আস সালাম - আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক
বিরক্ত হয়ে সামনের লজিক এনালাইজারটার দিকে চেয়ে আছে লিলি। সেই কখন বিকাল থেকে নব টেপাটেপি করছে কিন্তু কাজের কাজ কিচ্ছু হচ্ছে না। এদিকে ল্যাব কো-অর্ডিনেটরের সামনে কাল সকালে পুরো এক্সপেরিমেন্ট প্রেজেন্ট করতে হবে মনে করতেই রীতিমত আতংক যেন গ্রাস করে লিলিকে। হতাশ হয়ে দেয়ালে ঝোলানো ঘন্টাওয়ালা ঘড়িটার দিকে একবার চেয়ে দেখল। রাত প্রায় বারটা।
দীর্ঘ এক নিঃশ্বাস বেরিয়ে এল বুক চিরে। আস্তে আস্তে বিশ্বাস হতে শুরু করল, বিরক্তিকর মিশরীয় ল্যাব কোঅর্ডিনেটর সবার সামনে তাকে একচোট দেখে নেবার সুযোগ মোটেই হাতছাড়া করবে না।
লিলি চলতি সেমিস্টারে বোম্বে থেকে এই ইউনিতে এসেছে মাস্টার্স করতে। ফ্রেশম্যান ডিজিটাল ল্যাবের টিএ করছে। বলা চলে সবচেয়ে সহজ কোর্সের একটি ।
তবে প্রথম বার বলে অনেক জায়গায় সে আটকে যাচ্ছে। এছাড়া নিজের কোর্সের চাপ তো রয়েছেই। এদিকে ল্যাব কোঅর্ডিনেটর এক কিম্ভূতকিমার্কার মিশরীয় ছাত্র, যে গত দশ বছর ধরে কিনা ধাক্কিয়ে ধাক্কিয়ে পিএইচডি করছে। তার চন্ডাল মার্কা মেজাজের সামনে সমস্ত টিএরা অসহায়। এত বছর ধরে কারো পিএইচ ডি করতে পারার কথা নয় - সে কাকে কাকে ধরে যেন প্রতি বছর এক্সটেন্ড করছে।
এক অদ্ভূত চিড়িয়া!!
কি মনে করে পাশে বসা জনের দিকে ফিরল লিলি। জন সিনিয়র লেভেল ল্যাব টিএ। নিজের ল্যাবের কাজ নিয়ে মগ্ন।
"জন, তুমি কি কখনও ফ্রেশম্যান টিএ ছিলে?"
"দুই বছর আগে ছিলাম। ওটা দিয়েই তো সবাই টিএ জীবন শুরু করে।
"
"আমি তো আটকে গেছি। তোমার কি কিছু মনে আছে?"
"কই দেখি কি সমস্যা। " - এগিয়ে এল জন। লজিক এনালাইজার আর ল্যাব বুকের দিকে তার পুরো মনোযোগ।
খুব বেশীক্ষন লাগল না প্রত্যাশিত রেজাল্ট পেতে।
হাফ ছেড়ে বাচল লিলি। এভাবে অপ্রত্যাশিত সাহায্যের দ্বারা যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে তা ভাবনাতে মোটেও আসেনি।
"কি যে উপকার করলে জন। "
মুচকি হাসল জন "এখন কি বাসায় যাবে?"
"হ্যা" জবাব দিল লিলি।
"চল, নামিয়ে দেই।
ডরমেই তো থাকছ। "
"হ্যা। বাসা এখনও পাই নি। "
"এদিকে একটা বাসা খালি হয়েছে। চলে আসতে পারো।
ডরমের চেয়ে অনেক সস্তা হবে। গ্রোসারীও বেশ কাছে। " গাড়ী চালাতে চালাতে জন বলে।
"তাই নাকি? কোথায়? আমি তো ড্রাইভ করি না। দূরে যেতে পারব না।
"
"না দূরে নয়। ক্যাম্পাসের কাছেই। টমকে চেন? ওর আগের রুমমেট চলে গিয়েছে গ্রাজুয়েট করে। নূতন রুমমেট খুজছে। "
"ওহ, আমার জন্য একজন গার্ল রুমমেট লাগবে।
" আগ্রহ মিইয়ে গেল লিলির।
"কেন?" বিষ্ময়ে জানতে চায় জন।
"ওটাই আমাদের কালচার। "
"কই, তোমাদের আশরাফ তো কয়েকজন চাইনিজ মেয়ের সাথে বাসা নিল। "
"আশরাফের কথা আলাদা।
আমি আসলে চাইছি মেয়েদের সাথে বাসা নিতে। " লিলির গলার ফুটে ওঠা ঝাঝ জন বুঝে চুপ মেরে যায়।
অনেক ক্ষন চলে শুনশান নীরবতা। অবশেষে জন নীরবতা ভেংগে বলে, "এই তো মনে হয় তোমার বাসার গলি। "
"ওহ, চলে এসেছি আমরা।
চল, আমার বাসা দেখবে। "
"ধূর। এখন বরং নিজের বাসায় গিয়ে ঘুম দেব। কাল সকালেই তো ফাউল মিশরীটার চেহারা দেখতে হবে। "
"একটা কথা জিজ্ঞেস করলে কিছু মনে করবে?" লিলি জিজ্ঞেস করে।
"নাহ, মনে করাকরি আমার মধ্যে একদম নেই। কি বলবে বল। "
"তোমার হাতে রিং দেখছি। ব্যপার খানা কি। "
"ও এটা।
আমার একজন পার্টনার রয়েছে। " জনের জবাব।
"পার্টনার! বিয়ে করছ না কেন?"
"লিগাল হলেই বিয়ে করব। মনে হয় শীঘ্রই লিগাল হবে। "
ধ্বক করে বুকের মধ্যে একটা ধাক্কা খেল লিলি।
লিগাল হবার কথা কি বলছে জন এসব। ভাল করে জনের চেহারার দিকে তাকিয়ে দেখল লিলি। জনের চেহারার অস্বাভাবিকতা তার লব্ধিকে গ্রাস করল। সেই ফ্যাকাশে মুখ, যেন কবর থেকে উঠে আসা। যা বিভিন্ন সময় ছবিতে বিশেষ কিছু মানুষের মুখের সাথে মিলে যায়।
মুহুর্তে মনে পড়ল লিলির "পার্টনার" শব্দটি একটি বিশেষ সম্পর্কের ক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত।
সমকামী! জন একজন গে!! হতভম্ব হয়ে ভাবতে লাগল লিলি। এত ভদ্র আর পরোপকারী জন পর্যন্ত।
হঠাৎ মনে পড়ল লিলির গত সপ্তাহে তার নিজের দেশ ভারতের কথা। নিউজ পেপারের শিরোনাম জুড়ে ছিল, "উচ্চ আদালত কর্তৃক সমকামী বিয়ে বৈধ হবার ঘোষনা।
" ব্যংগের হাসি চলে এল লিলির মনে, আসল বিয়ের প্রতি মানুষের অনীহা চলে এসেছে। তাই বুঝি ভিন্ন রকম বিয়ের স্বাদ নিতে চাইছে মানুষ।
জন চলে গিয়েছে অনেকক্ষন হল। লিলির ঘোর যেন আর কাটে না। ছোট বেলায় ভাই বোনদের সাথে কাটানো শৈশব, মায়ের হাতের ফিরনী সব কিছুই মাথায় ঘুরতে লাগল।
আগামী পৃথিবীর শিশুরা কি মায়ের আদর, বাবার স্নেহ হারাবে? সে জীবন কি পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে ফসিল হতে বসেছে!!
এ কোন চোরাবালিতে ডুবছি আমরা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।