আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কি লিখবো ?

sabujs@yahoo.com

নিজেকে নিয়ে লিখিনা বহুকাল । সবসময় মনে হয় নিজেকে নিয়েই লিখে ফেলি এক একটি কাব্য । কিন্তু আর লেখা হয়ে ওঠেনা । আমার অনেক সময় আছে । মাঝে মধ্যে আছে অখন্ড অবসর ।

তবু লেখা হয়ে ওঠেনা । কেন হয়না কে জানে? মাঝে মাঝে সুমনের সেই গানের কথা মনে পড়ে । চুপচাপ শুয়ে শুয়ে আকাশ পাতাল ভাবি আর শুনি ........ ও গানওয়ালা , আর একটা গান গাও ..... আমার আর কোথাও যাবার নেই , কিচ্ছু করার নেই ...... সত্যি , আমার আর কিচ্ছু করার নেই । খুব বেশি বয়স হয়নি আমার । অথবা হয়তো হয়েছে , মনে মনে টের পাইনি এতোদিন।

মনের দিক থেকে বুড়িয়ে গিয়েছি হয়তো । আর কোন কাজে উৎসাহ পাইনা । বিকেলের ফুটবল মাঠে সবাই দাপিয়ে ফুটবল খেললেও আমি মাঠের এক কোনায় চুপচাপ বসে থাকি। মাঠের পরে দেখি অতল গহ্বর , তারপর মেঘ , তারপর পাহাড়চূড়া ...... তখনও আমার কিচ্ছু করার থাকেনা ..... মাঝে মাঝে পুরাতন বইয়ের স্তুপ খুজে বের করি একসময়ের ভালোলাগা বইগুলো। এখন সেগুলো কেমন যেন পানসে মনে হয় ......যেই জীবনানন্দ পড়ে একসময় রাতের পর রাত তন্ময় হয়ে বসে থাকতাম , এখন সেই জীবনানন্দের বই হাতের কাছে শেলফে দিনের পর দিন পড়ে থাকে ..... অবহেলায় .... মাঝে মাঝে সেই বুড়ো আমায় ভাঙা ভাঙা স্বরে ডাকে ।

বলে , আয় ..... আয় ..... ছোট্ট ডিঙিতে চড়ে আজ আমরা সমুদ্রে বেরোবো । উত্তাল তরঙ্গ সাক্ষী রেখে ভেসে যাবো দূরকে দূর ..... তারপর সন্ধ্যেবেলা একা একা দুজনে বসবো মসৃন বালুকাবেলায় । আর তখন তোকে শোনাবো আমার জীবনের গল্প ...... যা এতোদিন আমি কাউকে শোনাইনি। ...... বুড়োর কথা শুনি আর ভাবি ...... বুড়োর সাথে সমুদ্রের বুঝি অনেক মিল ......... আমরা বড্ড মিল খুজতে ভালোবাসি ...... গভীর রাতে ঘুম ভেঙে যায় । দরোজা খুলে বারান্দায় বসে ফ্যাকাসে অন্ধকার দেখি ....... নিজের দিকে তাকাই ... আরো অতল অন্ধকার .....তখন সেই পঞ্চমীর চাঁদ আমায় কুহেলিকার স্বরে ডাকে।

আর আমি ফিরে যেতে চাই সেই আট বছর আগের একদিনে ..... শোনা গেল লাশকাটা ঘরে নিয়ে গেছে তারে কাল রাতে , ফাল্গুনের রাতের আধারে যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাদঁ মরিবার হলো তার সাধ ....... তবু আমার মরবার সাধ জাগে না । শুধু সাধ জাগে সেই ক্লান্তি জাগানো বিপন্ন বিষ্ময়কে আবিষ্কার করতে । আমিও কী এতোদিন ধরে এতোগুলো রৌদ্র , এতোগুলো সকাল সন্ধ্যা দেখে ক্লান্ত হইনি? দিনের ব্যস্ততায় আমি ক্লান্তি টের পাইনা । রাতে গভীর অন্ধকার সাক্ষী রেখে আমি ক্লান্তির মুখোমুখি হই ..... নিজেকে আমার বড্ড বেশি ভয় করে তখন ....... পোস্টটির শিরোনাম দিয়েছিলাম .. কী লিখবো ? আমি সত্যিই এখন আর লিখার মতো কিছু খুজেঁ পাইনা। মাঝে মাঝে লিখতে ইচ্ছে করে শুধু রক্তের কথা ।

সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে শুধু রক্ত , রক্ত আর রক্ত ...... যেই রক্ত আমার ভাই কিংবা মায়ের উদর বেয়ে চুইয়ে চুইঁয়ে পড়েছিলো একসময় .... যেই রক্ত আমি বেয়নেটের ডগায় দেখেছি .... যেই রক্ত দেখেছি স্বাধীন দেশের পতাকায় ....... পতাকার রক্তের রঙগুলো এই আটত্রিশ বছরে অনেকটাই মলিন হয়ে গিয়েছে ..... পতাকার দিকে তাকালে আমার বড্ড লজ্জা হয় এখন ... ইচ্ছে করে ঘৃনার কথা লিখবো .... যেই ঘৃনার উৎস কোথায় আমি জানিনা । শুধু থু করে একদলা থুতু ছুড়ে মারতে ইচ্ছেকরে কিছু নরপশুর মুখে । কিন্তু আমি পারিনা । অক্ষমতার হিংস্র আক্রোশ আমায় প্রতিনিয়ত আরো হিংস্র করে তোলে ........কিন্তু আমার কিছুই লেখা হয়না ..... ইচ্ছে করে রৌদ্রের কথা লিখবো । আমি বহুকাল রৌদ্র দেখিনা ।

আমার সবগুলো জানালা বন্ধ । ভ্যাপসা গুমোট অন্ধকারে বসে বসে দীর্ঘশ্বাস ফেলি । আমার চোখদুটো একটুকরো রৌদ্রের জন্য আকুপাকু করে । সূর্যরশ্মির একফালি তলোয়ার পেলে মনে হয় সবকিছু লন্ডভন্ড করে দিতে পারবো ... সেই বায়ান্নর মতো , সেই ঊনসত্তুরের মতো ..... সেই একত্তরের মতো ..... ............. সুকান্তের মতো বুকে বারুদ নিয়ে বসে থাকি । আমার আর রৌদ্রের দেখা মেলে না .... আমার আর আগুনের দেখা মেলে না ... তাই আমার আর কিছুই লিখা হয়না ...... চোখ বুজলেই শুধু রক্ত দেখি ...... রক্ত ...... ছোপছোপ রক্ত .. ..মায়ের উদর বেয়ে চুইয়ে পড়া রক্ত , ভাইয়ের কন্ঠনালী চিরে ফিনকি দিয়ে পড়া রক্ত ...বেয়নেটের হিংস্র ডগায় দেখি শুকিয়ে যাওয়া রক্ত ....... ..... ফেলে আসা পদচিহ্নে শুধুই রক্তের ছাপ দেখি .........


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।