আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাল্যবিয়ে : মধ্যযুগের ভূত



বাল্যবিয়ে : মধ্যযুগের ভূত ফকির ইলিয়াস ======================================= এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে বাল্যবিয়ের কথা ভাবা যায়! হ্যাঁ, বিশ্বের বেশ কিছু দেশে এখনো তেমনটি হচ্ছে। সম্প্রতি সৌদি আরবে আট বছরের একটি মেয়ের তালাককে কেন্দ্র করে বিষয়টি বিশ্বে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে। ২০০৮ সালে এই সৌদি বাবা মাত্র তেরো হাজার মার্কিন ডলার সমমানের অর্থে নিজ আট বছরের মেয়েকে তুলে দেন পঞ্চাশ বছর বয়সের এক ধনকুবেরের হাতে। মেয়েটির মা এই বিয়েতে রাজি ছিলেন না। মেয়েটি ওই ধনকুবেরের সঙ্গে ঘর করতে না পেরে এ বছর আদালতে তালাক প্রার্থনা করে।

ঘটনাটি বিশ্বে জানাজানি হওয়ার পর সৌদি মিত্র বলে পরিচিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন মানবকল্যাণ সংস্থা ঝাঁপিয়ে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে কূট চালাচালি হয় সৌদি আরব-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে। তা ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশগুলোরও নজর কাড়ে। ইউএস হিউম্যান রাইটসের মুখপাত্র মি চার্লস ল্যান্ডন বলেন, এটি সম্পূর্ণ মানবতাবিরোধী। এই প্রযুক্তি বিকাশের যুগে দাঁড়িয়ে এমন আদিমতা মানা যায় না।

এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনকে সৌদি কর্তৃপক্ষকে চাপ প্রয়োগেরও অনুরোধ করা হয়। পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে বিষয়টি তালাকের মাধ্যমে সুরাহার জন্য গেল আগস্ট মাসেই প্রস্তুতি নেয়া হয়। মেয়েটির পক্ষে সৌদি আইনজীবী মি. আব্দুল্লাহ আল তালালি আদালতের শরণাপন্ন হন। সৌদি আরবের ওনেজিয়া প্রদেশের আদালত প্রথমে আবেদনটি খারিজ করে দেয়। মামলাটি গ্রহণ করতেই রাজি হয়নি।

আদালত প্রথমে বলে মেয়েটি সাবালিকা না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। মেয়েটির মা বিশ্বমানবতার দৃষ্টি আকর্ষণ করার পর ইউএস এটর্নিস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে বিবৃতি দিয়ে বলা হয় যে, মেয়েটিকে নাবালক অবস্থায়ই বিয়ের পিঁড়িতে বসার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হতে পারে। তাকে ডিভোর্স নেয়ার জন্য সাবালিকা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে কেন? সংবাদটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী মিডিয়াগুলোতে ব্যাপকভাবে প্রচার পাওয়ার পর সৌদি দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভও করে মানবতাবাদী সংগঠনগুলো। মুসলিম শরিয়া আইনে কেন বাল্যবিয়েকে মেনে নেয়া হয় তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয় সে দেশে বিয়ের ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনো বয়সসীমার বাঁধাধরা নিয়ম নেই।

সর্বশেষ সংবাদ অনুযায়ী মেয়েটির তালাকের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হলেও এখনো কোনো তারিখ নির্ধারিত হয়নি। এদিকে মার্কিন মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলেছে, গোটা বিশ্বে বাল্যবিয়ে ও যৌতুকের বিরুদ্ধে তাদের প্রচারণা এবং জনমত গঠন অব্যাহত থাকবে। বাল্যবিয়ে প্রথা বর্তমান আধুনিক বিশ্বে প্রকৃত পক্ষেই একটি চরম অভিশাপ বলে বিবেচিত। কারণ একজন মানুষ যদি আঠারো বছরের আগে ভোটাধিকার না পায় তাহলে বিয়ের মতো দায়িত্বশীল সামাজিক ভারটি তার ওপর কিভাবে চাপিয়ে দেয়া হয়? সময় এগিয়েছে। বিশ্ব এগুচ্ছে সভ্যতার বিবর্তনের পথ ধরে।

অথচ এমন মানসিকতা পোষণ এবং রাষ্ট্রপক্ষের পৃষ্ঠপোষকতা আসলেই একটি চরম মানবতা লঙ্ঘন বৈকি। আটলান্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ম্যানুয়েল গর্টেস-এর মতে, এটা মানুষের বনেদি আদিমতারই বহিঃপ্রকাশ। কারণ, মুখে সভ্যতার কথা বললেও যারা একটি শিশুকে অর্থমূল্যে বিয়ের নামে বিক্রি করে দিতে পারে; তাদেরকে কি হিসেবে বিবেচনা করা যায়? বাল্যবিয়ে প্রথা রোধে আন্তর্জাতিক সমন্বয় এবং আইন প্রণয়ন জরুরি। এ বিষয়ে জাতিসংঘের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়া উচিত। তারপরও যারা বা যে রাষ্ট্র বাল্যবিয়েকে প্রশ্রয় দেবে তাদের বিরুদ্ধে অন্যান্য অবরোধ আরোপের বিষয়টিও বিবেচনায় আনা যেতে পারে।

-------------------------------------------------------------- দৈনিক ডেসটিনি। ঢাকা। ৫ জুলাই ২০০৯ রোববার প্রকাশিত

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।