাম হয় আর সেটা নিয়ে পুরো দেশবাসী নাহ দেশবাসী বলাটা ভুল তারা এতো অবসর না; ব্লগবাসী, ফেইসবুক পেইজবাসী আর পত্রিকার কলাম লেখক এই তিন কুল ঝাপিয়ে পড়েন। রিসেন্ট ঘটনার মধ্যে রুমানা-হাসানের কাহিনীর জোয়ারে পুরা ব্লগের দুনিয়া ভেসে গেল, তারপর আসল পরিমলের সুনামি। সেটা নিয়ে তো বিরাট কান্ড ঘটল। মিডিয়া পর্যন্ত পক্ষপাতিত্ব করল। তার কয়েকদিন পর শুরু হল গণপিটুনি।
একের পর এক ভয়াবহ গণপিটুনির ঘটনা ঘটতে লাগল, আর ব্লগ, পেইজ আর পত্রিকার সম্পাদকীয় পাতা ভরে যেতে লাগল।
তবে সবচেয়ে আলোচিত হয়েছে মনে হয় অল্পবয়সী ছেলে মিলনের গণপিটুনি খেয়ে মৃত্যু। কারণ সাধারণত চোর-চোট্টাদের পাবলিকের হাত থেকে পুলিশই বাঁচিয়ে থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রে জাতি এক বিরল ঘটনার সাক্ষী হয়। পুলিশই অভিযুক্তকে পাবলিকের হাতে তুলে দেয়।
এখন তো খুব ভয়ে ভয়ে রাস্তায় চলাচল করি। পুলিশের গাড়ি দেখলে অনেক দূর দিয়ে ক্রস করি, লুকিয়ে পড়ি। বলা যায় না। কখন, কী সন্দেহে না আবার গণপিটুনি খেয়ে মরতে হয়।
মাঝখানে ক্লোজআপ তারকা আবিদের ডুবে মরার পর সর্বশেষ তারেক মাসুদের এক্সিডেন্ট।
সবার ভাবটা যেন এমন তারেক মাসুদের মৃত্যুর পরই সবাই বুঝেছে যে রাস্তাঘাটের অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে! এগুলোর সংস্কার দরকার। ফাজিল মন্ত্রীগুলোও আবোল-তাবোল মন্তব্য করে আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে। এর মধ্যে আবার এক শ্রেণীর ভাদাইম্যা তারেক মাসুদের মৃত্যুতে আনন্দ উল্লাস করছে! এক নাস্তিক ইসলাম বিরোধীর মৃত্যু হয়েছে! হারি হারি হো!! হায়রে আবাল পাবলিক!
আমার প্রিয় এই বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ৩০ জন লোক মারা যায় রোড এক্সিডেন্টে। তাই মাঝে মধ্যে তো দুই-একজন সেলিব্রিটি মরতেই পারে। এ আর অস্বাভাবিক কী! কই সাইফুর রহমানও তো রোড এক্সিডেন্টে মারা গেলেন, তখন তো আর এতো হইচই হয় নাই, সড়কের নিরাপত্তা নিয়ে।
তারেক মাসুদের চাইতে সাইফুর রহমান দেশের জন্য অনেক অনেক বেশি করেছেন। পুরা সিলেটকে তিনি অন্যরকম এক চেহারা দিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু না অকৃতজ্ঞ বাঙালী! সাইফুর রহমানের জন্য ফেলল না এক ফোঁটা চোখের পানি। দাঁড়ান! কেউ আবার মনে করবেন না আমি বিএনপির দালাল; সাইফুর রহমানের গুনগান করতে বসেছি। আমার এই ব্লগের উদ্দেশ্য এটা নয়।
আমার মূল বক্তব্য হচ্ছে এইসব ব্লগ, পেইজ সর্বোপরি মিডিয়া একশ্রেণীর মানুষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এরা যে বিষয়টা তুলে দেয় সেটা নিয়েই চলে চায়ের কাপে ঝড়। আজ যে সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে এতো কথা হচ্ছে, আমার বিশ্বাস তা মূলত সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্নতা থেকে নয়। এখানে মূল আকর্ষণ তারেক মাসুদ ও তার মৃত্যুর পেছনে দায়ী এক্সিডেন্ট নিয়ে সৃষ্ট ঘোলা পরিবেশ। যেটা সৃষ্টি করেছে মিডিয়াগুলোই।
আমি নিশ্চিত আজকের ব্লগের এই চেচামেচি কোন কাজে আসবে না সড়ক নিরাপত্তা বাড়াতে। এই চেচামেচিগুলো পারবে না ঠেকাতে পরিমল, হাসানকে নারী বা ছাত্রী নির্যাতনকে, কিংবা পাবলিককে গণপিটুনি পরিহার করতে।
কিন্তু কেন?
কারণ আমাদের ঘাটতি রয়েছে আত্মার উন্নতির। যেটা আসতে পারে সঠিকভাবে ধর্মচর্চা আর বাস্তব জীবনের বিভিন্ন বিষয়গুলোর সংস্পৃষ্টতা থেকে। সেগুলোকে অনুভব করা থেকে।
আমাদের বাস্তব আর ভার্চুয়াল জীবনের মধ্যে সংযোগ ঘটাতে হবে। ফেইসবুকে, ব্লগে আমরা যা লেখি, পড়ি, সমর্থন করি তা আমাদের বাস্তব জীবনের সাথে তুলনা করতে হবে। এই আমরা যারা আজ সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে হইহই রইরই করছি এই আমরাই রাস্তায় গিয়ে ওভারব্রীজ রেখে রাস্তার মাঝখান দিয়ে দৌড়াব। শুধু একা নয়, সন্তান, ভাই-বোন নিয়েই।
ফেসবুকে "সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি।
" স্ট্যাটাস দিয়ে ৫ মিনিটের রাস্তা ৪ মিনিটে পাড়ি দিতে গিয়ে গতিসীমা লংঘন করব। ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দরী ছাত্রীটির দিকে বেশি মনোযোগ দিব; শিক্ষক বা ছাত্র দুই হিসেবেই। অথচ হয়তো একটু আগেই "আমরা হিজাব ভালবাসি" পেইজে লাইক করে কমেন্টও দিয়ে এসেছি।
আমাদের সমস্যা হচ্ছে এখানেই। আমরা প্রবৃত্তি আর হুজুগের অনুসরণ করছি।
এটা বাদ দিয়ে আমাদের পরমাত্মার অনুসরণ করতে হবে। বাস্তবতার ভিত্তিতে আমাদের সবকিছু বিবেচনা করতে হবে। তবেই আমাদের এইসব প্রচেষ্টা সফল হবে।
লম্বা একটা লেকচার দিয়ে দিলাম মনে হয়। যারা কষ্ট করে এতোটুকু পড়েছেন তাদেরকে অনেক ধন্যবাদ।
যাই হোক, আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।