উন্মাদ খুলির পৃষ্ঠাগুলি
প্রথম পর্ব
লালন ফকির। এই নাম কারো অজানা নয় এখন। আমার কাছে লালন ফকির পুরোপুরি চেনা না। অর্ধ চেনা। তাঁর পুরো অবয়ব আমি আমার চেতনার রঙে দেখতে পারিনা, দেখার চোখ আমার অর্ধকানা।
কিভাবে লালনকে দেখবো - অর্ধকানা চোখে - তাই ভাবি। আমার ভাবনার সব জায়গা জুড়ে লালন নাই কেনো? এইটা লালন ফকিরের কোন কারসাজি নাকি? ভাবি, আমি এই নিয়ে। তাঁর জন্মবৃত্তান্ত নিয়ে ঠুলিপরা চশমারা দিস্তার পর দিস্তা কাগজ শেষ করছে, আমার করুণা হয় তাদের জন্য। অর্ধকানা যদিও, তবু ঠুলিপরা চশমার ভিতর দিয়ে লালনকে দেখা সম্ভব নয়। এই আমি ভাবি।
তাঁর গানই আমার কাছে মুখ্য। তাঁর গানের ভিতর দিয়ে তাকে অবলোকন করা জরুরি। বাংলা সাহিত্য ও সংগীতের ইতিহাসে তাকে স্থাপন করতে হবে তাঁর গানে জলমগ্ন হয়ে। গানের ভিতর দিয়ে জীবনকে কি দেখা যায়, সমাজকে কি অবলোকন করা যায়? সমাজের মানুষকে কি পড়তে পারা যায়? আমি লালনের গান নিয়ে যখন ভাবি তখন মনে হয় লালনের গানের ভিতর দিয়ে এসব করা যায়। খুব সহজ নয় তা।
কিন্তু তা করা যায়। এজন্য সে মুসলমান না হিন্দু, কোন পরিবারে, কোন পরিবেশে তাঁর জন্ম তা জানার কোন দরকার হয়না।
লালন ফকিরের প্রতিভা ছিল প্রকৃতির মতো। সবুজ। ঘাসের ডগায় বৃষ্টির পানিতে ভিজে ওঠা রোদের মতো তাঁর প্রতিভার স্ফূরণ তাঁর গানে গানে আমরা পাই।
সে যে গান বেঁধেছেন তার বিষয়-মাহাত্ম অনন্য, ভাষার সাবলীলতা সকল মানুষের অন্তরে সুরের এক মহাজাগরণ তোলে, তাঁর প্রকাশভঙ্গির সুড়ঙ্গে আমাদের জীবনবোধের অন্ধকার চিরে চিরে যেন আমাদের প্রাকৃতরূপকে উপলব্ধি করতে পারি। আমার তাই মনে হয়। তাঁর গান সকল শ্রেণির মানুষকে আকৃষ্ট করতে পারে এর কারণ লালন ফকিরের ভাষা আমাদের নিকটের ঘ্রাণে লেপটে আছে।
আমার প্রিয় একটি গান তুলে দিচ্ছি
এ গোকুলে শ্যামের প্রেমে কেবা না মজেছে সখি।
কারও কথা কেউ বলে না, আমি একা হই কলঙ্কী।
।
অনেকেতে প্রেম করে
এমন দশা ঘটে কারে
গঞ্জনা দেয় ঘরে পরে
শ্যামের পদে দিয়ে আঁখি। ।
তলে তলে তল গোজা খায়
লোকের কাছে সতী বলায়
এমন সৎ অনেক পাওয়া যায়
সদয় যে হয় সেই পাতকী। ।
অনুরাগী রসিক হলে
সে কি ডরায় কুল নাশিলে
লালন বলে, ফুটকি খেলে
ঘোমটা দেয় আর চায় আড়চোখী। ।
এই গানটা বহু জায়গায় গেয়েছি। আমার মতো করে। গাওয়ার সময় আমি টের পেয়েছি যে আমার শরীরের ভিতর এক অনন্য হাওয়ার ঝাপটা এসে লাগছে।
আমি সেই ঝাপটায় মিশে যাচ্ছি। জীবনের এক গহীন জঙ্গলে যেন আমি মিনতির সকল অর্ঘ্যের সামনে খুলে খুলে পড়ছি...
হাততালির শব্দ আমি শুনতে পাচ্ছি না...
চলবে...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।