বিকট
শকিং মুভি। এগুলো মূলত বিকৃত যৌনতা,ভায়োলেন্স আর পারভার্শনের মিশেলে গড়া। তবে এসব থাকলেই যে একটা ছবির শক ভ্যালু থাকবে, তা নয়। পরিচালকের মুনশীয়ানা না থাকলে সবটাই বৃথা। আমি নিজে ছবি দেখে শকড হতে পছন্দ করি।
সেলুলয়েডে অন্ধকারের মনস্তত্বের চিত্রায়ণ আমাকে কেন যেন খুব টানে। আর কথা না বাড়িয়ে তালিকায় যাই।
#La pianiste: অস্ট্রিয়ান পরিচালক Michael Haneke এর অসামান্য একটা চলচ্চিত্র। একজন নিঃসঙ্গ নির্লিপ্ত পিয়ানো টিচারের কাহিনী এটি। ত্রিশোর্ধ এরিকা।
মায়ের সাথে বসবাস করেন। কোন বয়ফ্রেন্ড নেই। ছেলেদের প্রতি তীব্র অনীহা। কোন এক অজানা কারণে,ছবিতে যা বলা হয়নি এরিকার মা হিজাবি মহিলাদের মত এরিকাকে ছেলে সংস্পর্শ থেকে বাঁচিয়ে রাখতে চান সবসময়। আপাতদৃষ্টিতে অতি সাধারণ এই এরিকা কিন্তু ভয়ংকর রকম মনোবিকারগ্রস্ত।
তার সবচেয়ে ছোট্ট উদাহরণ, পিয়ানো ক্লাশ শেষে তিনি মাঝেমধ্যে পর্নো মুভি দেখার বুথে গিয়ে একলা নিজের অবদমিত বাসনা মেটান। আরেকটা ছোট্ট উদাহরণ দেই, পার্কিং করে রাখা গাড়ীতে সঙ্গমরত তরুণ-তরুণীদের লীলা দেখতে জানালার কাঁচের সাথে সন্নিবিষ্ট হয়ে এরিকা সতৃষ্ণ চোখে তাকিয়ে থাকে।
আরো অদ্ভুত এবং ভয়ানক মনোবিকারের কাহিনী না হয় ছবিতেই দেখে নিয়েন। ছবির শেষ দৃশ্যটা একটা মাস্টারপিস। ওটা অবশ্য যাকে বলে প্রতীকি, অথবা সুররিয়্যালিজমের খেলাও বলা যেতে পারে।
এরিকার চরিত্রে ইসাবেলা হুপার্টের অভিনয় আমার প্রিয় তালিকার উপরের দিকেই থাকবে।
#Seul contre tous: কথা হচ্ছে যে, মানুষের মনের বিভৎসতম,অন্ধকারময় রূপ নিয়ে ছবি তৈরি করার আদৌ কি কোন প্রয়োজনীয়তা আছে? পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষই বাঁচার তাগিদে লড়ছে, কেউ বা বিলাসিতার চাদরে নিজেকে ঢেকে খুব করে ওম পোহাচ্ছে। তাহলে খামোখা কেন এইসব বিকৃতি, মনের অন্ধকার গলি ঘূঁপচি নিয়ে শিল্পের প্রয়াস? সে থাকগে!
এই ফরাসি ছবিটায় পরিচালক Gasper Noe একজন কসাইয়ের মনের ভেতরে ঢুকেছেন। যে কখনও হাসেনা। যার ভেতর কোন আবেগ জাতীয় অনুভূতি নেই।
মা হারা একমাত্র মেয়েটাই তার যাবতীয় সম্বল। কিন্তু মূক ও বধির এই মেয়েটাকে সে রেখে আসে কোন এক পরিচর্যা কেন্দ্রে।
ভাগ্যের অণ্বেষনে পাড়ি জমায় প্যারিসে, নতুন একজন সঙ্গীনী নিয়ে। কিন্তু নিরাসক্ত কসাই( তার নাম বলা হয়নি ছবিতে) ক্রমশঃ বিরক্ত হয়ে উঠতে থাকে তার অন্তস্বত্বা স্ত্রী আর বুড়ো শ্বাশুড়ীর ওপর।
একদিন সঙ্গীনির পেটে ক্রমাগত লাথি মেরে রক্তাক্ত করে বেড়িয়ে পরে তার পুরোনো শহরের উদ্দেশ্যে।
ছবিতে মনোলগ স্টাইলে তার চিন্তা ভাবনা, আক্রোশ, ঘৃণা আর ক্ষোভ দেখানো হয়েছে।
নেতিবাচক মানসিকতায় ভরা কসাই ধীরে ধীরে দারিদ্রের আঘাতে জর্জরিত হতে হতেও একসময় সুখ খুঁজে পেতে চায়। পাপ! পাপ!পাপ! ভয়ংকর পাপ। আমরা ঘৃনা করি এই নিকৃষ্টতম পাপকে, এবং পাপীকে। কিন্তু ছবিটাকে নয়।
পরিচালককে স্যালুট। এরকম ধাক্কা দেয়ার ক্ষমতা সবার থাকেনা।
#Mysterious Skin: এ ছবিটা আমার কাছে ভালো লাগেনি মোটেও। খুবই প্রেডিক্টেবল লেগেছে। ঐ আর কি, শৈশবে এ্যাবিউজড হয়ে মানসিকভাবে কিছুটা ভারসাম্যহীন একজন,আরেকজন হয়ে যায় জিগোলো! আর কিছুক্ষণ পর পর শকিং ভ্যালু বাড়াতেই হয়তোবা হোমোসেক্সুয়ালিটির অবতারনা।
তবে শেষের ফিনিশিংয়ে শকিং ব্যাপার স্যাপার আছে, বেশ ভালোভাবেই। ছবিটা পছন্দ না হওয়ার পরেও তালিকায় দিলাম, কারণ এটার আইএমডিবি রেটিং ৭.৯। ভালো লাগতে পারে হয়তো অনেকেরই।
#Requiem for a Dream: নাহ, এটায় কোন পারভার্শন, মনোবিকার এসব কিছু নেই। কিছু হতভাগ্য মাদকাসক্তদের নিয়ে তৈরি একটা ড্রামা।
কিন্তু শেষ পনের মিনিট দেখা খুব কঠিন, যদি আপনি ছবিটা প্রথম থেকে মনোযোগ দিয়ে দেখে থাকেন। চরিত্রগুলোর এমন করুণ পরিণতি, এবং চারজনের অবস্থার দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তর এমন নিপুনভাবে করা হয়েছে,....হ্যাটস অফ! ঐ দৃশ্যটার কথা কখনই ভুলতে পারবোনা। জেনিফার কনোলি। ড্রাগের নেশায় উন্মাতাল। কোন উপায় নেই তার।
ভালোবাসা, নৈতিকতা সব অর্থহীন। সেই পাপের ঘরে....একদল পারভার্ট তাকে ঘিরে সোল্লাসে বলছে ""Ass to ass...ass to ass" আমি প্রায় চিৎকার করে উঠেছিলাম! নার্ভের ওপর দিয়ে খুব চাপ গেছে সেইরাতে।
#Irréversible: আবারও Gasper Noe! এই ছবিটা একই সাথে শকিং, ডিসগাস্টিং, ডিস্টার্বিং যা খুশী বলতে পারেন। দশ মিনিটের ধর্ষণ দৃশ্য, শিমেল আর সমকামীদের উল্লম্ফন। সেইসাথে তীব্র প্রতিশোধ স্পৃহা, ভয়ংকর ভায়োলেন্স, আর ট্রাজেডি।
যথার্থ শকিং। কারো কারো কাছে এটা একটা পারভার্ট মুভি। আসলেই কি তাই? নাকি, মুভি এ্যাবাউট পারভার্টস? আসলে এই ছবির মূল চরিত্র হচ্ছে সময়। এই কারণেই রিভার্স ক্রোনোলজি। শুরুটাই শেষ, অথবা শেষটাই শুরু।
অনেকেই হয়তো দেখেছেন ছবিটা। যারা দেখেননি, তাদের জন্যে আগাম সাবধানবানী, নরম চিত্তের হলে ছবিটা না দেখাই ভালো। আর যারা নরম চিত্তের নন, তারা দয়া করে একটু অনুধাবনের মন নিয়ে পুরোটা দেখবেন
#Cutting Moments: একটা শর্টফিল্ম। আধাঘন্টার। কতটাই বা শকিং হতে পারে? ঠিক যতখানি হওয়া সম্ভব।
প্রচুর কাটাকুটি। প্রচুর রক্ত। কিন্তু সেটাই সব নয়। এর মাঝে আছে শক্তিশালী এক বক্তব্য। নীরস, ফ্যাকাশে হয়ে আসা দাম্পত্য জীবনকে এ যেন রক্তের লাল রঙে রাঙানো।
যে রক্ত হৃদয় থেকে উৎসারিত নয়, নয় প্রথম মিলনের সুখকর ব্যথাতুর রক্তক্ষরণের মত।
এটা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে একটা গল্প লিখেছিলাম, পড়তে পারেন।
Click This Link
ইচ্ছে ছিলো দশটা মুভির তালিকা করা। আপাতত এই ছয়টাই থাক!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।