আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঢাকা: মানবজটই মূল সমস্যা। আর কোন উন্নয়ন না করাই হবে ইহাকে রক্ষার একমাত্র উপায়!

নৌকা আর ধানের শীষে ভোট দিয়ে সোনার বাংলার খোয়াব দেখা আর মান্দার গাছ লাগিয়ে জলপাইর আশা করা একই! বিস্ময়ের ব্যাপার হল দিনের পর দিন আমরা তাই করছি!!
কথাটা উদ্ভট শুনালেও, অতি যৌক্তিক ও সত্য হতে বাধ্য। ব্যাপারটা খোলাসা করা যাক। ঢাকা নিয়ে অভিযোগ- যানজট, পানি সংকট, জলাবদ্ধতা, আবর্জনা ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এগুলো গাছের শাখা-প্রশাখা। মূল হৈল- মানবজট।

এবং তা ক্রমবর্ধমান। ঢাকা মুখী মানুষের মিছিল দিনকে দিনকে গাঢ় হচ্ছে। অনেকেই ঢাকায় অস্থায়ী মেহমান থেকে স্থায়ী বাসিন্দা হচ্ছে। বিপরীতে ঢাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছে এমন লোক নেই বললেই চলে। থেকে যাওয়া লোকজন খাচ্ছে, থুথু ফেলছে, প্রসাব পায়খানা করছে, হাঁটছে, বিছানা পাতছে, যানবাহনে সিট খুঁজছে।

ভীড় ভাট্টা বেড়েই চলেছে। যত বড় পরিকল্পনা, মহাপরিকল্পনা, Strategic Transportation Plan করা হোক না কেন; ওয়াসা, রাজউক, ডিসিসি যতই করিৎকর্মা হোক না কেন; এমনকি পুনরায় কলেমা পড়ে তারা চুরি চামারি ছেড়ে দিকনা কেন; সম্পুর্ন অ-পরিকল্পিত এ মানবস্রোতকে ঠেকানো না গেলে এবং বিদ্যমান অসম্ভব ঘন এ মানবজটকে বিভিন্ন স্থানে বিকেন্দ্রিকরন না করা গেলে ঢাকা কে বাচানো মুশকিল হবে। এটাই বাস্তবতা। ভাবা যাক- কেন ঢাকায় এত মানুষ? কেন প্রতিদিন আরো মানুষ আসছে? উত্তর- একটাই ঢাকা বিরাট 'সুযোগ সুবিধা'র শহর! প্রচুর মানুষ ঢাকায় রওনা দেয় কিছু একটা হয়ে যাবে এ ভেবে! ভেংগে ভেংগে দেখলে- অস্থায়ী ভাবে ঢাকায় আসে লাখো মানুষ, লাখো কারন জজকোর্টের রায় শেষ, হাইকোর্টে আপিল করব। লোকাল ডাক্তার দেখাইছি, কোন কাজ হয়নি, বড় ডাক্তার দেখাতে হবে।

বাড়ীর পাশে স্কুলে বদলি হতে চাই, তদবির করব শিক্ষা ভবনে। সৌদি আরব যাব, দু'দিন আগেই চলে যাওয়া ভাল, মামার বাসা আছে। ইন্টার পরীক্ষা দিছি, বসে থেকে কি লাভ, কোচিং করব। ট্রেনিং আছে হেড অফিসে। চাকরির এপ্লাই করছিলাম রিটেন ইন্টারভিউ দিতে আসছি।

কখনো ঢাকায় আসিনি, বেড়াতে আসছি। ইত্যাকার অজস্র উছিলায় সহস্র মানুষ ঢাকার পথে ধাবমান। প্রতিদিন, প্রতিক্ষন। এছাড়া দিনের বেলায় গাজীপুর, সাভার, মুন্সিগন্জ, নরসিংদী থেকে যোগ দিচ্ছে লাখো মানব। কাজের খোজেঁ ঢাকার পথে: নিরক্ষর টু ডক্টরেট একই দুর্ভাগ্য ঢাকার বাইরে কোন কাজ নেই।

উত্তরান্চল থেকে ট্রাকের পিঠে চড়া শ্রমিক, সদ্য চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা বা সিলেট অঞ্চলের কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সবারই একই অখন্ডিত কপাল! চাকরি চাও তো, ঢাকায় চল। চিটাগাং এর মত ২য় বৃহত্তম শহরে থেকেও কিছুই হয়না। হওয়ার মত কোন মেকানিজম গড়ে উঠেনি। সরকারী, প্রাইভেট, এনজিও, স্বদেশী বা ভিনদেশী প্রায় সব কোম্পানীর (আবুল খায়ের, বিএসআরএম, কেডিএস গ্রুপ- এরকম দু একটা বাদে), হেড অফিস ঢাকায়। ১টি চাকরি পেতে সফল ও অসফল মিলে ১০০ ইন্টারভিউ দিতে হয়।

এমনকি অনেক প্রতিস্ঠান সিভিতে ঢাকার বাইরে ঠিকানা দেখলে ডাকেনা। সুতরাং..। গার্মেন্টস শ্রমিক, ঠেলা, রিকশা, মুটে, মজুর, নির্মান শ্রমিক, ফেরীওয়ালা এসবের জন্যও ঢাকা। সুতরাং যেভাবে হোক ঢাকায় থাকতে হবে। বড় পাপী সরকার কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বন, পরিবেশ, হাওড়, কৃষি সকল সরকারী দপ্তর অধিদপ্তর পরিদপ্তর বিভাগ ঢাকায়।

নানান কারনে প্রাইভেট সেক্টর সরকারকেই অনুকরন করতে বাধ্য হয়। তাই করেছে। স্থানীয় পর্যায়ে ট্রেড লাইসেন্স করা ছাড়া আর কোন রেগুলেটরী সার্ভিস পাওয়া যায়না। সুতরাং, ঢাকায় হেড অফিস না করা তাদের জন্যও ভোগান্তির। ঢাকার আকর্ষন কমাতে হবে! ফ্লাই ওভার, মনোরেল, পাতালরেল তথাকথিত তিলোত্তমা ইত্যাদি করে ঢাকাকে আরো আকর্ষনীয় করলে এখানে আরো লোক আসবে।

ঝামেলা আরো পাকবে। সম্পুর্ন বাস অযোগ্য হবে নগরটি। চাকুরী, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সরকারী কাজ ইত্যাদির জন্য আরো দরকারী হলে আরো মানুষ ঢাকায় আসবে। ঢাকার আকর্ষন/প্রয়োজন আর বাড়তে দেয়া/বিদ্যমান লেভেলে থাকা হবে আত্নঘাতী! এটা কমাতে হবে। অর্থাৎ ঢাকার আর কোন উন্নয়ন না করাই হবে বাঞ্চনীয়।

সমাধান একটাই- বিকেন্দ্রীকরণ কথাটা পল্টনের বা সেমিনারের ভন্ডামীর জন্য নয়। বাচতে হলে এ ছাড়া আর উপায় নাই। অন্তত: বিভাগীয় শহর গুলোকে জাগাতে হবে।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.