ছোট বেলায় মারা যেতে নিয়েছিলাম,কিভবে যেন বেঁচে যাই, তখন আমার নাম রাখা হয় আল্লাহ রাখা। পুরো নাম আবু আব্দুল্লাহ আল জালাল আল্লাহ রাখা।
আমি আর আমার বউ অপ্সরা (ব্লগে একজন অপ্সরা আছেন,উনি না);আমাদের মানে আমার সাথে ওর পরিচয় বা ওকে আমি প্রথম দেখি একটা অনুষ্ঠানে,ও সেখানে নাচে। পরে টিভিতে এবং আরও কয়েকবার আমি ওর নাচের অনুষ্ঠান দেখি। ও কয়েকটা চ্যানেলের সিলেক্টেড শিল্পি।
আমি এতটাই বিমোহিত হই যে তা মানে ৭বছর আগের সেই আবেগকে ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। সেই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশের অযোগ্য। অনেকে অবশ্য বলেছিল-বিয়ের পর ওকে আমি নাচতে দিব কিনা,আমি অবাক হয়েছিলাম,এটা কেমন কথা।
ভাল লাগা,কাছে আসা,হাসি কান্না,রাগ অভিমান,অপেক্ষায় কি ভাবে যেন ভালবাসা হয়ে যায়। এক সময় দুজনেই ভালবাসাকে পুজি করে ভাল একটা বাসার স্বপ্ন নিয়ে এক ছাদের নিচে বসোবাস করতে থাকি।
পহেলা বৈশাখে দেখা,ভালবাসা দিবসে ভালবাসার সেই বিস্ময়কর শব্দটা শুনতে পাওয়া আর পৌষের এক পূর্ণিমা রাতে দুই পরিবারের অনুমতি ক্রমে সংসারিক জীবনে প্রবেশ।
দেখতে দেখতে তিন বছর হয়ে যাবে এ বছর। এখনও মনে হয় সেই তো সেদিন,ও নাচ্ছে আর আমি বিমোহিত হয়ে দেখছি,এ কি,এ কি,এই অনুভূতি তো নতুন।
বিয়ের আগে কত স্বপ্ন দেখতাম,কত কি!! ভেবে হাসি আসে এখনও। বিয়ের আগেই স্বপ্ন দেখতাম ছোট ছোট দু'টি পা হেঁটে যাচ্ছে,আহ।
দুজনে নাম ঠিক করতাম,আমি একটা নাম বলতাম ও পছন্দ করতো না,আমি বলতাম ঠিক আছে তুমি ঠিক কর। ও বলতো না-তুমি ঠিক করবে,তুমি বাবা না,আমি মা,আমাদের প্রথম সন্তান মেয়ে হবে তাই তুমি মেয়ের নাম রাখবে আর আমাদের পরের সন্তান ছেলে হবে-তার নাম রাখবো আমি। আমি হাসতাম,তুমি কি খনা নাকি,হাহাহহাহহা। ও রাগ করতো।
বিয়ের পর অবশ্য দুজনেই চিন্তা বাদ দেই।
কয়েকটা বছর নিজেদের গুছিয়ে নেই।
অবশ্য দু' পরিবার থেকেই চাপ দেয়,আমরা হাসি,হবে হবে। মায়েরা আশ্বাস পান না।
আগে কি সহজ ভাবেই না ভাবতাম বাবা হবার কথা। অপ্সরাকে তো এখনও বলি ময়নার মা কই তুমি,আর যাই কই,রেগে আগুন।
আমি ময়নার মা না,আমি রাজকন্যার মা। আমি এক সময় ওকে বলেছিলাম মেয়ের নাম রাখবো রাজকন্যা। আমরা কি সহজ ভাবেই না বলতে পারি। আর এখন বাস্তবতা আমাদের ভাবায়। আমার বড় বোনের ছেলেটা যখন হল,কি আনন্দ আমাদের ও দুলাভাইদের পরিবারে,দুই পরিবারের প্রথম সন্তান।
আমাদের কি আনন্দ ওকে ঘিরে,কিন্তু কি ভাগ্য আমাদের তিন বছর পর ধীরে ধীরে অস্বাভাবিকতা ধরা পরে রাফির ভেতরে। এক সময় জানতে পারি ও মানে আমার ভাগ্না মানসিক প্রতিবন্ধী,নতুন একটা শব্দের সাথে আমাদের পরিচয় ঘটে অটিজম। এক ধরনের মানসিক প্রতিবন্ধকতা,এদের সামাজিক জ্ঞান থাকে না।
একই ঘটনা দেখি আমার মামার জীবনেও,টিএসসি তে মামা মামীর প্রেম ছিল দেখার মত। মামা বুয়েটের আর মামী ঢাবি'র।
মামী রান্না করে নিয়ে আসতেন মামাকে খাইয়ে দিতেন আর যখন মামার মোচে লেগে যেত তখন মামী ওড়না দিয়ে মুছিয়ে দিতেন,আমি আড়ালে থেকে দেখতাম আর বন্ধুদের নিয়ে হাসতাম,দেখ কি প্রেম!?
আহারে জীবন-ওনারা যখন বিয়ে করেন তার কয়েক বছর পর থেকে শুরু হয় সমস্যা, ওনাদের বাচ্চা হয় না,মামা মামী চিকিৎসার পাশাপাশি শুরু করেন আল্লাহর কাছে চাওয়া। আল্লাহ এক সময় ওনাদের মুখের দিকে তাকান,ছেলে হয় ওনাদের-কিন্তু আফসোস ছেলেটা ও অটিস্টিক চাইল্ড। জানতে পারি বাংলাদেশে এই সমস্যাটা নতুন হলেও উন্নত বিশ্বে পুরাতন। এখন অবশ্য প্রতি ১০ টা বা আরও কম শিশুর মধ্যে এক জান অটিস্টিক। তাই এসব দেখে আমরা এখন ভয় পাই,আমাদের ভাগ্যে যদি এমন হয়।
অপ্সরার চিন্তিত মুখ দেখে আমি আশ্বাস দেই,আরে দুর উল্টা পাল্টা কথা বাদ দাও তো। কিন্তু আসলেই কি বাদ দেয়া যায়। একটা শিশু তো অনেক কিছু,শিশুর জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা পর্যন্ত জড়িয়ে থাকে অনেক কিছু অনেক স্বপ্ন অনেক আশা, আর সেই স্বপ্নের দূত যদি অস্বাভাবিক হয়,তো। পেপারে পড়ি অটিস্টিক চাইল্ডের মায়েদের কলাম। কিন্তু তাদের কষ্ট কি আমরা অনুভব করতে পারবো,কখনওই না।
অবশ্য আশাও করি না পরম করুণাময় কাউকে এই কষ্টের মুখোমুখি করাক।
তবে কেন কেন পরম করুনাময়,কেন মানুষকে এত দুঃখ দিয়ে পৃথিবীতে পাঠালে,কেন তোমার করুনা ধারায় আমাদের স্নান করাও না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।