দক্ষিণ বাংলার অন্যতম সেরা প্রতিষ্ঠান বিএম কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করতে এসে প্রথম দিন কোনো ফুলেল শুভেচ্ছা পাননি প্রফেসর শঙ্কর চন্দ্র দত্ত। তার পরিবর্তে তার সমর্থিত দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ গতকাল তাকে বেদম পিটিয়ে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছে। এ ঘটনায় কলকাঠি নেড়েছেন বিদায়ী অধ্যক্ষ ড. ননী গোপাল দাস।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিএম কলেজের নতুন অধ্যক্ষ অধ্যাপক শঙ্কর চন্দ্র দত্ত গতকাল সকাল ১১টার দিকে কলেজে যোগদান করতে আসেন। কিন্তু গেট পর্যন্ত এলেই আন্দোলনরত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাকে ধাওয়া করে।
নিজ ছাত্রদের ধাওয়ায় প্রাণ বাঁচাতে একপর্যায়ে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন নতুন অধ্যক্ষ। কিন্তু তারা ধাওয়া করে পরে কলেজ থেকে ২শ’ গজ দূরে নতুন বাজার এলাকায় তাকে বেদম মারধর করে। এ সময় অধ্যক্ষের সঙ্গে থাকা লোকজনের সহায়তায় পালিয়ে রক্ষা পান তিনি। ক্যাম্পাস এলাকায় পুলিশের অবস্থান থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে নীরব ভূমিকা পালনের অভিযোগ রয়েছে। সরাসরি কলেজে গিয়ে যোগদান করতে না পেরে এরপর ডিজি অফিসে গিয়ে যোগদান করেন তিনি।
সূত্র জানায়, দুর্নীতিবাজ হিসেবে অভিযুক্ত বিদায়ী অধ্যক্ষ ড. ননী গোপাল দাসের বদলি ঠেকাতে বিএম কলেজে ছাত্রলীগের নেতারা এ কাণ্ড ঘটায়। গতকাল আন্দোলন বিক্ষোভের নামে তারা ক্যাম্পাসে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়।
বিভিন্ন সূত্র জানায়, কলেজ পরিচালনায় নানা অনিয়মের কারণে অধ্যক্ষ ড. ননী গোপাল দাসকে খুলনার বিএল কলেজে অর্থনীতি বিভাগের প্রধান করে ৩০ জানুয়ারি বদলি করা হয়। তার বদলির খবর প্রচার হওয়ার পর থেকে অবৈধভাবে ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়ে গঠিত ছাত্রকর্ম পরিষদের নেতারা ক্যাম্পাসজুড়ে আন্দোলন শুুরু করে। আন্দোলনের নামে কলেজের প্রশাসনিক ভবনসহ ২১ অনুষদে তালাবদ্ধ করে রাখা।
কলেজের কাছে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির সৃষ্টি হয়। এছাড়া ২ সপ্তাহ ধরে ক্যাম্পাসে চলছে বিক্ষোভ ও সমাবেশ। অভিযোগ রয়েছে, এসব সমাবেশে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশ নিতে বাধ্য করা হচ্ছে।
ঐতিহ্যবাহী বিএম কলেজে টানা দুই সপ্তাহ ধরে আন্দোলন কর্মসূচি চলাকালে শিক্ষার পরিবেশ পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
অব্যাহত এ তাণ্ডবে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থী-অভিভাবকসহ সচেতন মহল। সোমবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে বিএম কলেজের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। ওই সভার একটি সূত্র জানায়, একাধিক বক্তা অস্থিতিশীলতা দূর করতে রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের কামনা করেন। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
এদিকে গতকাল ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে নতুন অধ্যক্ষ প্রহৃত হওয়ায় বিভিন্ন মহলে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির বরিশাল বিভাগীয় শাখার আহ্বায়ক ও ইসলামিয়া কলেজের অধ্যক্ষ মহসিন-উল ইসলাম হাবুল বলেন, আমরা এ কলেজের ছাত্র, বিএম কলেজ আমাদের ঐতিহ্য ও গর্ব। সেই কলেজে ক্ষমতাসীন দলের এক শ্রেণীর নেতাকর্মী যে তাণ্ডব চালাচ্ছে তা আমাদের হৃদয়কে রক্তাক্ত করছে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা একজন অধ্যক্ষকে যেভাবে ধাওয়া করে প্রহার করেছে তা লজ্জাজনক। তার মতে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের একদল নেতাকর্মী ঐতিহ্যবাহী বিএম কলেজ ক্যাম্পাসে এমন নৈরাজ্য সৃষ্টি করলেও তা নিরসনে মূল দলের কোনো নেতার ভূমিকা না থাকায় স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়, এ ঘটনার পেছনে তাদেরও ইন্ধন রয়েছে।
একইভাবে সরকারি হাতেম আলী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফজলুল হক বলেন, একজনের বদলি ও আরেকজনের যোগদানকে কেন্দ্র করে সংঘটিত বিষয়টি খুবই লজ্জাজনক ও বিব্রতকর।
এ ঘটনায় আমরা নিজেরাও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি।
বিএম কলেজ ক্যাম্পাসে চলমান আন্দোলন ও নতুন অধ্যক্ষকে মারধরের ঘটনায় ক্ষুব্ধ অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের নেতারা। জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক হাফিজ আহমেদ বাবলু, বিএম কলেজ ছাত্রদল নেতা তরিকুল ইসলাম ইয়াদ, ছাত্রশিবির বিএম কলেজ শাখার সভাপতি গাজী আবু মুসা ছাড়াও ছাত্রলীগের একাধিক নেতার মতে অবৈধভাবে গঠিত ছাত্র কর্মপরিষদ বিদায়ী অধ্যক্ষের সহায়তায় বাকসুর তহবিল থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা তছরুপ করেছে। তিনি অন্যত্র যোগদান করলে বিষয়টি উন্মোচিত হবে বলে আন্দোলনের নামে এ নৈরাজ্য চালানো হচ্ছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।