আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উৎসব আনন্দে জেগে উঠা একটুকরো ঝলমলে স্মৃতি

বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা, আমরা তোমাদের ভুলবো না...

একেবারে দোরগোড়ায় এসে কড়া নাড়ছে বহু আকাঙ্খিত ঈদ। দেখতে দেখতে এবছরের মাসব্যাপী রোজাও শেষ হয়ে গেলো। দেশের ধনী, গরীব যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী ঈদের আনন্দে যোগ দেবার প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হবার পথে। এই দূরপরবাসে ঈদের তেমন কোনো প্রস্তুতির উপস্থিতি নেই...তবে এই মায়াজালের কারনে ঈদের খুশির ছিটেফোঁটার কিছুটা এসে গায়ে লাগছে...এখন খুশি বলতে সেই পুরনো একটুকরো স্মৃতি...সেটাই সযতনে রেখেছি এক কোনে...আজ সেই ঝাপি খুলে একটু আনন্দের পরশ খোঁজা... ----------------------------------- বাবা কৃষিবীদ হবার দরুন এবং চাকুরীর সুবাদে আমার শৈশব আর কৈশোরের বেশিরভাগ সময়ই কেটেছে খামারবাড়ীতে...খামারবাড়ীগুলো ছিলো জেলা শহর থেকে কিছুটা দূরে গ্রাম ঘেষে...বাসার সামনে-পিছনে দুপাশেই বিশাল বড় বড় মাঠ...একটু সামনে এগিয়ে গেলেই মসজিদ সংলগ্ন ঘাট বাঁধানো পুকুর...সবচেয়ে মজার আনন্দের উৎস ছিলো ঐ পুকুরটা...এমনিতে প্রতিদিন নামার অনুমতি মিলতো না...অনেক ফন্দিফিকির করে সেটা পেতে হতো....পাঁচ, ছয়জনের একই বয়সি গ্রুপ ছিলো আমাদের...সবাই মিলে একজনের বাসায় যেয়ে বলতাম আন্টি, আমার আম্মা পারমিশান দিয়েছেন, ওকেও যেতে দিন...সাথে সাথে আন্টি রাজি হয়ে যেতেন...কিন্তু আসলে তখনও আম্মার কাছ থেকে পারমিশান নেয়া হয়নি..এভাবে একে একে সবার বাসায় যেয়ে অনুমতি নিয়ে তারপরে নামা যেতো.... ট্রাকের পাংচার হয়ে যাওয়া চাকা, জোড়াতালি দিয়ে ফুলিয়ে টিউব বানিয়ে একটাতেই ছয়জন উঠে বসা, সাথেসাথেই উল্টে পানিতে পরে যাওয়া...আবার উঠার চেস্টা...আরও কতরকমের খেলা পানিতে ভেসে ভেসে.. সেই নির্মল আনন্দটা একদম কোনো বাধা নিষেধ ছাড়াই অনেকটা সময় ধরে উপভোগ করা যেতো শুধুমাত্র দুই ঈদের দিনে...আর তাই কতদিন ধরে প্রতিক্ষায় থাকতাম কবে আসবে ঈদ... একটু ছোটবেলায় আব্বা নামজ পড়তে যাবার সময় সাথে করে নিয়ে যেতেন আমাদের...শহরের ব্ড় ঈদগাহে নামাজ পড়তে যাওয়া হতো ট্রাকে করে সবাই মিলে...বড়রা নামাজ পড়তো আর সেইসময় আমরা ট্রাকের উপরেই লাফালাফি শুরু করে দিতাম... ফেরার সময় সাথে করে কাচের ছোট ছোট রঙিন পাখি একসাথে তিনটা চারটা জোড়ালাগানো তার ভিতরে জরি দেয়া..কাঁচের স্টিক, উপরনীচ ঘুরালে চিকমিকে তরলটা একদিক থেকে আরেকদিকে আসতো...কি যে মজা লাগতো দেখতে..আহ!! সেই রঙীন আনন্দ এখন আর কোনো কিছুতেই পাওয়া হয়ে উঠে না... কলোনীতে সাধারনত একজন যা করতো, দেখা যেতো সবাই সেটা করা শুরু করেছে...একবার আমাদের চেয়ে একটু বড় এক ভাইয়া, জুতার প্যাকেটের উপরে রঙীন কাগজ মুড়িয়ে ভিতরে একটা ডিম লাইট সেট করে প্যাকেটের উপরের পার্টে ঈদমোবারক লিখে ঘরে ঢোকার দরজার উপরে লাগালেন...সেটা দেখে আমাদের সবার তখন একটাই ভাবনা যেভাবেই হোক ওটা বানিয়ে আমাদেরও লাগাতে হবে...ঈদের আগের দিন বানানোও হলো আবার কিভাবে যেনো স্টাটার্স সেট করে জ্বলা-নিভা সিস্টেম করা হলো...উহ!! তখন যেনো আর আনন্দ ধরে না...কখন সন্ধ্যা হবে আর ওটা দরজায় লাগিয়ে জ্বোনাকির মতো ঈদমোবারক জানাবে... আর চাঁদ দেখার জন্য সবাই মিলে একবার এই মাঠ থেকে দৌড়াতে দৌড়াতে ঐ মাঠে...কে সবচেয়ে আগে দেখবে সেই প্রতিযোগিতায়...দেখার সাথে সাথে চিৎকার করে সবাইকে জানানো....কিছু বাজিও ফুটাতো ভাইয়ারা...কোনোবার তাৎক্ষনিক ভাবে সবার বাসা থেকে চাল, ডাল, ডিম সংগ্রহ করে ছোটখাট পিকনিক হয়ে যেতো...সেইসাথে একটু পর পর এসে জামা জুতো দেখে যাওয়া ঠিকঠাকমতো লুকোনো আছে কিনা... রাতে ঠিকমতো ঘুম হতো না, অতিরিক্ত আনন্দে..সকালে গোসল শেষে নতুন জামা কাপড় পরে সবার বাসায় যেয়ে সালাম করে সালামী সংগ্রহ করা, কার জামা কেমন হলো সেটা দেখা...পালাক্রমে সবার বাসায় যেয়ে সেমাই খেয়ে, বেড়িয়ে পরা সারাদিনের জন্য সবাই মিলে ঘুরাঘুরিতে...সেই সাথে সালামীর টাকা দিয়ে যা খুশি তাই কিনে খাওয়া...রাতে ক্লান্ত হয়ে ফিরে আনন্দটাকে হাতের মুঠোয় ভরে ঘুমোতে যাওয়া... ________________________ সবাইকে ঈদ মুবারক।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.