আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কমিউনিটি মোবিলাইজেশন ও উন্নয়নে জনঅংশীদারিত্ব



কমিউনিটি মোবিলাইজেশন শব্দের মূল অর্থ হচ্ছে, কমিউনিটির জনগণকে যে কোন বিষয় বা কোন একটি সুনির্দিষ্ট বিষয় বা কাজ সম্বন্ধে যথারীতি বোঝানো। স্থানীয় পর্যায়ে জনঅংশীদারিত্বমূলক প্রেক্ষিত উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনা প্রনয়ন প্রক্রিয়ায় জনগণকে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে সরকার ও দাতা গোষ্ঠি বাংলাদেশে নব্বই দশকের প্রথম বা মাঝামাঝি সময় থেকে কাজ শুরু করে। কমিউনিটি মোবিলাইজেশনের গুরুত্ব বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, কমিউনিটি মোবিলাইজেশন প্রস্তাবনা জনগণকে সম্মিলিতভাবে কাজে অনুপ্রেরণা জুগিয়ে প্রাণবন্তু করে তোলে। জণগনের অংশীদারিত্ব সৃষ্টিতে ও জনগণকে সরাসরি কাজে সম্পৃক্ত করে তাদের দ্বারাই কর্মপরিকল্পনা প্রনয়নের ব্যবস্থা জোরদার করে। জনঅংশীদারিত্ব সৃষ্টিতে যথা সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে জনগণকে সহায়তা করতে যথাযথ ভূমিকা পালন করে।

ফলে প্রকল্পের মালিকানা জনগণের আয়ত্বে এসে যায় এবং সমাজ সংষ্কার, সামাজিক নিরাপত্তা ও সেবার মান বৃদ্ধি পায়। প্রতিষ্ঠা পায় গনতান্ত্রিক অবাধ চর্চা ও জাগ্রত হয় গনতন্ত্রের সুস্পষ্ট চিন্তা-চেতনা ও ধ্যান-ধারনা, জনতা অর্জণ করে একে অপরের প্রতি পূর্ণ আস্থা, দৃঢ় হয় একতার ভীত, সঠতা ও দুর্নীতি ধীরে ধীরে সমাজ থেকে নিপাত যায়। এ প্রক্রিয়াকে গতিশীল করতে প্রয়োজন সরকারের কেন্দ্রীয় ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করার মাধ্যমে মানবকল্যাণে কাংখিত লক্ষ্য অর্জণ করা এবং স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে গতিশীল করা। কমিউনিটি মোবিলাইজেশনের কাজকে বেগময় করার জন্য নিম্নে বর্ণিত কাজ গুলো কার্যকর ভাবে স্থানীয় জনগণ দ্বারা স্থানীয় সরকারের সমর্থনে সম্পন্ন করা অপরিহার্য। - কমিউনিটি ভিত্তিক স্থানীয় জনগণকে নিয়ে জনসংগঠন গড়ে তোলা বিশেষ করে মহিলাদের নিয়ে মহিলা সংগঠন (এক পরিবার এক সদস্যের ভিত্তিতে ১৫-২০ টি পরিবার থেকে) গড়ে তোলা।

কমিউনিটি ভিত্তিক সংগঠিত মহিলা প্রাথমিক দলগুলোকে এসব দলের প্রতিনিধি সমন্বয়ে গঠিত অপেক্ষাকৃত কমিউনিটি সংগঠনকে শক্তিশালী করে বিশেষ করে হত-দরিদ্র্য নারীদেরকে তথা তরুণ-তরুণীদের যারা আগামী দিনের অশেষ সম্পদ তাদেরকে অদক্ষতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করে ক্ষমতায়ন করার তরে আশু ব্যবস্থা নেয়া একান্ত প্রয়োজন - কমিউনিটি ভিত্তিক জনসংগঠনের মাধ্যমে সদস্যদের নিজেদের অল্প অল্প সঞ্চয় সংগ্রহ করা এবং সংগৃহীত সঞ্চয়ের টাকা স্থানীয় জনসংগঠনের নামে ব্যাংক হিসাবে আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য রাখা। প্রয়োজনে জনতা নিজেদের সিদ্ধান্ত অনুসারে পূঁজি বিনিয়োগ করবে, এর অন্যতম লক্ষ্য হবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পূঁজি ব্যবসায় বিনিয়োগ করে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে আত্মনির্ভর হওয়া। স্থানীয় জনসংগঠনের নামে ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা দেয়ার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার বড্ড অভাব পরিলক্ষিত হয়। যেমন অতি ক্ষুদ্র বিষয় ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা দেবার শ্লিপ প্রয়োজন অনুসারে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়না, - কমিউনিটি অ্যাকশন প্ল্যান অনুষ্ঠিত করার ব্যবস্থার মাধ্যমে জনগণের দ্বারা কমিউনিটির সমস্যা চিহ্নিত করা এবং সমস্যার অগ্রাধিকার নির্নয় করে সমাধানের জন্য পরিশুদ্ধ কর্মপরিকল্পনা (প্রকল্প) জনগণের দ্বারা প্রনয়ন ও সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন ও মনিটরিং এর ব্যবস্থা করা। কমিউনিটি অ্যাকশন প্ল্যান অনুষ্ঠিত করার মাধ্যমে পরিশুদ্ধ কর্মপরিকল্পনা জনগনের দ্বারা প্রনয়ন ও সুষ্ঠু বাস্তবায়ন করার সদিচ্ছা তেমন একটা আমাদের মত অনুন্নত দেশে ও নিরক্ষরতা বিশিষ্ট সমাজে নেই বললে অত্যুক্ত হবেনা।

স্থানীয় সরকারের তত্বাবধানে পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে দুইটা চারটা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছেনা তা নয়। তবে প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় বিস্তর গলদ দেখা যায়। গলদগুলো দূর করা দরকার, - জনঅংশগ্রহণ পদ্ধতিতে কমিউনিটির দরিদ্র্য শ্রেণীর জনগোষ্ঠীকে নিয়ে কমিউনিটির আর্থ-সামাজিক ও জীবন যাত্রার মান সার্বিক ভাবে উন্নত করার পাশা পাশি স্বাস্থ্য-শিক্ষা মান উন্নয়ন করে, ব্যক্তি তথা সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রত্যাশায় তৃণমূল পর্যায়ে জনসংগঠনের মাধ্যমে মানব বন্ধন সৃষ্টি করা প্রয়োজন এবং এখুনই এটা করার উপযুক্ত সময়। উন্নয়ন পরিকল্পনায় জনঅংশগ্রহণ প্রস্তাবনার দ্বারা জণগনের অংশীদারিত্বে কমিউনিটির উন্নয়ন প্রচেষ্টা জোরালো ভাবে নেয়া সরকারের অন্যতম দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতোমধ্যে সরকারের তত্বাবধানে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের তৃণমূল পর্যায়ে এ প্রক্রিয়ায় প্রকল্প চালু রয়েছে বিশেষ করে UNDP এবং EC?র সহায়তায়।

অন্যান্য সংস্থাও যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেনা তা নয়। কমিউনিটি মোবিলাইজেশন প্রক্রিয়ায় এরুপ প্রকল্প বাস্তবায়নে সুকৌশল অবলম্বনের জন্য যথাযথ তথ্য-উপাত্ত, প্রকল্প বাস্তবায়নের পূর্বেই সংগ্রহ করা জরূরী এবং প্রকল্প শুরুর প্রারম্ভে ইনসেপশন প্রতিবেদন প্রনয়ন করা একান্ত অপরিহার্য। আরো জরুরী যুগোপযোগী শিক্ষণ ম্যাটিরিয়াল্স প্রণয়ন করা এবং তদনুযায়ী প্রশিক্ষণ দেয়া। এগুলির স্বল্পতা তীব্র ভাবে বিরাজমান। এছাড়াও তৃণমূল পর্যায়ের জণসংগঠনগুলোর আর্থিক দিকটা সংরক্ষণের ক্ষেত্র অনেকটা অবহেলিত।

এদিকটা অত্যন্ত দুর্বল ভাবে দেখা হয়। জণসংগঠনগুলোর বৈধ্যতার দিকটাও উপেক্ষিত। এসব দুর্বল দিক গুলোতে বিশেষ ভাবে নজর দিতে হবে। দুর্বল দিক গুলোতে নজর দিলে আমার পূর্ণ আস্থা এরুপ যে এ প্রকল্পগুলো উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনন্য দৃষ্টান্ত রাখতে সক্ষম হতে পারে। অন্যথা হলে অতি উচু মার্গের কথা-বার্তা প্রকল্প প্রস্তাবনাতেই শোভা পেতে থাকবে, প্রকৃতপক্ষে বাস্তবে নয়।

কমিউনিটি মোবিলাইজেশন ও জনঅংশগ্রহণের দ্বারা জনঅংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণের কল্যাণ বিধানে নিম্ন বিষয়গুলো সহায়ক ভূমিকা রাখতে সক্ষম- - পিইউএ - (পার্টিসিপেটরী আরবান এ্যাপ্রাইজাল) পদ্ধতি বে-সরকারী সংস্থা ও কমিনিটির জনগণ দ্বারা গঠিত কমিউনিটি বেইজ্ড অরগানাইজেশন (সিবিও/সিও) এর মাধ্যমে গৃহীত প্রকল্প স্বচ্ছরূপে বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে, - কমিউনিটি মোবিলাইজেশন ও জনঅংশগ্রহণ পদ্ধতিতে হত-দরিদ্র্য সম্বলহীন ও শেঁকড়বিহীন জনগোষ্ঠীর দক্ষতা বৃদ্ধি যথাযথ ভাবে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তরান্বিত করে। তবে এর জন্য প্রয়োজন হয় উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল। এছাড়াও প্রকল্পের বিচ্যুতি, সফলতা ও ব্যর্থতা সূচিসুদ্ধ রূপে পর্যালোচনা করে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক পন্থা অবলম্বনে কমিউনিটি মোবিলাইজেশন প্রক্রিয়া ধীরে-সুস্থে, ভেবে-চিন্তে, বুঝে-সুঝে অগ্রসর হতে সহায়তা করে, - এছাড়া উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়নে জনগণের চাহিদা ও আকাংখা-অংগিকার পূরণে সম্যক্ ভূমিকা পালন করে থাকে। কমিউনিটি মোবিলাইজেশন এভাবে জনগণের আশা ও উদ্দীপনার সফল প্রতিফলন ঘটিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে থাকে এবং নিঃসন্দেহে জনগণের অংগিকার ও কার্যক্রমের লক্ষ্য অর্জণের পথে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ রূপে আত্মপ্রকাশ করে থাকে, - উপরন্ত জনগণের মাঝে ক্ষোভ রোধ ও অসন্তোষজনক পরিস্থিতির প্রশমন ঘটায়। ফলে তৃণমূল পর্যায়ে সঠিক নেতৃত্বর বিকাশ ঘটে।

হত-দরিদ্র্যদের খোলামেলা ভাবে মতামত প্রকাশে ও মত বিনিময়ে সহায়তা করে ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে, - স্থানীয় সম্পদ ও অর্থ সংগ্রহ করে সুষ্ঠু বিনিয়োগে উৎসাহ যোগায়। আয়বর্ধনমূলক কাজে দক্ষতা বৃদ্ধি করে। আয়ের নতুন নতুন পথ বা দিগন্ত উন্মোচন করে। স্থানীয় জনগণের মাধ্যমে সামাজিক শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং সুষ্ঠুভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে। এ প্রক্রিয়া চলমান থাকলে পর্যায়ক্রমিক ভাবে কোন এক সময় জনগণের দ্বারা সংগঠিত তৃণমূল প্রতিষ্ঠান প্রাতিষ্ঠানিক দৃঢ়তা পায়, জনতার দক্ষতা ও কর্মনিপূণতা অর্জিত হয়ে দাতা সংস্থার নিকট নিজেরাই সরাসরি প্রকল্প দাখিলে সমর্থ হয় বলে আশা করা যায়।

কমিউনিটি মোবিলাইজেশন ও জনঅংশগ্রহণের সুফল: এ ধারা পরিপূর্ণ ভাবে চালু থাকলে ক্রমে ক্রমে ব্যুরোক্র্যাসি নিপাত যায়। ফাইলে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য মুখ থুবড়ে পড়ে। সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা ও দায়িত্ববোধ নিশ্চিত হয়। জনঅংশগ্রহণ প্রক্রিয়া উন্নয়নের ক্ষেত্রে অগ্রগতী সাধনে তড়িৎ কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সমর্থ হয়। পরিশুদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণীত হয়ে ও সুষ্ঠুভাবে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করে।

গৃহীত প্রকল্প সফলতার সাথে বাস্তবায়িত হয়ে স্থায়ীত্ব লাভে সমর্থ হয়। সম্পদ অপচয় রোধ করে। দরিদ্র্য জনগণ কঠিন দিনগুলো উৎরাতে সক্ষম হয়। দারিদ্র্যতার নির্মম কষাঘাত হতে রেহায় পায়। বহুকাল আগে থেকেই দেখা যায় যে, বিশ্ব সমাজে বিশেষ করে এশিয়া মহাদেশে মহিলারা পুরুষের সাথে হাঁটার সময়ে অন্তত: আধা হাত বা এক হাত পিছনে থাকে।

খাওয়ার টেবিলে মেয়েরা সবার শেষে হাড়-হাড্ডি বা মাছের কাঁটা-কুটা যা পায় তাই খায়। তাদের কণ্ঠস্বর ক্ষীণ। সুতরাং কমিউনিটি মোবিলাইজেশন ও জনঅংশগ্রহণের কাজ ত্বরাম্বিত করা সম্ভবপর করে তুললে হত-দরিদ্র্যদের বিশেষ করে নারীদের ক্ষমতায়নের পথ সুগম হবে। কমিউনিটি মোবিলাইজেশনের একটি অন্যতম শর্ত হচ্ছে তৃণমূল পর্যায়ে জনগণকে বিশেষ করে মহিলাদেরকে নিয়ে ওদের নিজস্ব গন্ডিতে প্রাথমিক দল বা সমিতি বা সমবায় গঠন করা জরুরী। যা তাদের মাঝে নেতৃত্ব বিকাশ সাধনে এবং শিক্ষা সম্প্রসারণে অগ্রণী ভূমিকা রাখে।

আয়বর্ধনমূলক কাজের সম্প্রসারণ ঘটায়। উপযুক্ত সময় নিয়ে তাড়াহুড়া না করে দীর্ঘকাল ধরে প্রশিক্ষণ দিয়ে ব্যক্তি তথা প্রাথমিক দলের চাহিদা অনুযায়ী প্রকারান্তে জনগণের দক্ষতা বৃদ্ধি করে। বহুমূখী ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করে, অবকাঠামোগত ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের দ্বারা জনগণের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন করতে সক্ষম হয় বিশেষ করে পল্লী ও শহর-নগর কমিউনিটিতে যারা নিদারুন অভাবের জ্বালা বুকে নিয়ে মানবেতর ভাবে দিনাতিপাত করে থাকে। যাদের আয় প্রতিদিন $ ডলার-১ এর নীচে; যারা দুই বেলা দুই মুঠো অন্ন পায় না, দু:খ-দীর্ণতা নিয়ে অসহায়ত্বের ন্যায় জীবন যাপন করে; যাদের মাথায় তৈল নেই, গায়ে স্বল্পতম বস্ত্র নেই, ঘুমাবার জন্য বাসস্থান বা মাথার উপরে চালা নেই, যাওবা একটু আধটু আছে তাও ফুটো-ফাটা। অসুখে-বিসুখে চিকিৎসা ও শিক্ষার উপায়-আন্ত নেই।

যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। এক কথায় যাদের মাথা গোঁজার তিল পরিমাণ ঠাঁই নেই। যারা পরের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে ঘুরে অন্ন জোগাড় করতে ঘর্মাক্ত হয়। এদেরকে নিয়ে ছোট ছোট প্রাথমিক দল গঠন করে মান সম্মত উপায়ে টেকসই জীবনযাত্রা নির্বাহ করতে সক্ষম। তবে স্মরণ রাখতে হবে যে, ছোট ছোট প্রাথমিক দলের প্রতিনিধি সমন্বয়ে (একটি প্রাথমিক দল হতে ২জন করে নিয়ে) কমিউনিটি ভিত্তিক সংগঠন গড়তে হবে।

এছাড়াও এ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করার নানা উপায়, প্রক্রিয়া ও পদ্ধতিকে ব্যাখ্যা সহ এক সাথে কাজ করার উপকারিতা ভালোমতো কমিউনিটি মোবিলাইজেশনের দ্বারা জনগণকে বুঝানো প্রয়োজন। এ প্রক্রিয়ায় কমিউনিটি মোবিলাইজেশন উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে অনন্য এবং উন্নয়নের গতীকে বেগবান করতে সক্ষম তা পরিস্কার করে তুলতে হবে। প্রতিবেদন অনুযায়ী ৪২% শহরাঞ্চলের জনগণ নিরাপদ ও সুপেয় পানি পানের সুযোগ পায়। এমতাবস্থায় বাকি ৫৮% জনগণ উপায় না পেয়ে দূষিত পানি পান করে থাকে এবং নানাবিধ স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে রোগে ভোগে। ফলে স্বল্পায়ূতে অনেকেই মৃত্যুও বরণ করে থাকে।

৯৬% মাতৃ প্রধান পরিবার দরিদ্র্য সীমার নীচে এবং ৩৩% চরম দারিদ্র্য সীমার নীচে অবস্থান করছে যারা তারা ৮০% মোটখাদ্য ক্যালোরি প্রয়োজনের তুলনায় কম পাচ্ছে। (রহমান, ১৯৯২, ইউএনডিপি, ১৯৯৪:২)। এর প্রেক্ষিতে আমি বলবো যদি কমিউনিটি মোবিলাইজেশন প্রক্রিয়া সফলভাবে প্রয়োগ করে ইতোপূর্বে তৃণমূল পর্যায়ে হত-দরিদ্র্যদের সংগঠনকে দৃঢ়ভাবে গড়ে তোলা হতো তাহলে এমনতর দুর্দশাগ্রস্ত যারা হয়েছে তাদেরকে হতে হতো না। ইত্তেফাক ২৩-০৭-০৯ অনুযায়ী-হতদরিদ্র্যদের জন্য চাই ৫শত কোটি ডলার। জাতিসংঘ বলেছে- চলতি বছর বিশ্বের হতদরিদ্র্য লাখো মানুষকে সহায়তা করতে চাই আরো পাঁচশ কোটি মার্কিন ডলার.....।

তহবিল সংগ্রহের ক্ষেত্রে অনেকটা পশ্চাৎপদ গতী প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। পরিবেশ দূষণের ক্ষেত্রে নজর দিয়ে বিশেষ করে পয়ঃনিষ্কাশনের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, বাংলাদেশের কেবলমাত্র ঢাকা শহর পানিবাহি স্যুয়ারেজ পদ্ধতি সংযুক্ত। তবুও ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা বিরাজমান। মাত্র ১৫% শতাংশ জনগণ স্যুয়ারেজ পদ্ধতির সুযোগ পেয়ে থাকে। ৩০% জনগণ সেপ্টিক ট্যাংক এর সেবার আওতাভূক্ত।

এ দেশে পনর কোটি মানুষের মধ্যে ৭ কোটি ৪১ লক্ষ মানুষ উন্নত স্যানিটেশনের ব্যবস্থা হতে বঞ্চিত। সলিড ওয়েষ্ট ম্যানেজম্যান্ট অনুন্নত। সলিড ওয়েষ্ট সুষ্ঠুভাবে সংগ্রহ ও নিষ্কাশনের ব্যবস্থা প্রায় শহরে প্রকট। এ সম্বন্ধে বলিষ্ঠ পদক্ষেপও খুব একটা নেয়া হচ্ছেনা। কমিউনিটিতে এ বিষয়ে জনগণের পক্ষ থেকে কোন ধরণের আলোচনাও নেই।

আরো বলা যায় যে, প্রায় সকল শহরাঞ্চলে ময়লা-আবর্জনা নিষ্কাশনের জন্য নির্ধারিত স্থানও নেই। ফলে ময়লা ও আবর্জনা যেখানে সেখানে যেনো তেনো উপায়ে নিক্ষেপ করা হয় যা পরিবেশের জন্য বিপদজনক। (দৈনিক ইত্তেফাক জুন ২, ২০০৩ ইং) এ অবস্থা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে কমিউনিটি মোবিলাইজেশনের গুরুত্ব অত্যধিক এবং এ প্রেক্ষিত কমিউনিটি মোবিলাইজেশন ও জনঅংশগ্রহণ পদ্ধতিকে জোরদার করতে জনসংগঠন অশেষ ভূমিকা রাখে। কমিউনিটি ভিত্তিক জনসংগঠনই হতে পারে সকল প্রকার উন্নয়নের ক্ষেত্রে একমাত্র মূল চালিকা শক্তি। পরিবেশ বলতে আমরা সাধারনত: বুঝি আমাদের চার পাশের অবস্থা।

পরিবেশ সাধারণত: দুই ধরনের। প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ। মানুষ আদিকাল থেকে দলবদ্ধ ভাবে সামাজিক পরিবেশে বেশ সাচ্ছন্দ্যে বসবাস করে আসছিলো। যতই দিন অতিবাহিত হচ্ছে ততই মানুষের বসবাস যোগ্য সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ দূষণের কবলে নিপতিত হচ্ছে এবং তা মানুষের দ্বারাই। তাই মানুষের স্বাভাবিক জীবন ক্রমান্বয়ে বিপন্ন হচ্ছে।

অথচ এমনটি হবার কথা ছিলনা। কারন শ্রষ্টা মানুষকে সুষ্ঠু ও সৌষ্ঠবপূর্ণ অবয়ব সহ ঞ্জান, বুদ্ধি-বিবেক, হেকমত-হকিকত দিয়ে পৃথিবীতে পাঠান। তিনি মানুষকে দেখার, বলার, শুনার, স্পর্শ করার-স্বাদ-ঘ্রাণ গ্রহণ করার জন্য ইন্দ্রীয় দিয়েছেন। এছাড়াও মানুষকে চিন্তা-চেতনা ও বিবেচনা শক্তি, সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার শক্তি, সংকল্প শক্তি, জাগতিক ও আধ্যাত্মিক দর্শণ শক্তি দান করেছেন। ফলে মানুষ এ দুনিয়ায় বিবেক-বুদ্ধি খাটিয়ে সঠিক পথে কাজ করার যোগ্যতা অর্জণ করার কথা।

অথচ এর পরো দেখা যাচ্ছে যে, মানুষ তার বেঁচে থাকার মোলিক উপাদানগুলিকে কালের আবর্তে নির্বিঘ্নে দূষিত করে চলেছে। যেমন- সুপেয় পানিতে শিল্প বর্জ্য ফেলার দরুণ পানির মূল রং হয়ে গেছে কাল বা নীল বিবর্ণ। এ পানি পান করাতো দূরে থাক, শুধু হাত-পা ধৌত করলেও মানুষ নানাবিধ চর্ম রোগ থেকে শুরু করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। পানিতে আর্সেনিকের প্রাদূর্ভাব অতি মাত্রায় বেড়েছে। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী দূষিত পানি পান করে বাংলাদেশে ৭৫ লক্ষ মানুষ আর্সেনিক রোগে আক্রান্ত বলে জানা গেছে।

(ইনকিলাব-১২ই মে ২০০৯)। সুতরাং পানি-বায়ূ-শব্দ দূষণের সাথে মানুষের চারিত্রীক গুনাবলী প্রয়োগের ক্ষেত্রে বেশ একটা বড় রকমের গড়মিল বা বেমানান দেখে যথারীতি বিশ্বয়ে হতবাক হতে হয়। এ ছাড়াও দেখা যায় মানুষ বেমালুম ভাবে বন কেটে উজাড় করে চলেছে। অথচ বাংলাদেশে বনাঞ্চলের বিবরণ করুণ। সরকারের হিসাব অনুযায়ী দেশের ১৮% (আঠার শতাংশ) বনভূমি হলেও সঠিক হিসাব অনুযায়ী ছয়-সাত শতাংশ বন আছে।

সুন্দর বনের বাইরে প্রাকৃতিক বন যা আছে তা অতি সামান্য। চাহিদার তুলনায় অনেক কম। (সূত্র: বন. বন বিনাশ ও বনবাসীর জীবন সংগ্রাম - ফিলিপ গাইন) ফলে সূর্যের প্রখরতা প্রচন্ডভাবে বেড়েছে। বন্যা-প্লাবন গোটা বিশ্বেই প্রবলভাবে সহসা হানা দিয়ে সীমাহীন ক্ষয়-ক্ষত করছে। ভূ-গর্ভস্থ পানি সেচ কাজে ব্যবহার করার ফলে পানির স্তর আস্তেই গভীরে নেমে গেছে।

এভাবে ভূমিকম্পের অস্বাভাবিকতা বেড়েছে। ইট পুড়ানোর কালো ধোয়া-খড়ি দিয়ে রান্নার প্রভাবে কালো ধুয়ার দরুন মানুষ পদে পদে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে এবং বর্জ্যের পুঁতি গন্ধে পরিবেশ বিষময় হয়ে ওঠেছে। এসব নানা অবস্থা জোরালো ভাবে প্রমাণ দিচ্ছে যে, কমিউনিটি মোবিলাইজেশন ও জনঅংশগ্রহণ পদ্ধতি গড়ে তুলতে সক্ষম হলে সকল সমস্যা সহজে জণগন দ্বারাই সমাধান করা এবং গনতন্ত্রকে স্বাভাবিকভাবে বিকাশ করা সম্ভব। তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের সংগঠনমূলক নিজস্ব অবকাঠামো গড়ে ওঠে । ফলে উন্নয়ন কাজ সহজ হয়।

ধীরে ধীরে বৈষম্য দূর হয়। জনতা তখনই স্বাধীন ভাবে চিন্তা ও উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশ ঘটাতে সমর্থ হয়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।