আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কম্বোডিয়ার আঙকর ওয়াট

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ
আঙকর ওয়াট। আসলে এটি বিষ্ণু মন্দির। গড়ে উঠেছিল কম্বোডিয়ার খেমার হিন্দু রাজা ২য় জয়বর্মন-এর আমলে।

চতুর্দিকে পরিখা বিশিস্ট আঙকর ওয়াট আজও জগতের অন্যতম ধর্মস্থান বলে স্বীকৃত। আঙকর ওয়াট-এর অবস্থান কম্বোডিয়ার উত্তরে। সিয়াম রিয়াপ-এ। আঙকর প্রদেশের রাজধানী সিয়াম রিয়াপ। আঙকরই ছিল প্রাচীন খেমার সাম্রাজ্যের রাজধানী।

কম্বোডিয়া দেশটির অধিবাসীরা প্রধানত খেমার। নবম থেকে ত্রয়োদশ খেমার সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছিল। খেমার সাম্রাজ্য রাজধানী ছিল আঙকর । আঙকর শব্দটি সংস্কৃত নগর শব্দ থেকে উদ্ভূত। সংস্কৃত কেন? বানিজ্য ও অন্যান্যসূত্রে ভারতীয় বৈদিক ধর্ম কম্বোডিয়া অবধি ছড়িয়ে পড়েছিল -খেমার জনগন সে ধর্ম গ্রহনও করেছিল।

আর, সেটিই ছিল স্বাভাবিক। কেননা, এর আগে কম্বুজদেশায় (কম্বোডিয়ার পুরনো নাম) জনগন ছিল সর্বপ্রাণবাদী; অর্থাৎ তারা animism এ বিশ্বাসী ছিল। অপরদিকে ভারতীয় বৈদিক ধর্মটি বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে বহু ঈশ্বরবাদী হলেও এর মূলে রয়েছে একেশ্বরবাদ। আর বিশ্বের ইতিহাস এই সাক্ষ্যই দেয় যে-দীর্ঘকাল কোনও মানবসংস্কৃতিই (একেবারে সভ্যতার মূলস্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন না-হলে) সর্বপ্রাণবাদী হয়ে থাকতে পারে না-মানবসংস্কৃতিকে একেশ্বরবাদী ধ্যানধারনা গ্রহন করে। মানবচেতনার বিকাশের জন্যই এমনটা ঘটে বলে মনে হয়।

কম্বোডিয়াতেও তাইই হয়েছিল। মানচিত্রে ভারত। পুবে কম্বোডিয়া। দক্ষিণ ভারত থেকেই কম্বোডিয়ায় মূলত ওই ভারতীয় বৈদিক সাংস্কৃতির সম্প্রসারণ ঘটেছিল। খেমার সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন প্রবল প্রতাপশালী রাজা ২য় জয়বর্মন।

সময়টা, পন্ডিতগনের মতে, ৮০২ খ্রিস্টাব্দ। অর্থাৎ নবম শতক। ২য় জয়বর্মন ছিলেন হিন্দু-বৈষ্ণব। খেমার রাজা ২য় জয়বর্মন তিনি আঙকরে একটি বিষ্ণু মন্দির নির্মান করার ইচ্ছে পোষন করেন। বিশাল এলাকা নিয়ে পরিখা ঘেরা সুবিশাল কর্মযজ্ঞ আরম্ভ হল।

আমরা আঙকর ওয়াটের এই ছবিটি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলেই উপলব্দি করতে পারব খেমার রাজা ২য় জয়বর্মন এর মহত্ব; যেহেতু তিনি ওই বিশাল কর্মযজ্ঞের ছিলেন প্রধান পুরোহিত। এই ছবিটি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলে আমরা শ্রদ্ধায় অবনত হব নবম শতাব্দীর খেমার কারুশিল্পীদের প্রতি ... একসময় সমাপ্ত হল সেই বিষ্ণু মন্দির। কম্বোডিয়ার লোকে বলল আঙকর ওয়াট। ওয়াট মানে খেমার ভাষায় মন্দির। আঙকর ওয়াট মানে আঙকরের মন্দির- বিষ্ণু মন্দির।

আঙকর ওয়াট। অনেক ওপর থেকে দেখা অনেক ওপর থেকে দেখা আঙকর ওয়াট এর আরেকটি ছবি। আঙকর ওয়াট। একালের শিল্পীর তুলিতে। পরিখা ও কজওয়ে (সেতু); এই ছবিটি খেমার রাজা ২য় জয়বর্মন এর মহত্ব আরও স্বচ্ছ করে তোলে।

মনে রাখতে হবে আঙকর ওয়াট মূলত বিষ্ণু মন্দির। বিষ্ণু বাংলায় আজও আদৃত ও পূজনীয়। কেননা, মথুরা-বৃন্দাবনের শ্রীকৃষ্ণ কৃষ্ণ হলেন বিষ্ণুর অবতার। আর বাংলার শ্রীচৈতন্যদেব হলেন কৃষ্ণের অবতার। ভিতরে ভিতরে ভিতরে ভিতরে এবার বলি।

ত্রয়োদশ শতকে শ্রীলঙ্কা থেকে বৌদ্ধধমের থেরবাদী ধারাটি পৌঁছেছিল কম্বোডিয়ায়। এবং কম্বোডিয়ার জনগন সে ধর্মটি গ্রহনও করেছিল। খেমার রাজা ৭ম জয়বর্মনের (ইনি বৌদ্ধ ছিলেন। ) আমলে আঙকরেই গড়ে উঠেছিল বৌদ্ধমন্দির। ।

আঙকর থোম এর বেয়ন বৌদ্ধমন্দির নিয়ে আমি গতকালই লিখেছি। এই ছবিটি আঙকর ওয়াট এবং আঙকর থোম এর বেয়ন বৌদ্ধমন্দির পার্থক্য বুঝতে সাহায্য করবে। আরও সহজ করে বলি। আঙকরের হিন্দু ও বৌদ্ধ মন্দির দেখতে হলে আপনাকে প্রথমে যেতে হবে কম্বোডিয়ায় । নামতে হবে কম্বোডিয়ার রাজধানী নম পেন বিমানবন্দরে।

তারপর আপনি নম পেন থেকে যাবেন কম্বোডিয়ার উত্তরের সিয়েম রিয়াপ। ওখানেই রয়েছে খেমার হিন্দু রাজা ২য় জয়বর্মন নির্মিত বিষ্ণুমন্দির আঙকর ওয়াট এবং খেমার বৌদ্ধ রাজা ৭ম জয়বর্মন নির্মিত আঙকর থোম এর বেয়ন বৌদ্ধমন্দির ...
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।