ইচ্ছে করে হারিয়ে যাই তোমার সীমানায়
দীর্ঘ আড়াইশ বছরে কত নতুন জাতির উত্থান হলো, কত পুরাতন জাতির পতন হলো, কত দেশ জন্ম নিল, পৃথিবীর কত বিবর্তন হলো, কত নতুন প্রযুক্তি সংযোজিত হলো- এক কথায় বলা যেতে পারে সারা দুনিয়ার কি আমূল পরিবর্তন হলো; কিন্তু সবচাইতে আশ্চার্যের বিষয় বাঙালির চারিত্রিক দোষ বা গুণাবলীর কোন পরিবর্তন হলো না। আপনারাই বলুন এটা কি এক অবিশ্বাস্য বিষয় নয়? সবকিছুরই পরিবর্তন, বিবর্তন হলো, শুধু হলো না আমাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের। কেন যে হলো না- এই কেন’র উত্তর কে দেবে? সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির দেশের মানুষ আমরা। আমাদের জন্য, আমাদের দেশের জন্য অন্য দেশের লোকেরা গর্ব করে এবং মনে করে যে এদেশের মানুষ হয়ে আমরা ধন্য ও আমাদের দেশ পুণ্য। কিন্তু বাস্তবে কি দেখছি আমরা?
আমরা যদি ব্রিটিশ শাসনামলের যুগের দিকে একটু ফিরে তাকাই, তা হলে আমরা দেখতে পাবো যে ১৮০১ সালে তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড ওয়েলেশলি বাংলার বিভিন্ন জেলার জজ ও ম্যাজিস্ট্রেটদের কাছে নতুন রাজস্ব ও বিচার ব্যবস্থার ফলাফল জানতে চেয়ে এক প্রশ্নাবলী প্রেরণ করেন।
প্রশ্নাবলীর একটি অংশে প্রত্যেক জেলার অধিবাসীদের নৈতিক চরিত্র ও স্থানীয় অপরাধ সম্বন্ধে তাদের অভিজ্ঞতা জানতে চাওয়া হয়েছিল। তারা যে জবাব পাঠিয়েছিলেন তা একত্রে সংকলিত করে তৎকালীন ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর পরিচালক চার্লস গ্রান্ট একটি পুস্তিকাকারে প্রতিবেদন তৈরি করেছিলেন। চার্লস গ্রান্ট এককালে লর্ড কর্নওয়ালিসের একান্ত সচিব ছিলেন। গ্রান্টের প্রতিবেদনে তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার বিভিন্ন জেলার অধিবাসীদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যও তুলে ধরা হয়েছিল। যাহোক ঐ অবিভক্ত বাংলার যে অংশটি এখন বাংলাদেশ বলে পরিচিত সে অংশেরই অধিবাসীদের সেই আড়াইশ বছর আগের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দু’চারটি বিস্তারিত লিখতে গেলে সংকুলান হবে না।
চার্লস গ্রান্ট ১৮২৩ সালে মারা যান কিন্তু তিনি রেখে গেছেন এক কালজয়ী বিবরণ ইতিহাসের পাতায় যার সাক্ষ্য পাওয়া যায়। চার্লস গ্রান্টের সেই ঐতিহাসিক সংকলিত প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, আড়াইশ বছর পূর্বে বাঙালি চরিত্রের বৈশিষ্ট্য ছিল যে তারা ছিল অসৎ, ফাঁকিবাজ, প্রতিহিংসা পরায়ণ, অকৃতজ্ঞ, লোভী, ঠকবাজ, হঠকারী, জাল-জালিয়াতি, হত্যা, ডাকাতি, হীনচেতা, মিথ্যাবাদী, স্বার্থপর এমন কোন দোষ নেই যে তাদের মধ্যে ছিল না। এছাড়া ঘুষ দেয়া, আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া, নিজের লাভের জন্য অন্যের ক্ষতি করা, অন্যের বিপদে আনন্দ উপভোগ করা, পরশ্রীকাতরতা, ছলে বলে, কলে-কৌশলে বিষয় সম্পত্তি সঞ্চয় করাই ছিল জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। তাছাড়া মুখে কথার তুবড়ি ছড়ানো এবং কাজে ফাঁকি দেয়া নিত্যকার অভ্যাস ছিল। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে নানা প্রতারণার আশ্রয় নেয়া, কথার হুল ফোটানো, শ্লেষাত্মক কথাবার্তা এমনকি প্রয়োজনে হত্যা করা, লুণ্ঠন, স্ত্রীর প্রতি অবিচার এসব যেন যুবা থেকে বৃদ্ধ সবাইর মধ্যেই লক্ষ্য করা যেত।
চার্লস গ্রান্ট বলেছেন, বাঙালিদের দেশপ্রেম নেই। তাই বলে কি বাঙালিদের মধ্যে ইংরেজ শাসকেরা কোন ভাল গুণ খুঁজে পায়নি? এ ধরনের সমাজে রাজা রামমোহন রায়ের আবির্ভাবকে তারা অলৌকিক বলে মনে করতো।
একাত্ম হয়ে আমরা আমাদের গ্লানিকে ধুয়ে-মুছে নতুনভাবে জন্ম নিতে পারি না? বাঙালির কলংকের অবসান ঘটিয়ে সত্যিকার মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। ‘কথায় না বড় হয়ে কাজে বড়’ হতে হবে। কবির একশ’ বছর পুরানো কবিতার আদর্শ বাস্তবায়িত করতে হবে।
তাই বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার দু’টি লাইনের উদ্ধৃতি-
‘ডুবিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ, কে আছো জওয়ান, হও আগুয়ান, হাঁকিছে ভবিষ্যৎ’।
বর্তমানের ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙালি ভবিষ্যতে মানুষ হবে। সোনার বাংলা গড়ে তুলে সবাই সোনার মানুষ হোক এটাই কামনা ও বাসনা।
(লেখাটি ইত্তেফাকে পেলাম, ভালো লাগলো তাই শেয়ার করলাম)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।