আবজাব বিষয়বস্তুর ব্লগ এটি। ভালো কিছু খুঁজে সময় নষ্ট করবেন না।
আদর্শ খাদ্য
শিানিলয় আইডিয়াল প্রি-ক্যাডেট স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র তামিম। ঐতিহ্যগতভাবে ফার্স্টবয়। স্কুলে ভর্তির সময় সবার প্রথম ভর্তি হওয়াতে সিরিয়ালে প্রথম ছিল।
সেই থেকে এখনও প্রথমই আছে। মেধাবী, কিন্তু অমনোযোগী। পড়ালেখার চাইতে অন্য বিষয়গুলোতে মনোযোগ বেশি। ক্রিকেট এবং কমপিউটার গেমস বিষয়ক চিন্তা ভাবনা সবসময়ই মাথায় ঘুরপাক খায়। মা’র শাসনের ফলে ‘ফার্স্টবয়’ ঐতিহ্যটা ধরে রেখেছে।
তবে প্রতিটা পরীার আগে সবাই ধারণা করে, এইবার সে ফেল করবে। সারাণ টেস্ট-ওয়ান ডে খেলার চিন্তাভাবনা মাথায় নিয়ে কোন ছাত্র পাস করতে পারে না।
স্কুলের কাস টিচার সাইদুর স্যার তামিমের বাবাকে ডেকে পাঠালেন। বললেনÑ আপনার ছেলে এইবার আর পাস করতে পারবে না। চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত প্রথম ছিল।
এবার পাস নিয়ে টানাটানি। একটি হোম ওয়ার্কও সঠিকভাবে করে না। আপনি কি জানেন, স্কুল ব্যাগে করে বই খাতা না নিয়ে ব্যাট বল নিয়ে স্কুলে আসে? ছেলেকে এখনই শাসন করেন নতুবা ভবিষ্যৎ খারাপ।
বাবা নির্বিকার ভঙ্গিতে তামিমের দিকে তাকালেন।
স্যার বললেনÑ এখনই একটা থাপ্পর দিয়ে দেন।
শাসনের প্রথম ডোজটা শুরু হয়ে যাক।
বাবা আগের মতই নির্বিকার ভঙ্গিতে খারাপ ভবিষ্যতটাকে ভালো করার জন্য তামিমের গালে একটা থাপ্পর দিলেন। স্যার খুশি হলেন।
তামিম কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরল। সব শুনে তার মা তাকে আর এক ডোজ দিলেন।
এই ডোজে ফল হলো। পরীার আগ পর্যন্ত ক্রিকেট শব্দটা মাথায় আর ইন করতে পারেনি।
আগামীকাল তামিমের স্কুলে সমাপনি পরীা শুরু। কঠোর অধ্যয়ন চলছে। তামিমের পাশেই বসে পড়ছে তার ছোট বোন তারিন।
প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী। সে পড়ছেÑ গরু ছাগল ও মোষ প্রভৃতি থেকে দুধ পাওয়া যায়। দুধ চমৎকার খাদ্য। দুধ শরীরের বিভিন্ন প্রয়োজন পূরণ করে। এজন্য একে আদর্শ খাদ্য বলা হয়।
তাদের মা দুধের গ্লাস নিয়ে বসে আছেন পাশে। তামিম একটু পরপর তাকাচ্ছে সেই দুধের গ্লাসটার দিকে। তার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট একটা খাদ্যবস্তু, যা প্রতিদিন তার মা তাকে জোর করে খাওয়ায়। পড়াতে একটু বিরতী দিলেই মা বলবেনÑ এখন এই দুধটা খেয়ে নাও, তারপর পড়। এই জন্য তামিম পড়াতে কোন বিরতি দিচ্ছে না।
বিরতি দেওয়া মানেই এক গ্লাস অখাদ্য খাবার খাওয়া। তার চেয়ে পড়া অনেক ভালো।
পড়তে পড়তে কান্ত হয়ে পড়েছে তামিম। বিরতি দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। মা তাকিয়ে আছেন তার দিকে।
তামিম ভাবছে, সুপারম্যানদের মতো তার কোন মতা থাকলে সে দুধের গ্লাসটা হাওয়া করে দিত। অথবা দুধগুলো জুস বানিয়ে দিত।
তামিমকে সুপারম্যান হয়ে দুধ হাওয়া করতে বা জুস বানাতে হলো না। বাবা ঘরে ঢুকে মাকে কি যেন বললেন, মা হতভম্ব হয়ে কিছুণ দুধের গ্লাসটার দিকে তাকিয়ে থাকলেন। তারপর বললেনÑ এই বিষ আমি কিছুতেই বাচ্চাদের খেতে দিতে পারি না।
এতদিন না জেনে খেতে দিয়েছি। জানার পরও খাওয়াবো? অসম্ভব!
তারপর দুধের কোম্পানিগুলোর নাম নিয়ে কিছুণ বকাঝকা করলেন। এরপর দুধের গ্লাসটা হাতে নিলেন ফেলে দেওয়ার জন্য।
তামিম মা’র হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে বললÑ মা আমাকে দাও, আমি ফেলে দেই।
দু’ভাইবোন দুই গ্লাস দুধ খুব মজা করে বেসিনে ফেলে দিল।
তারিন বললÑ ভাইয়া, মা আজকে দুধ খেতে দিল না কেন?
তামিম বললÑ জানি না। তবে বাবা বললেন, এই দুধে মেলামাইন না কি যেন আছে।
তারিন বললÑ মেলামাইন থাক আর স্টীল থাক। আজ থেকে আর আমাদের দুধ খেতে হবে না। মা প্রতিদিন দুধ তৈরি করে দিবে, আর আমরা বেসিনে ফেলে দিব।
খুব মজা হবে তাই না ভাইয়া!
রাজিব মামা পেছন এসে দাঁড়িয়েছে। মামাকে দেখে তামিম বলল, মামা আজ থেকে আর দুধ খেতে হবে না। দুধে মেলামাইন আছে, তাই দুধ খাওয়া বন্ধ। কি মজা তাই না মামা!
মামা বললেনÑ আরে গাধা, এটা মেলামাইন নয়, মেলামিন। জৈব এসিডের জাতক হচ্ছে ইউরিয়া, আর ইউরিয়া থেকে মেলামিন তৈরি হয়।
এটি একটা রাসায়নিক যৌগ।
তামিম বললÑ যে যৌগই হোক আমাদের দুধ খাওয়া বন্ধ।
মামা বলেই চললেনÑ সায়ানামাইটকে উত্তপ্ত করে মেলামিন তৈরি করা হয়। যা বিভিন্ন বাসন-কোসন তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। আর গুঁড়ো দুধে এই জৈব এসিডটি ব্যবহার করলে দুধ ধবধবে সাদা হয়।
গরম করলে দুধে সর পরে। এ কারণে কোম্পানিগুলো এই মেলামিন বিষ ব্যবহার করে। কিন্তু এটি শরীরে প্রবেশ করলে কিডনি বিকল হয়ে যায়। আমার রসায়ন বইয়ে এই জৈব-যৌগ সম্বন্ধে লেখা আছে। দেখবি আয়।
তামিম উদ্ধার করল, মামার রসায়ন বইয়েও বিষাক্ত মেলামিন পাওয়া গেছে। অতএব আজ থেকে পড়াশোনাও বন্ধ। কারণ মেলামিন শরীরের জন্য তিকর। কি মজা! দুধ খাওয়া বন্ধ। পড়াশোনাও বন্ধ।
তামিম মনে মনে কামনা করছেÑ এই বিষাক্ত মেলামিনটা যেন ক্রিকেট খেলাতে না পাওয়া যায়। তাহলে খেলাও বন্ধ হয়ে যাবে। তখন সে খুব কষ্ট পাবে।
মা চিন্তায় পড়ে গেলেন। বাচ্চাদের দুধ খাওয়াতে পারছেন না।
বাবাকে একটা উপায় বের করতে বললেন। বাবা বললেনÑ খাঁটি গরুর দুধ কোথায় পাই? ডেইরি ফার্ম থেকে দুধ নিব সেখানেও যে ভেজাল হবে না এমন নিশ্চয়তা কে দিবে?
মামা বললেনÑ দুলাভাই, খাঁটি গরুর দুধ নয়, গরুর খাঁটি দুধ হবে।
মা বললেনÑ এখন ভুল ধরিস না তো। বাচ্চাদের দুধ খেতে দিতে পারছি না। দুধ না খেলে তারা পুষ্টি পাবে কি করে?
মা বাবাকে যে করেই হোক গরুর খাঁটি দুধ আনতে বললেন।
শেষাংশ
ছোট মামাকে নিয়ে বাবা বাড়ির পোষা এলসেসিয়ানটা বিক্রি করে গাবতলি হাট থেকে একটা গরু কিনে এনেছেন। গরুর সঙ্গে একটা বাচ্চা গরুও আছে। গাড়ির গ্যারেজে রাখা হয়েছে গরু দু’টোকে। একটু পরপর দু’টো গরুই হাম্বা হাম্বা করছে। বিকেল করে একজন গোয়ালা এসে দুধ দুইয়ে দেয়।
তামিমের দুধ খাওয়া বা পড়ালেখা কোনটিই বন্ধ হয়নি। তাকে পঞ্চম শ্রেণীতেও ফার্স্ট হতেই হবে। তার মা গ্লাসে দুধ নিয়ে বসে পড়াচ্ছেন।
পাশে বসে তারিনও পড়ছেÑ আমাদের গ্যারেজে রাখা গরু থেকে দুধ পাওয়া যায়। খাঁটি দুধ চমৎকার খাদ্য।
খাঁটি দুধ শরীরের বিভিন্ন প্রয়োজন পূরণ করে। এজন্য একে আদর্শ খাদ্য বলা হয়।
(আগডুম বাগডুমে উনারা ছাপাইছে... আমি বলগে ছাড়লাম ... ...)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।