আমি জানি ভাল কিছু করার মাঝে প্রকৃত আনন্দ । আমি সব ভালদের সঙ্গী হতে চাই।
ঈদের শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় আগের জৌলুস আর নেই। এর কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা মনে করেন মানুষের কেনাকাটার ধরন বদল। এক সময় ঈদের কয়েকদিন আগে থেকে নতুন জামাকাপড়সহ সংশ্লিষ্ট পণ্যসামগ্রী কেনার প্রবণতা থাকলেও সাম্প্রতিক বছরে ভিড়সহ অন্যান্য বিড়ম্বনা এড়াতে মাস খানেক বা তারও আগে থেকে ধীরে ধীরে তা শেষ করার মানসিকতা গড়ে উঠেছে।
শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের পদচারণায় এখনও বিপণীবিতানগুলো তুলনামূলক সরগরম রয়েছে।
রহমত, মাগফিরাত ও নাযাতের মাস পবিত্র রমযান এখন শেষের দিকে। আগামী সোমবার বা মঙ্গলবার উদযাপিত হতে যাচ্ছে মুসলমানদের প্রধান দু ধর্মীয় উৎসবের একটি- পবিত্র ঈদুল ফিতর। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম পালনের পর পালিত হয় বলে এটি ‘রোজার ঈদ' হিসেবে সমধিক পরিচিত। এ ঈদের আনন্দ মূলত নতুন নতুন পোশাক পরা ও ভালো ভালো খাবার খাওয়া।
এ উপলক্ষে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনকে বাড়িতে দাওয়াত করা হয়। আমাদের সমাজে প্রচলিত রেওয়াজ হলো- রোজার ঈদের দিন দাওয়াতে অংশ নেয়া।
রাজধানীর ফুটপাত থেকে অভিজাত বিপণী পর্যন্ত ক্রেতা সংখ্যা অনেক কম। বিশেষ করে গত বুধবার পর্যন্তও বস্ত্র, জুতা, কসমেটিকস ইত্যাদির দোকানে সকাল থেকে রাত অবধি প্রচন্ড ভিড় থাকতো। দু'দিন সাপ্তাহিক বন্ধের কল্যাণে ঈদের ছুটি একটু আগেই শুরু হওয়ায় সে সুযোগে অসংখ্য নাগরিক সপরিবারে ঢাকা ত্যাগ করেছেন।
চলে গেছেন প্রিয় সান্নিধ্যে ঈদ করবার জন্য। গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই বাংলাদেশের প্রাণকেন্দ্র ষোল কোটি মানুষের স্বপ্নের নগরী ও বিশ্বের অন্যতম জনবহুল শহর ঢাকা ফাঁকা হতে শুরু করে। এর প্রভাব পড়েছে মার্কেটগুলোতেও। মৌচাক মার্কেটের কুমারর্স এক্সক্লুসিভ শাড়ির দোকানের বিক্রয়কর্মীরা হতাশার স্বরে জানান, বেলা সাড়ে ১২টা বাজলেও কোন বউনী হয়নি। অথচ গত প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে দম ফেলারও সুযোগ পাওয়া যায়নি।
অবশ্য তারা মনে করেন, গ্রামের বাড়ি চলে যাওয়ার পাশপাশি অনেকে আগের রাত জেগে পবিত্র লাইলাতুল ক্বদরের এবাদত-বন্দেগী করে ঘুমিয়ে পড়ায় সকাল বেলা চরম মন্দা যাচ্ছে। বিকেলের দিকে বেচাকেনা ভালো হবে বলে তারা আশা করেন। গুলিস্তানে জিপিও'র সামনে ফুটপাতে পাঞ্জাবি বিক্রেতা শাহালম ও সবুজ ‘একদাম দুইশ (টাকা)' বলে গলা ফাটাচ্ছে। কিন্তু কোন ক্রেতা নেই। পথচারীও তেমন চোখে পড়লো না।
পাশে যানবাহন বিকট হর্ন বাজিয়ে বীরদর্পে গন্তব্যে যাচ্ছে। তারা অনেকটা কষ্টের সাথে বলেন, ‘পাবলিক কি সব দ্যাশে চইলা গ্যাছে। ব্যবসা না অইলে বউ-পোলাপান লইয়া ঈদ করমু ক্যামনে। ' টুপি-আতরের কদর এখনও কমেনি।
ঈদে সেমাই, ফিরনী, পোলাও-গোশতসহ মুখরোচক ও দামি খাবারের সমাহার থাকে প্রতিটি ঘরে।
এর আয়োজন সম্পন্ন করতে পূর্বাহ্ন প্রস্তুতি অনেকের ইতোমধ্যে শেষ হলেও বাকিদের মাঝামাঝি বা একেবারেই হয়নি। অস্বাস্থ্যকর উপায়ে তৈরিকৃত বাহারী ব্র্যান্ডের লাচ্ছা ও স্টিক সেমাইয়ের ছড়াছড়ি বাজারে। বনফুল, আলাউদ্দিন, কুলসুন ইত্যাদি ব্র্যান্ডের প্যাকেটজাত সেমাইয়ের মান উন্নতমানের দাবি করা হলেও দাম সাধারণের নাগালের মধ্যে নেই। চিনির দাম খুচরা রেকর্ড ৬২ থেকে ৭০ টাকা হওয়ায় অনেকেই নিয়ন্ত্রিত মূল্যে পেতে টিসিবি'র গাড়ির সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে অপেক্ষা করছে। গোশতের দামও গরু, মহিষ, খাসি ও মুরগি কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে।
তারপরও অনেকেই গতকাল সামর্থ্য অনুযায়ী গোশত কিনে রেখেছেন। মসলার মধ্যে এলাচীর দাম কেজি প্রতি ২শ' টাকা বেড়েছে। গরম মশলার অন্যতম এই উপাদানটি ছাড়া অন্যান্য মশলার দাম আগের মতোই রয়েছে। মশলার দোকানে অনেকেই ঈদের শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা সারছেন।
আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কেনাকাটা এখন পুরোদমে চলছে।
পুরান ঢাকার শাঁখারী বাজার থেকে শুরু করে বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্স, ইস্টার্ন প্লাজাসহ গুলশান, বনানীর অভিজাত বিপণী কেন্দ্রসমূহেও হিন্দু সম্প্রদায়ের নানা বয়সের মানুষের পদচারণা বেড়েছে। বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে পূজার কেনাকাটা করতে আসা ভিসাকা দে বললেন, তিনি সবার আগে জুতা কিনেছেন। একটি লেহেঙ্গা কিনতে ওয়ারী থেকে এসেছেন। তিনি ভারতে পড়াশোনা করেন। পরিবারের সাথে পূজা উদযাপনের জন্য তিনি সম্প্রতি দেশে এসেছেন এবং বাংলাদেশের তৈরি পোশাকই তার পছন্দনীয়।
ওয়াকিবহাল মহল বলছেন, দীর্ঘ দু'বছরের জরুরি শাসনামলের পর রাজনৈতিক সরকারের আমলে এটি প্রথম ঈদ ও পূজা হবে। সেনা সমর্থিত বিশেষ ধরনের সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও গণতন্ত্রের অনুপস্থিতিতে জনমনে স্বস্তি ছিল না। দুর্নীতি দমনের নামে ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার, নিপীড়ন ও হয়রানির অধ্যায়ের অবসান ঘটায় এবার ঈদ ও পূজা উপলক্ষে বাজারে টাকার প্রবাহ অনেক বেড়ে গেছে। এতে করে দোকানীরাও বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। তারা আরো বলছেন, অনাকাঙ্ক্ষিত ভিড়-বিড়ম্বনা এড়াতে মানুষ আগে ভাগেই ঈদ কেনাকাটা করায় বিপণী কেন্দ্রগুলোতে যেমন চাপ কম পড়ে, তেমনি অনেক দুর্ভোগ থেকেও নাগরিকদের রেহাই মেলে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।