অফিস গিয়ে দ্রুত কাজ গুছিয়ে নিলাম, সামনে তিনদিন থাকব না তাই আমার কাছে রাখা ফাইলগুলো সিনিয়র কলিগ জুয়েল ভাইকে (টিভি নাট্য অভিনেতা) বুঝিয়ে দিলাম এবং আমার প্লান ওনাকে জানালাম। জুয়েল ভাইয়ের অনাপত্তি আমাকে কিছুটা আশ্বস্ত করল। ব্যাংকের কাজ চটপট সেরে অফিসে আনা লাঞ্চ খেয়েই জর্জ কোর্টে হাজিরা আছে বলে স্যারের কাছ থেকে বিদায় নিলাম। যেহেতু আমার কোম্পানীর দায়ের করা পাঁচটি মামলার বাদি। স্যার কোন প্রকার ওজর আপত্তি ছাড়া শুধু একবার ক্যাক ক্যাক শব্দ করে ‘আচ্ছা যান’ বলে ঘাড় কাত করতেই আমি গুলির বেগে বেরিয়ে পড়লাম।
আমার ১১৫ সিসির মোটর সাইকেল পুরানা পল্টন হয়ে গোড়ান অভিমুখে কখনো ঘন্টায় ৩০ কিঃমিঃ আবার কখনো ৮০ কিঃমিঃ গতিতে ছুটে চলল। বাসায় সবকিছু গোছগাছ করাই ছিল শুধু আমার অপোয় টাইম পাস করা ছাড়া ওনাদের আর হাতে কোন কাজ নাই। উত্তেজনায় এ ঘর থেকে ও ঘরে নেংটি ইদুরের মতো দৌড় ঝাপ করছে আমার তিন বছর ছেলে ফাহিম। কখনো বা লাফদিয়ে উঠে পড়ছে মায়ের গোছানো লাগেজের উপর আবার কখনো বা দাদির ব্যাগ। এই নিয়ে চিৎকার চেচামেচি শুনতে শুনতেই আমার ঘরে প্রবেশ।
সময় প্রায় দুইটার কাঁটা ছুঁই ছুঁই ঝট পট দ্বিতীয়বারের মতো গোসল সেরে বেরিয়ে পড়লাম ফকিরাপুল সৌদিয়ার কাউন্টারের উদ্দেশ্যে। আব্বা-আম্মা এক রিক্সায়, ভাইয়া লাগেজপত্র নিয়ে অন্য রিক্সায় এবং ফাহিমকে নিয়ে আমরা উঠলাম তৃতীয় রিক্সায়। সবাইকে বলা আছে ফকিরাপুল গিয়ে নামবে। আমাদের রিক্স আগেই পৌঁছে গেল এর পর ছোট ভাইয়ারটা, কিন্তু আব্বাকেতো দেখতে পাচ্ছি না ! মনে হয় গুলিস্তানের দিকে চলে গেছে। একটু পরেই গাড়ি ছাড়বে, মনের মধ্যে এক বিরক্তিকর অনুভূতি; রিক্সাওয়ালাকে মনে হয় ঠিক মতো বলা হয়নি।
যেহেতু মোবাইলের যুগ অতি সহজেই লোকেট করলাম এবং রিক্সাওলাকে একটা ধাতানি দিয়ে আমাদের গাড়ির দিকে এগোলাম। এটি মূলত ছোট্ট একটা ফিডার পরিবহন বলা চলে, ফকিরাপুল থেকে কমলাপুর পর্যন্তই এটার গন্তব্য। গাড়ি চেঞ্জ করতে করতেই হঠাৎ করে ঝড় ছেড়ে দিল। ধুলার কবল থেকে বাঁচতে তড়িঘড়ি করে জানালা টানতে গিয়েও কিছুটা কমলাপুরের ফ্রেশ ধুলা হজম করতে হলো। বিরক্তিকর যানযট কাটিয়ে মেঘনা ব্রিজ পর্যন্ত যেতেই দু’ঘন্টা সময় পার হয়ে গেল।
গাড়ির কন্ডিশন বেশ ভাল; বিশেষ করে ঢাকা-বাগেরহাট রুটের গাড়ির তুলনায় অনেক বেশি ভালই বলতে হবে। আমরা সাধারনত ঐ রূটে পর্যাটক, সুন্দরবন কিংবা বনফুলের মতো গাড়িতে যাতায়াত করতে অভ্যস্ত। এই বিশেষ ধরনের পরিবহনগুলোর রয়েছে বিশেষ বিশেষ গুণ। যেমন ধরুন যাত্রাপথে একটু পরপর হেলপারের মুখে শুনতে পাবেন “এই বাগেরহাট; ডাইরেক্ট বাগেরহাট, সিট ফাঁকা আছে...............” ইত্যাদি ইত্যাদি। টু-পাইস কামানোর জন্য এই রূটের মতো আর দ্বিতীয়টি খুঁজে পাবেন না।
প্যাসেঞ্জারের গালি শুনতে শুনতে হেলপার এবং ড্রাইভারদের চেহারায় কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। ওরা কানে কম শোনে ওদের চামড়া গন্ডারের কাছাকাছি, ওদের অনুভূতি রোবকাফের মতো। আপনি মাওয়া ফেরি পার হয়েই দেখতে পাবেন গাড়ির সীটতো ফাঁকা নাই-ই উল্টে আপনার পাশে গাড়ির ঠিক মধ্যে লুঙ্গি পরা কোন ভদ্রলোক গাট্টি বোচকা নিয়ে মোড়ায় বসে আছে। ভাল করে ল্য করলে দেখতে পাবেন কোলের মধ্যে একজন নাতি বা পোতা ঠিকই বসা আছে আর তার হাতে বাংলা আইসক্রিম, চেটে চেটে খাচ্ছে আর রস গড়িয়ে আপনার হাটুতে পড়ছে !
চলবে................
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।