আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মোবাইলে মিস কল আসার কহিনী।

মানুষ মানুষের জন্য।

নতুন নতুন ফোন কিনেছি। সে কি ভাব। পকেটে রাখলে নেটওর্য়াক মিস করবে- এই অজুহাতে মোবাইল রাখতাম হাতে। রিকশাস উঠলে আগে উঠত মোবাইল পর আমি।

আগে হাতের ইশারায় ডাকতাম- এই খালি শনির আখড়া যাইবা? আর এখন মোবাইলের এন্টেনা রিকশার দিকে ধরে বলি- যাইব নাকি? রিকশাওয়ালাও কেমন জানি সরু চোখে তাকাতো। মনে মনে গালাগালি করত কিনা কে জানে! ভাব ছুটতে বেশী সময় লাগল না। কথা বলার আগেই পকেট কালি। কতা বললেই বিল। কথা কম বিল কম কথা বেশী তো বিলও বেশী।

সম্ভবত এই অর্থনৈতিক সংকট থেকে মিসকলের উৎপত্তি। এক রোদজ্বল বৃষ্টির দিনে সেলুর সঙ্গে চুক্তি করে ফেললাম। একবার মিস কল দেয়ার পরও যদি মিস কল দেয় তাহলে বুঝতে হবে ওর বাপ (যদি সাক্ষাৎ আজরাইল) বাসায় নেই। দু’বার মিস কল দেয়ার অর্থ বাসায় কেউ নেই- তুমি চলে এসো। সেখানেও এক সমস্যা, সাধারণত ও বাসার পেছনে গিয়ে ওর জানালায় দুটো টোকা দিয়ে মিস কল দেই।

এতেই কাজ হয়ে যায়। আজ হয়েছে অন্য সমস্যা। টোকা দেয়ার পর ওর বাবাকে দেখলাম হম্বিতম্বি বেরিয়ে এল। আমি ভুল জানালায় মিস কল দিয়েছি। অনেক কষ্টে এবারের মতো বেঁচেছি বাপ।

ভাগ্য ভাল কাপড় চোপড় নষ্ট করিনি। প্রচন্ড রকম মন খারাপ নিয়ে তালপাকা ভাদুরে দুপুরে বিছানায় গড়াগড়ি করছি। ভাবছি দেবদাস হব না শুভাদাস হব (দেবদাসের আধুনিক সংস্করণ, সবকিছুই দেবদাসের মতো কিন্তু মদ খেয়ে মরতে রাজি নয়)। এরপর শুরু হলো মিস কলের যন্ত্রনা, ফোনে কে জানি বারবার মিসকল দিচ্ছে। ভ্রু কুঁচকে মোবাইলটার দিকে তাকাই।

রিং ব্যাক করব কি না ভাবছি। সাধারণত আমি রিং ব্যাক করতাম না। এ যাবৎ যতবার রিং ব্যাক করেছি তার সুফল কোনটাই ভাল হয়নি। এবার রিং ব্যাক করার পর ওপাশ থেকে জনৈক ভদ্রমহিলা (অবশ্য ভদ্রমহিলা বলা ঠিক হচ্ছে কিনা বুঝতে পারছি না। উনার কথাবার্তা সেন্সরবোর্ডে পাঠানো উচিৎ) বলল, ফ্রড তাই তো বলি তোর ফোনের নাম্বার আমার মোবাইলে এল কেমন করে? আমার মেয়ে আলতা বানুর সাথে ফোনে কথা বলো? তাই এতো বিল আসে।

দাড়া তোরে সামনে পাই হারামজাদা… তোর চামড়া দিয়ে আমি ডুগডুগি বানাব। ইডিয়েট…রাস্কেল… আমি মোবাইল টপ করে বন্ধ করলাম। রিং ব্যাক করে একি বিপদে পড়লাম রে বাবা। ভদ্রমহিলা থুক্কু অভদ্র মহিলা দেখি সব ভাষাতেই গালির ওপর ডক্টরেট করে ফেলেছে। ফোনটা বন্ধ করে কান ধরে তিনবার ওঠাবসা করলাম।

পশ্চিম দিক হয়ে কিরা কাটলাম। আর কখনও কেউ মিসকল দিলে ব্যাক করব না। সমস্যা তাতেও… পরদিন একের পর এক মিস কল আসছে তো আসছেই। আমি কল ব্যাক করছি না। ঘন্টা খানেক পর বস কল করে বলল, এতবার মিসকল দিচ্ছি ফোন ব্যাক করেন না কেন? আমি বললাম- আমার মোবাইলে টাকা ছিল না।

তিনি আবার বললেন, এতো কিপ্টু কবে থেকে হয়েছেন? আচ্ছা আপনার দেশের বাড়ী কোথায়? আমি ভয়ে ভয়ে বললাম, স্যার আমার দেশের বাড়ী …. কিন্তু বিয়ে করব বগুড়ায়। বস আমার হেসে বললেন, মোক্ষম জায়গায়ই বিয়ে করবেন দেখছি। কথা বেশী বলে ফেলেছি এতক্ষনে বিরক্তি আপনাদের চরমে বুঝতে পারছি দয়া করে আরেকটা শুনুন, মিনিমাম ২০বার (মিস কল প্রেরণকারীর ধৈর্য দেখে আমি বিস্মিত) মিসকল আসার পর কল ব্যাক করলাম। বললাম, হ্যালো কে? = আমি লাকি। - এ যাবৎ কতজনকে দিয়েছেন ফাকি? = তুমি তের নাম্বারে পড়েছ।

শুনে আমার রক্ত চির চির করে মাথায় উঠতে থাকে। কতবড় সাহস হুট করে তুমি বলে? এ মেয়ের তো দেখি লাইসেন্স নাই। কখন না জানি তুমি থেকে তুই বলে ফেলে! আমি ক্রোধান্বিত হয়ে বলি, তা কি ব্যাপার এত মিস কল দিচ্ছিলেন কেন? = ও কথা পরে আগে বলো দাঁত মেঝেছো কিনা? - কেন বলুন তো? = কারন খুব গন্ধ আসছে। উহ! কি দূর্গন্ধ। পুরো মোবাইলটা দূর্গন্ধে ভরে গেছে।

- চুপ থাক। এক চড় মারব যে তোর আলজিহ্বা লাল হয়ে যাবে। ওপাশ থেকে খিল খিল করে সম্মিলিত চার-পাঁচ জনের হাসির শব্দ শুনতে পেলাম। আমি কপ করে মোবাইলের লাইন কেটে দেই। মিনিটে ৭ টাকা নষ্ট করে বদ মেয়েদের খিল খিল শব্দ শোনার কোন মানে হয় না।

বজ্জাদের দল আমাকে বোকা বানিয়েছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.