আমি নিজের মাঝে খুজে পেতে চাই আমার আমাকে। যেতে চাই বহুদূর। ভারতের কেরালা রাজ্যের নীলাম্বুর এলাকার কিশোরী সাজিদা। এটি তার প্রকৃত নাম নয়, ছদ্মনাম। সাত বছর আগে কুয়েতপ্রবাসী এক ছেলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।
বিয়ের মাত্র ১৫ দিনের মাথায় তার স্বামী কুয়েত চলে যায়। তখনই অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে সাজিদা। এখন সে ছয় বছর বয়সী ছেলের মা। এই সময়ে তার স্বামী আর দেশে আসেনি। দীর্ঘদিন ধরে সে একাই সন্তানের দেখভাল করছে।
একই রাজ্যের ১৮ বছর বয়সী আরেক বিবাহিত নারী আয়েশা। দুই বছর আগে তাঁর বিয়ে হয়েছে। তাঁর বিয়েতে যৌতুক হিসেবে দেওয়া স্বর্ণ ও নগদ অর্থ স্বামী মধ্যপ্রাচ্যের দেশে যাওয়ার জন্য খরচ করেছেন। বিদেশ যাওয়ার পর স্বামীর সঙ্গে তাঁর আর কোনো যোগাযোগ হয়নি। সেই থেকে আয়েশা বিষণ্নতায় ভুগছেন বলে জানালেন তাঁর বাবা আবদুল করিম।
এমন বিষণ্নতা শুধু সাজিদা বা আয়েশার নয়; ভারতের দক্ষিণের প্রদেশ কেরালার আরব সাগর উপকূলের বেশ কয়েকটি গ্রামের মেয়েদের বিবাহিত জীবন এভাবেই কাটে। মুসলিম-অধ্যুষিত এই অঞ্চলের বেশির ভাগ ছেলে মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করেন। পাত্র হিসেবে এসব ছেলে কনের পরিবারের কাছে খুব আদরের। বেশির ভাগ ছেলে বিদেশ থেকে এসে বিয়ে করে দীর্ঘ সময়ের জন্য আবার চলে যান। এ কারণে বিবাহিত হয়েও বিধবার মতো জীবন কাটাতে হয় তাঁদের স্ত্রীদের।
মাল্লাপুরাম জেলার জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা সুজাতা জানান, এমন বিয়ের ফলে দাম্পত্য জীবন খুব সংক্ষিপ্ত হয়। বিয়ের ১৫-২০ দিনের মধ্যে স্বামীরা চলে যান। দীর্ঘদিন তাঁদের আর আসার খবর থাকে না। আর যদি আসেনও, এক মাসের বেশি থাকেন না। বিয়ের পর এমন বিচ্ছেদের জন্য স্ত্রীরা তৈরি থাকেন না।
এতে তাঁরা দীর্ঘমেয়াদি নানা শারীরিক ও মানসিক কষ্টে ভোগেন।
চিকিত্সকেরা এই বিপর্যয়ের নাম দিয়েছেন ‘গালফ সিনড্রোম’। এমন উপসর্গে আক্রান্ত বিষণ্ন বিবাহিত নারীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সরকার জেলা ও গ্রামপর্যায়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দিয়েছে।
এমনই একজন পরামর্শক রামলাথ প্রতিদিন সরকারি হাসপাতালে গড়ে ১০ জন এমন নারীকে পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, বিয়ের পর এমন সংসার-জীবনের জন্য প্রস্তুত না থাকায় নারীরা শারীরিক ও মানসিকভাবে কষ্টে থাকেন।
একসময় বিয়ে বিচ্ছেদের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এ অঞ্চলে এই সংখ্যা বাড়ছে।
ডানপন্থী রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াত-ই-ইসলাম হিন্দ এ অঞ্চলের ‘বিবাহিত বিধবা’ নারীদের জন্য বেশ কয়েক বছর ধরে কাজ করছে। সংগঠনটির কর্মকর্তা নাসিরউদ্দিন আলুনগাল বলেন, এমন বিয়ের একমাত্র ইতিবাচক দিক হচ্ছে, একজন নারী অল্প বয়সেই নিজের জীবন পরিচালনার দক্ষতা অর্জন করেন। পুরুষ থাকলে নারী পরিবারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যায়ে অংশ নিতে পারেন না। তবে এমন পরিবারে সাধারণত নারীই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।
তবে তাঁদের সংগঠন ভারতেই কাজের সন্ধান করতে স্থানীয় লোকজনকে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানালেন নাসিরউদ্দিন আলুনগাল। কারণ, মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশে কাজের জন্য গেলে কর্মীর পাসপোর্ট নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান রেখে দেয়। এতে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান না চাইলে ওই পাসপোর্ট নিয়ে কর্মীর দেশে ফেরাটা অসম্ভব হয়ে পড়ে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।