আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার যৌবন মিশিয়া গেল জলে............

জীবনকে খুব কাছ থেকে দেখতে চাই। গতানুগতিকতার গন্ডি থেকে মুক্তি চাই। এতে হয়তো শুনতে হবে অনেক অপমানের বাণী। ভয় করি না।

আমার রুমমেট বাসিত ভাই।

ইদানিং তাকে দেখছি সারা দিন বেশ হাসি খুশি থাকেন। যেই বাসিত ভাইয়ের পেটে বোমা মারলেও কোন শব্দ বের হত না সেই বাসিত ভাই পর্যন্ত সেদিন আমাকে বলছে,ইমির কি অবস্থা তোমার?কেমন আছ?তোমার সাথে তো কখনও ভাল মত কথা বলাই হয় না। আমি নিজের কানকে বিশসাস করতে পারলাম না। কি ব্যাপার এ কি সেই বাসিত ভাই। আমি বললাম কি ব্যাপার বাসিত ভাই?আপনার হটাত এই পরিবর্তন কেন? বাসিত ভাই বললেন তুমি জুনিওর মানুষ এই সব বুজবানা।

জটিল বিষয়। জটিল বিষয়টা ২ দিন পরে বুজলাম। রাত ১ টার সময় হটাত ঘুম ভেঙ্গে গেল। দেখি বাসিত ভাই যেন কার সাথে মোবাইলে কথা বলছে। দেখি বাসিত ভাই কাকে যেন বলছেন,"জানু পাখি তুমি কেমন আছ?আমার ময়না পাখি তোমার জন্য এ হৃদয় সারা দিন হাহাকার করে।

"আমার ঘুমের ১৩ টা বাজল,পরদিন আমার পরিক্ষা। আমি বাসিত ভাইকে বললাম কি শুরু করলেন ভাইয়া। একটু শান্তি মত ঘুমাইতে দিবেন না?বাসিত ভাই দেখি এবার ফিসফিস করে কথা বলতে লাগলেন। পরদিন পরিক্ষা দিয়ে আসার পর বাসিত ভাইয়ের কাছে সব শুনলাম। ভাইয়াকে একটা মেয়ে মোবাইলে কল করে।

ভারি মিষ্টি মেয়েটির গলা। মেয়েটা আমেরিকা থাকে। তাই এখন শর্ট ভিজিটে দেশে আসছে। উদ্দেশ্য সে এখন বিয়ে করে তার বর কে নিয়ে আমারিকা যাবে। ভাইয়ার কোন ফ্রেন্ডের কাছ থেকে উনার নম্বর পেয়েছে।

এখন তার ভাইয়াকে অনেক পছন্দ হয়েছে। আর ভাইয়াও তার প্রেমে মোবাইলে ডুবে ডুবে কথা বলে সারা দিন। ভাইয়াও সারাদিন খুশি থাকে। বলে ইমির আমি আমেরিকা যাচ্ছি। তোমার জন্য কি পাঠাব বল?তোমার তো একটা মোবাইল সেট দরকার তাই না? আমি বললাম ভাইয়া কিছু লাগবেনা।

গেল সপ্তাহে যেই ১০০০ টাকা নিয়েছেন এইটা দিলেই চলবে। ভাইয়া আহত গলায় বললেন শুন মানুষের অবস্থা সবসময় এক রকম যায় না। তা ছাড়া আমি গেলে তোমাকেও পরে হেল্প করতে পারব । তাই না? আমি বললাম না ভাই। আপনার কষ্ট করা লাগবে না।

এমনিতেই অনেক ভাল আছি। যাই হোক ভাইয়া সারা দিন তাকে কল দেয়। আর রাতে শুরু হয় ৩০ পয়সার কথা। ভাইয়ার জন্যে রুমে ঘুমানো কঠিন হয়ে গেলে আমি পাশের রুমে আমার বন্ধু মাসুমের সাথে ঘুমানো শুরু করলাম। এদিকে ভাইয়া পরদিন আমাকে বললেন, ইমির ৫০ টা টাকা দাও তো।

তোমার ভাবির নাকি এখন টাকা খুব দরকার। তার কাছে সব ডলার তো। তাই সে কাউকে ফোন করতে পারছেনা। আমি বললাম আপনি কবে থেকে তাকে টাকা পাঠানো শুরু করছেন? -সে তো অনেক দিনই পাঠাচ্ছি। সে কয়েকদিন পর তার ডলারকে টাকা করবে।

তারপর আমাকে দিবে। আমি চোখ কপালে তুলে তাকে বললাম আপনি যে কিসের পাল্লায় পরেছেন। ভাইয়া আমাকে বললেন নাহ তুমি যে কি বল?সারাদিন বই পড়তে পড়তে তোমার মাথা আউলাইয়া গেছে। আজকে বিকালে আমাদের শাহবাগে দেখা করার কথা। সন্ধ্যা বেলা ভাইয়া আমাকে কাঁদ কাঁদ গলায় সব খুলে বল্লেন।

তার মুখটা খুব মলিন লাগল। বিকালে ভাইয়া যাদু্যঘরের সামনে গিয়েছিলেন। সেখানে তার প্রেমিকার আসমানী রঙের শাড়ি পরে আসার কথা। কিন্তু আসেপাশে কাউকেই আসমানি রঙের শাড়ি পরা অবস্থায় দেখলেন না। অনেক ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর এক জন বয়স্ক ভিখারিনী ভাইয়ার কাছে বললেন, "বাবা আমারে ১ টা টেহা দাও।

ভাত খামু"। ভিখারিনীটা আসমানী রঙের শাড়ি পরিহিত ছিল। এরপর সেই মেয়ে আর ভাইয়াকে কল দেয়নি। ভাইয়ার মুখটা দেখে আমার কেন যেন অনেক খারাপ লাগছিল। বেচারার তখন খুবই খারাপ অবস্থা।

ভাইয়া করুণ সুরে গান গাইছেন- আমার যৌবন মিশিয়া গেল জলে, আমার চৌক্ষু ভাসিয়া গেল নোনা জলে...........।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।