সিলেট ক্রমে ফাঁকা হয়ে গেলো, এখন নেতা বলতে শুধু এক মুহিত। ব্যক্তিত্বে কৃতিত্বে যাঁরা ইতিহাসের অংশ হয়ে উঠেছিলেন, একে একে সবাই চলে যাচ্ছেন। অভিভাবকহীন সিলেট নতুনদের টেনে এনে কবে সেই শূন্যতা পূরণ করতে পারবে, এখন তারই অপেক্ষা।
সাইফুর রহমানকে কেনো এতো আপন মনে হতো, জানি নে। তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি।
নিচের লেখাটুকু আজকের সমকাল উপসম্পাদকীয় থেকে উদ্ধৃত। মন্তব্যকারীদের প্রতি আগাম নিবেদন, এ লেখায় স্বাভাবিকভাবেই বিএনপির কথা এসেছে, তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য নই, কখনো ছিলামও না। কাজেই দলীয় ক্ষুদ্র দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আক্রমণ প্রত্যাশা করি না। গতকাল ব্লগে বৈকুণ্ঠ নামে একজন সাইফুর রহমান সম্পর্কে এতো কুরুচিপূর্ণ পোস্ট দিয়েছেন, যা খুবই নোংরা মানসিকতার পরিচায়ক। আমরা সিলেটবাসী সাইফুরকে ভালোবাসি।
তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা!
*** ***
'...যতদূর মনে পড়ে, স্বাধীনতার পর এক ডিনার পার্টিতেই মেজর জিয়াউর রহমানের সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাৎ। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার পাল্টা বিপ্লবে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। এর মধ্যে '৭৬ সালের প্রথম দিকের ঘটনা। উপ-সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল জিয়া মাঝে মধ্যে আমাকে চা খেতে ডাকতেন। একদিন জিয়া আমাকে বললেন, 'বাইরে থেকে এসব পরামর্শ দিয়ে কোনো লাভ নেই।
আপনি উপদেষ্টা কাউন্সিলে যোগ দিন। ' আমি তাকে বললাম, 'এটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। ' মিলিটারি প্রশাসন সম্পর্কে আমার গভীর অনীহা আছে বলে তাকে জানালাম। কয়েকদিন পর জেনারেল জিয়া চায়ের আমন্ত্রণে ডেকে আমাকে সরাসরি বললেন, 'আপনাকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব দিতে চাই। ' আমি বললাম, 'আপনার প্রস্তাবে সম্মত আছি।
তবে বেশিদিন আমি এ দায়িত্ব পালন করতে পারব না। ' জিয়া বললেন, 'আপনাকে বেশিদিন থাকতে হবে না। খুব শিগগির নির্বাচন দিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু করা হবে। ' অতঃপর '৭৬ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষদিকে আমি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে উপদেষ্টা পরিষদে যোগ দেই।
'৮২ সালের ২৪ মার্চ জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা নিয়ে ৭ মাস আমাকে জেলে রাখলেন।
জেল থেকে বেরিয়ে আমি ও চৌধুরী তানভীরসহ কয়েকজন খালেদা জিয়াকে রাজনীতিতে আসার জন্য উদ্বুদ্ধ করি। তবে প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান বিচারপতি সাত্তারকে বিএনপির চেয়ারম্যান করতে সমর্থন অব্যাহত রাখেন। খালেদা জিয়া রাজি না থাকলেও আমরা কয়েকজন তাকে চেয়ারপারসন প্রার্থী হতে রাজি করাই। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আমরা স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন শুরু করি। অল্পদিনে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক বক্তব্য
দেওয়ার ক্ষেত্রে পরিপক্কতা এসে যায়, যা অনেক পুরনো নেতাও পারেন নি।
এরশাদ খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দি করে আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করেন; পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে '৮৬ সালে সিট ভাগাভাগির নির্বাচন করেন। শহীদ জিয়ার অবর্তমানে খালেদা জিয়া বিএনপিকে জনগণভিত্তিক দল হিসেবে গঠন করতে সক্ষম হন। আমি মনে করি, বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশি-বিদেশি নানামুখী যে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে তা এখনও চলছে। ২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেনের জরুরি অবস্থা জারিও বিএনপির বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র। বিএনপিকে ক্ষমতাহীন করা এবং ভেঙে দুর্বল করাই ছিল ষড়যন্ত্রকারীদের মূল লক্ষ্য, যাতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী বিএনপি আর ক্ষমতায় আসতে না পারে।
সেজন্য খালেদা জিয়াসহ অধিকাংশ নেতার বিরুদ্ধে নানা মামলা-মোকদ্দমা দিয়ে গ্রেফতার করে দলটিকে নেতৃত্বশূন্য করার ষড়যন্ত্র হয়। বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়াও ওই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। মান্নান ভূঁইয়া দলকে সংস্কারের কথা বললেও বাস্তবে তার কোনো জনসমর্থন ছিল না। আর তাই তার ষড়যন্ত্র সফল করতে আমাকে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার লোকদের দিয়ে চাপ সৃষ্টি করা হয়। জোর করে আমাকে বাড়ি থেকে তুলে মান্নান ভূঁইয়ার বাড়িতে এবং কমিউনিটি সেন্টারে কয়েকটি মিটিংয়ে নেওয়া হয়।
এমনকি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের উপস্থিতিতে আমার বাড়িতে কথিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিএনপিকে ভাঙার ষড়যন্ত্র করেছিলেন, যা শেষ পর্যন্ত আমি বানচাল করে দিয়েছি। পরিশেষে আমি বলতে চাই, শহীদ জিয়ার পার্টিকে টিকিয়ে রাখার জন্য সিনিয়র নেতাদের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। তাদের মূল্যায়নের ভিত্তিতে দলের পলিসি নির্ধারণ করতে হবে। 'মানি না, জানি না' হুজুগের ওপর ভিত্তি করে দল চলতে পারে না। আসল কথা হলো, দলের লিডারশিপে আরও ম্যাচিউরিটি আনতে হবে।
তাহলেই দলের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।