আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সংস্কৃতির উৎসব, উৎসব পালনের সংস্কৃতি

.......অতঃপর মৃত্যুর প্রতীক্ষা

পয়লা বৈশাখের ভোজ হিসেবে পান্তা-ইলিশের বাইরে বিকল্প কিছু বের করা সম্ভব হয় না। মুসলিমদের কুরবানির ঈদে গরুই দিতে হবে, তা না হলে যেন কুরবানি আর ধর্ম ভিত্তিক সামাজিক উৎসব কোনটাই পালন সম্ভবপর নয়। এখানেও দেখি, হ্যাম ছাড়া বড়দিনের উৎসবে 'কী যেন নাই', 'কী যেন নাই' ভাব। শুধু ছাগল কুরবানিটা নিচু জাতের লোকদের জন্য। অথবা যারা ঘুষ খোর কর্মচারীর হালাল উপার্জনের সাথে সখ্যতা করে গরুর ভাগায় শরীক হবার সামাজিক উৎসবে যোগ দিতে পারেন না তাদের জন্য খাসি ভাগ্য।

অথবা গরু কেটে ধর্ম পালনের পরেও এক মাসে বাড়তি রসনা যোগাতেও একটা খাসি ম্যা ম্যা করতে শোনা যায়। প্রবাসে দেখি বড়দিন গুলোতে ঠান্ডার চোটে মানুষ গৃহবন্দী হয়ে উৎসব করে। পালনের পরিসরটা বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের বাইরে প্রতিবেশি বা আরো বৃহত্তর দিকে যায়না। ঘরেই কেক কেটে, গাছে আলো বাতি ঝুলিয়ে শান্তিপূর্ণ ধর্ম-উৎসব-ভোজ চলে। ক্রিসমাস ইভের সন্ধ্যার আগেই দোকান-পাট বন্ধ করে ঘরে বসে উৎসব পালনের প্রস্তুতি নেয়, আমাদের চান রাতের মত কিছু নেই এখানে।

ঠিক তখনই উপলব্ধি করি বাইরে এসে খোলা আকাশের নিচে জড়ো হয়ে উৎসব করার একটা চাহিদা, সকলকে পাশে নিয়ে, সশব্দে । শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত সদলবলে হাটাটা ক্লান্তিকর লাগার কথা নয়, শুধু মাত্র উৎসবের আমেজের কারণে। মানুষ, রঙ, মানুষর শব্দ, সূর্য, সজ্জা- জিনিস গুলো না দেখলে সেটিকে উৎসব নাম দেয়া অসম্ভব মনে হয়। দুর্ভাগ্যবশত, এই উপলব্ধিটা স্বদেশে থাকার সময় ছিলনা। আবার সৌভাগ্যবশত উৎসব পালনের সংস্কৃতিগত ফারাকটা দেখে একটা সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব হয়েছে।

রথ যাত্রা, দোল উৎসবের মত মিছিল বা খোলা আকাশের নিচে সমাবেশের প্রয়োজনীয়তাটা এদের বুঝানোর চেষ্টা করি। "উড ইউ লাইক টু হ্যাভ ক্রিসমাস ইন সামার? ইউ বেটার মেইক এ ট্রিপ টু অস্ট্রেলিয়া টু হ্যাভ এ ডিফরেন্ট ফ্লেভার । " কিন্তু অভ্যেসগত কারণে শীত বা বরফের বাইরে ক্রিসমাস পালনের কথা এরা ভাবতে পারনো, ঘর বন্দী উৎসব পালনেই এদের সুখ। দেশে থাকার সময় পয়লা বৈশাখের ভিড়ে বের হওয়াটা স্বস্তিদায়ক ছিলনা। মানুষের মাঝে উৎসব বলে আলাদা "জীবনাচার পালনের" বাড়তি উৎসাহ থাকে।

অন্তত একটা ছুটির দিন, বিশ্রাম, ভোজ বা বাইরে যাবার উপলক্ষ। গেও গেরামে মেলা ছাড়া বাড়তি কিছু আকর্ষণ ছিলনা। মাটির খেলনা, বাতাসা না পেলে ছোটদের উৎসব গুলো পুরোটাই অন্ধকার হয়ে যেত। এপ্রিল মাসে তরমুজ হয় বলে সাথে দৈ চিড়া যোগে ফলাহার করে উৎসব করা যায়। তাই তখন, বন্ধুদের ভদ্রতার থাতিরে করা, "নববর্ষ কেমন কাটল, কী পরিকল্পনা?"র জবাবে একটা স্বস্তিদায়ক উত্তরও দেয়া যায়।

অন্তত হ্যালুইনে কী সাজলে বা ক্রিসমাসে ঐমুক প‌্যান কেইক বানিয়েছিলে কিনার জবাবে "প্রশ্ন এড়ানো উত্তর" দিবার প্রয়োজন হয়না। এখন তাই ইচ্ছে হয়, পয়লা বৈশাখে রমনা থেকে টিএসসির ভিড়ে সদলবলে হাটতে, মানুষের সুখী রঙিন মুখ দেখতে। যেকোন বছরে এই দিনটিতে সূর্যের তাপদাহ থাকে, গলা শুকায়। তারপরেও গরমে রাস্তায় দাড়িয়ে সফেদ পাঞ্জাবি-শাড়ি জোড়া গুণতে ইচ্ছে হয়। প্রবাসে থেকে ধর্ম সংস্কৃতির ক্ষুধাগুলো এভাবেই চাড়া দেয়।

কিন্তু পুরনো অসামাজিকতার জঙ্গলা খাদে পড়ে উঠে দাড়াবার মত মানসিক শক্তি পাইনা, কেউ উঠে আসার জন্য হাতও বাড়ায়না। দানা পানি নিয়ে পোকা মাকড়ের মত বেঁচে থাকি জঙ্গলা খাদে, করুণা পাবার মত এখনও অনেক অভুক্ত মানুষ আছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।