আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স ও আমাদের শেয়ার বাজার নিয়ে কিছু কথা

মহাবিশ্বের সবচেয়ে জটিল যন্ত্রটির মালিক আমরা এখানে সবাই, কিন্তু কয়জন চেষ্টা করি এটার সঠিক ব্যবহার-প্রণালী সংগ্রহ করার এবং তা ব্যবহার করার !

(এক মাস আগে লিখেছিলাম এই প্রতিবেদনটি, তখন আমার ব্লগিং স্ট্যাটাসের কারনে প্রথম পাতায় আসেনি লেখাটি। তাই আজকে আবার প্রকাশ করলাম । আমার বিশ্লেষণ ঠিক আছে কিনা সে ব্যাপারে আপনাদের মন্তব্য আশা করছি । ) আজকের(২৮। ০৬।

২০০৯) প্রথম আলোর "অর্থ ও বাণিজ্য" পাতায় "আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আয়কর হার ব্যাংকের চেয়ে কমানোর দাবি" শিরোনামে একটা খবর প্রকাশিত হয়েছে। Click This Link আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আয়কর হার ব্যাংকের চেয়ে কমানোর দাবি খবরটা পরে আমি একটু আগ্রহী হয়ে উঠলাম পুরো ঘটনাটা জানার জন্য। এরই মধ্যে বেশ কিছু মজা তথ্য 'আবিষ্কার' করেছি। খুঁজে পেলাম জনাব মফিজউদ্দিন সরকার লংকা বাংলা ফাইন্যান্সের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর। যাই হোক, লংকা বাংলা ফাইন্যান্সের ওয়েবসাইটে ২০০৮ সালের অর্ধ বার্ষিকী financial statement এর খোঁজ পেলাম, তারা এখনো ২০০৮ সালের পুরো অর্থ বছরের financial statement প্রকাশ করেনি।

প্রথম ৬ মাসে(২০০৮ সালের) লংকা বাংলা মোট প্রায় ২৫কোটি ২৯ লাখ টাকা করপূ্র্ববতী(Income before taxes) আয় করেছে। করের জন্য তারা Provision রেখেছে ৪ কোটি ৮২ লাখ টাকার মত অর্থাৎ তাদের করপরবর্তী(Income after taxes) মুনাফা হচ্ছে ২০ কোটি ৪৭ লাখ টাকার মত। তার মানে দাড়াচ্ছে তারা ২০% এর মত ইনকাম ট্যাক্স প্রদান করবেন ২০০৮ এর জন্য। আমি বুঝতে পারছিলাম না এটা কিভাবে সম্ভব : খবরে বলা হচ্ছে ৪৫% ইনকাম ট্যাক্স, তারা প্রদান করছেন ২০% ইনকাম ট্যাক্স কিন্তু তারপরও তারা দাবি জানাচ্ছেন ট্যাক্স কমানোর! এরপর আমি কয়েকটা ব্যাংক এর financial statement খুঁজে বের করলাম। ইসলামী ব্যাংক ২০০৮ সালে করপূ্র্ববতী মুনাফা করেছে ৬৩৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, করের জন্য তারা Provision রেখেছে ৩৬৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা, মোট মুনাফা (Income after taxes) ২৬৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।

ইসলামী ব্যাংক ২০০৮ সালে সরকারকে ৫৭% ইনকাম ট্যাক্স দিয়েছে। এই সময় আমি কিন্তু সম্পূর্ণ Confused ! আরব বাংলাদেশ ব্যাংকের (AB Bank) ২০০৮ সালের Profit and Loss Account থেকে পেলাম নিচের তথ্যগুলো। AB Bank এর করপূ্র্ববতী আয় ৩৬০ কোটি ০৬ লাখ টাকা, করের জন্য তারা Provision রেখেছে ১৩০ কোটি টাকা, মোট মুনাফা (Income after taxes) ২৩০ কোটি ০৬ লাখ টাকা। কর প্রদানের হার ৩৬%। এইরকম উদ্ভট তথ্য সংগ্রহ করে এর কোন মানে বের করতে না পেরে আরো নিখুঁত ভাবে financial statement গুলো পড়তে শুরু করলাম।

ইসলামী ব্যাংক ২০০৮ সালে শেয়ার কেনাবেচার ব্যবসা করে ৪০ কোটি টাকা আয় করেছে, এখনকার কর আইন অনুযায়ী এই আয়ের উপর সরকারের কোন দাবি নেই। MS Excel এ এই সংখ্যাগুলো নিয়ে একটু খেলাধুলা করার পর ব্যাংকগুলোর Effective Income Tax টা বের করে ফেললাম। ツ প্রতি ১০০ টাকা আয়ের জন্য একটা ব্যাংককে ৬০-৬১ টাকা কর দিতে হয় সরকারকে। এখন কথা হচ্ছে কিভাবে তাহলে AB Bank মাত্র ৩৭ টাকা এবং লংকা বাংলা ফাইন্যান্স মাত্র ২০ টাকা কর দিচ্ছে? কারণ হচ্ছে বাংলাদেশে ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স দিতে হয়না। AB Bank ২০০৮ সালে ১৩৭ কোটি টাকা আয় করেছে শেয়ার কেনাবেচা করে।

এই আয়ের উপর তাদেরকে কোন কর দিতে হবেনা। মজার ব্যাপার হচ্ছে, শেয়ারবাজার থেকে এই আয় তাদের মূল ব্যবসার (Core Banking) লাভের চেয়ে বেশি ; যেটার পরিমাণ হচ্ছে ৯৩ কোটি টাকা । এই করবিহীন আয়ের জন্যই তারা মোট আয়ের উপর এত কম কর দিতে সফল হচ্ছে। লংকা বাংলা ফাইন্যান্স এর এই করবিহীন আয়ের পরিমান তাদের মোট আয়ের সিংহভাগ দখল করে আছে। এখন কথা হল: তাতে সমস্যা কোথায়? সমস্যা আছে এবং বিশাল বড় এক সমস্যা সেটা।

এই সহজ টাকার লোভে পড়ে প্রায় প্রতিটা ব্যাংকই এই অনুৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়িয়ে চলেছে এবং পুরো ফাইন্যান্সিয়াল সিস্টেমকে এক বিশাল বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে। এই কারনেই ঋণ প্রদানে সুদের হার কমে আসছে না। ঋণ দিয়ে সুদ থেকে যে লাভ হয় তার ৬০% সরকারকে কর হিসেবে দিয়ে দিতে হয়, অন্যদিকে Market Manipulation করে যে আয় হয় তা থেকে এক পয়সাও ট্যাক্স দিতে হয়না। সমাধান কি এই সমস্যার? একটা সহজ সমাধান হচ্ছে, লিমিটেড কোম্পানি গুলোর জন্য ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারে ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স(Capital Gain Tax) আরোপ করা। কর আরোপের বিষয়টা ব্যক্তিখাতের ক্ষেত্রে এভাবে করা যেতে পারে: ব্যক্তিখাতে কোন ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স(Capital Gain Tax) আরোপ করা হবে না যদি তারা অন্ততঃ ১ বছরের জন্য শেয়ারগুলোর মালিক থাকেন, না হলে ১০% ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স(Capital Gain Tax) আরোপ করা হবে ।

এতে বিনিয়োগকারিরা দীর্ঘ মেয়াদি চিন্তা করে বিনিয়োগ করবেন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানিগুলোর স্টক এড়িয়ে চলবেন। এতে সরকারের আয়ের একটা নতুন পথ বাড়বে, সরকার তখন ব্যাংক গুলোর মূল ব্যবসার উপর কম কর আদায় করলেও বাজেটে এর বেশি প্রভাব পড়বেনা। ব্যাংকগুলো তখন ঋণের সুদের হার কমিয়ে আনতে পারবে এবং উrপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ বাড়বে। আর উrপাদন বাড়লে ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স(Capital Gain Tax) দিয়েও কোম্পানিগুলো আগের চেয়ে বেশি লাভ করতে পারবে। আরেকটা বড় লাভ হবে শেয়ারবাজারে পাগলামিটা কিছুটা হলেও কমবে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।