^^^^^^^^^
স্কুলে গরুর রচনায় পড়েছিলাম আবসরে গরু জাবর কাটে। তা জাবর কাটা কি এই প্রশ্ন মাথায় আসতেই বাবা জবাব দিতেন চর্বিত চর্বন প্রক্রিয়া হলো রোমোন্থন বা জাবর কাটা। যদিও ভাল হজমের জন্য গরু জাবর কাটে তবু তখনই আমার মনে হতো - ভাগ্যিস মানুষ জাবর কাটে না। অনেক দিন পর মনে হলো এই জাবর কাটা সবসময় হজমের সহায়ক নয়,বরং এতে বদহজম হবার আংশকাও বোধ হয় থাকে।
সকালবেলা পত্রিকার পাতায় লগইন করে দেখি মাননীয় মন্ত্রী স্যার রমেশ চন্দ্র সেন বলেছেন ভারত টিপাইমুখ বাঁধের দৈর্ঘ্য প্রস্থ ছাড়া আর কোন তথ্য দেয়নি।
। এই এক লাইন পড়েই আমার হঠাৎ করে বদহজম হওয়া টিপাইমুখ (অতি আলোচনা এবং রাজনৈতিক রং প্রাপ্ত হওয়ায়) নিয়ে কিছু একটা লিখতে ইচ্ছে করলো। আমার কাছে এই প্রবাসে কোন বইপত্র নেই, এক ইন্টারনেটই ভরসা। সেখানেই সার্চ দিলাম। খানিকক্ষন ঘাটাঘাটি করার পর দেখলাম টিপাইমুখ বাঁধ প্রকল্পের নির্মান কাজের টেন্ডার পেয়েছে যে কোম্পানীটি তার নাম North Eastern Electric Power Corporation Limited, সংক্ষেপে NEEPCO।
NEEPCO র ওয়েবসাইটে টিপাইমুখ বাঁধ প্রকল্পের সম্পূর্ন EIA (Environmental Impact Assessment) রিপোর্টটি আছে। শতাধিক পৃষ্ঠার এই রিপোর্ট একদিনে পড়ে শেষ করা যাবে না। আমি প্রথম চ্যাপ্টারটি পড়েছি। সেখান থেকে প্রাপ্ত কিছু তথ্য পাঠকের সাথে শেয়ার করার ইচ্ছে হলো.
এই রিপোর্ট মতে ড্যামের কিছু ফিচার তুলে ধরছি।
অবস্থান- ২৪°১৪' উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯৩°১.৩' পূর্ব দ্রাঘিমা।
বরাক ও টুইভাই নদীর মিলনস্থল থেকে ৫০০ মিটার ভাটিতে (Downstram) এবং অমলসিধ থেকে ২০০কিঃমিঃ উজানে
প্রকার- মাটির ড্যাম, অভ্যন্তরভাগ পাথর নির্মিত
উচ্চতা - ভূমি থেকে ১৬১মিটার, সমুদ্র সমতল থেকে ১৮০মিটার
দৈর্ঘ্য - ৩৯০মিটার
পানি ধারন ক্ষমতা - ১৬ বিলিয়ন ঘনমিটার
সর্বোচ্চ রিজার্ভ লেভেল- ১৭৮মিটার
ড্যানের ক্যাচমেন্ট এরিয়া - ১২৭৫৮ বর্গ কিঃমিঃ
ড্যামের নির্মান ব্যায় - ১,০৭৮ কোটি ভারতীয় মুদ্রা
সমগ্র প্রকল্পের মোট ব্যায় - ৫১৬৩.৮৬ কোটি ভারতীয় মুদ্রা।
বহুমূখী এই প্রকল্পটি প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল মূলত বরাক উপত্যকায় পানি ধারনের মাধ্যমে ২,০৩৯ বর্গকিঃমিঃ এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রন । পরবর্তীতে এই ড্যামের মাধ্যমে সম্ভাব্য জলবিদ্যুৎ উৎপাদন লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫০০মেগাওয়াট (৬X২৫=১৫০০), যার মধ্যে ৪১২মেগাওয়াট ফার্ম জেনারেশন।
আরো জানা যায় এই ড্যামের স্পিলওয়ে (অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের পথ) ডিজাইন করা হয়েছে ৬৭৫০ ঘনমিটার/মিনিট পানি প্রবাহের জন্য। এমনকি এর পাওয়ার হাউসে ৬টা ২৫০মেগাওয়াট টারবাইন বসানোর কথা বলা আছে।
সবচেয়ে উলেখযোগ্য যে তথ্যটা পেলাম সেটা হলো টিপাইমুখ ড্যাম সাইট থেকে ৯৫কিঃমিঃ ভাটিতে ফুলেরতালে একটা ব্যারেজ নির্মানের প্রস্তাবনা আছে (যা ভারত সবসময় অস্বীকার করে আসছে)। এই ব্যারেজের মাধ্যমে ১১২০ঘনমিটার/মিনিট হারে পানি ডাইভার্ট করে ১২০৩৩৭ হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানের পরিকল্পনা আছে। তবে বর্তমানে NEEPCO এই প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যারেজের কাজ করছে না, এটি আলাদা ভাবে অন্য প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে করানো হবে।
ভারত যখন বরাবর ফুলেরতাল ব্যারেজের কথা অস্বীকার করে আসছিলো তখন আমি এই আশংকাই সবসময় করছি। প্রথমে বাঁধ, অতঃপর ধীরে ধীরে আসবে ব্যারেজ।
এখন দেখছি সেটা সত্যি হতে যাচ্ছে। বিশ্বাস না হলে আপনিও মিলিয়ে দেখতে পারেন। তবে আমি আসলে যা বলতে চাইছি তা হলো - যেখানে ওয়েবসাইটে এইসব তথ্য দেয়া আছে সেখানে ভারতের কেবল দৈর্ঘ্য প্রস্থ সরবরাহ করার কি কারন আর মন্ত্রী স্যারের সেটা নিয়ে এত আনন্দেরই বা কি কারন ?
আপনারা কেউ এই প্রশ্নের উত্তর জানলে দয়া করে আমাকে জানাবেন।
--------------------------------------------------------------------
জান্নাতুন নাহার (ব্লগার 'আনন্দময়ী') এর লিখা, তার অনুমতি নিয়ে প্রকাশিত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।