পেছনের সমান্তরাল পথটুকুও আজ আর ফিরে দেখি না..।
দোতলায় উঠেই বুঝতে পাড়লাম, ক্লাস হচ্ছে না আজ। প্রথমেই মনে পড়লো ঠিক দুটোয় রুহানের চায়ের দোকানটার সামনে দাড়িয়ে থাকার কথা, আর এখন বাজে বারোটা। এই দুটো ঘণ্টা আমি কোথায় বসে থাকি? ভাবতে ভাবতেই মনে হল বসে না থেকে আমি তো রুহানের কোচিং এও চলে যেতে পারি। যদিও এর আগে যাওয়া হয়নি।
কোথায় ওর ক্লাস হয় তাইবা কে জানে? তবে বিল্ডিংটা চিনি ভালোমতোই। আবার তাই প্যান্ট গুটিয়ে, ওড়নাটাকে গলায় মাফলারের মতো করে পেঁচিয়ে নিয়ে রাস্তায় নামলাম। অন্য দিন এই সময়টায় ফার্মগেটের কোচিং পাড়ায় ছেলেপেলেদের যন্ত্রণায় আর রিক্সার ধাক্কায় রাস্তায় নামতেই ভয় লাগে অথচ আজকে রাস্তা সম্পূর্ণ ফাঁকা। কালকে সারা রাত ধরে বৃষ্টি হওয়াতে সুধু এই রাস্তা নয় পুরো ঢাকাই যেন আজ ফাঁকা...........
রুহানদের কোচিং বিল্ডিং এর প্রায় সবগুলো ফ্লোর ঘুরেও যখন রুহানের কোনই হদিস পাওয়া গেল না, মনটাই খারাপ হয়ে গেলো। মনে মনে বৃষ্টির গুষ্টি উদ্ধার করতে করতে নিচে নামলাম।
ফার্মগেট ব্রিজের নিচ দিয়ে হেটে রাস্তা পার হয়ে আবার প্রাইমেটের সামনে এসে দাড়াতেই দেখি একটা দোকানের দেয়ালে হেলান দিয়ে মাহবুব আর রুহান কথা বলছে আর আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। সামনে গিয়ে রুহানের হাতে ছাতাটা ধরিয়ে দিয়ে বললাম চল কথাও খেতে যাই বেশ খিদে পাইছে, রুহানের সহাস্য উত্তর, ক্যান তুমি কি কামলা খেটে আসছ? দুপুর ইতো হয় নাই, এতো জলদি খিদে পাইছে কেন?? তারপর আমরা তিনজন একটা রিক্সা নিলাম। এর মধ্যেই আবার ভয়াবহ বৃষ্টি নামলো। আমরা রিক্সার হুড ফলে দিয়ে একটা বিশাল বড় ডাণ্ডা ওয়ালা ছাতা মেলে দিয়ে অর্ধেক ভিজতে ভিজতে গেলাম এলিফ্যান্ট রোডের একটা চাইনিজ এ, রাস্তায় তখন হাঁটু পানি। রিক্সা ওয়ালাতো বিরক্তির চরমে কিন্তু আমাদের সেকি উচ্ছ্বাস, এর মধ্যে মাহবুব কোথা থেকে একটা তোয়ালে জোগাড় করে ফেললো।
সেই তোয়ালে গায়ে জড়িয়ে আমি সেদিন সারা শহর ঘুরেছি।
সেইদিনটা ছিল ঢাকার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হওয়া দিনগুলার মধ্যে কোন একটা, শুধু বৃষ্টির পানিতে ঢাকা সেদিন প্রায় ডুবেই গিয়েছিলো। আমার মনে আছে মিরপুর রোড এ আমরা ফেরার পথে সেকি অবিশ্বাস্য অবস্থা, রিক্শওয়ালা পানির তোড়ে পায়ে হেটে রিক্সা টেনে নিয়ে যাচ্ছে, পানি তার প্রায় বুক ছুঁই ছুঁই। রিক্সা পানি কেটে কেটে এগিয়ে যাওয়ায়, আমার কাছে বেশ নৌকা নৌকা একটা ব্যাপার মনে হচ্ছিলো। রুহান আর মাহবুব ও মাঝে মাঝে রাস্তায় নেমে যাচ্ছিলো রিক্সা থেকে।
তাই ওরা ও বৃষ্টির পানিতে মোটামুটি গোসল দিয়ে ফেলছে। আশেপাশের সবাই যেন নৌকায় চড়ছে এমন একটা ভাব।
সাইন্স ল্যাব এর সামনে দিয়ে এক ছাতার নিচে হাটতে হাটতে রুহান যখন আমাকে বলল, তোমার কাঁধে একটু হাতটা রাখি? আমি হ্যাঁ বলায় সেদিন ওর অসম্ভব শান্ত চেহারাতে কি অদ্ভুত রকমের খুশি ঝলমল করছিলো তা মনে করে আমি এখনো ভেতরে অপরাধ বোধের কষ্ট টের পাই.......
সারাদিন অবিরাম অবিশ্রান্ত বর্ষা, ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধ, কাক ভেজা একটা ঢাকা শহর এর বিল্ডিংগুলি যেন সেদিন অনেকটাই ধোঁয়াটে লাগছিলো। তারমধ্যে প্রায় পুরো ভেজা কামিজে জিনস এর প্যান্ট গুটিয়ে ওড়নার উপরে তোয়ালে জড়িয়ে সেই মেঘলা সুন্দর দিনটাতে ঢাকা শহর চোষে বেরানো। না এক ছাতার নিচে রুহান আর আমি।
কোনটা যে আমার কাছে বেশি আদরের আমি এখনো আলাদা করতে পারি না...........
আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে ব্লগ এর কথা শুনেছিলাম বোধহয় কদিন আগেই। আজকে যখন প্রথম বারের মতন পাতা উল্টে দেখলাম যা ইচ্ছে তাই লেখার এই গল্পের, দেখলাম বড্ড বৃষ্টির ঘোরে আছে সবাই। আজো নাকি আমার শহর বৃষ্টিতে মেতেছে। সবার মুখেই যেন শুধু তাই বৃষ্টির ই গল্প। সবার মুখের গল্প শুনে, বহুদিন আগেই ভুলে যাওয়া আমার রংধনু দিনগুলা হঠাৎই মনে পরে গেলো......
মেঘলা ধূসর দিনগুলাতেও কত রং এর ছড়াছড়ি ছিল,, আহারে......।
।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।