কেবলই নিজেকে খুঁজছি
আমাদের কথা কেহ শুনিবার নাই। আমাদের কাঁন্না শুনিবারও কেহ নাই। তবু আমরা বলিতে চাই, কাঁদিতে চাই আপনার নিকট। যে জন্যে আজকে এই কথা, এই কাঁন্না। জাতির জনকের কন্যা হওয়ায় আপনি আজ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হইয়াছেন ইহা সত্য।
আপনি প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হইয়া আপনার পিতৃভূমির আবর্জনা পরিষ্কার করিয়া গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়াকে প্রায় শহরের রুপ দিয়াছেন। ঐ ধানক্ষেত বেষ্টিত জায়গাকে এখন আর চেনাই যায় না। উত্তম।
আপনি রাজনীতি করিতেছেন বলিয়াই আপনার পিতৃভুমি রক্ষা পাইয়াছে। আপনি যদি রাজনীতিতে নাও আসিতেন তবুও ইহা রক্ষা করা আমাদের কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে।
কথা হলো আপনি যাহা বানাইবেন তাহাই আপনার পিতার নামে করিবেন, আপনার শিক্ষা কি ইহাই বলে! আপনার অন্য সখির কথা না হয় বাদই দিলাম। তিনি না হয় অল্প শিক্ষিত। যাহা বানায় তাহাই তাহার মৃত স্বামীর নামে করিতে চায়। পারলে বাথরুমকেও তাহার স্বামীর নামে নামকরণ করে। যাইহোক আপনারা রাজনীতি করেন বলিয়াই আপনাদের পূর্বসুরিদের নাম অতিমাত্রায় রক্ষা করিতেছেন।
কিন্তু একবার ভাবিয়া দেখুন তো যে সকলগুণীজনের উত্তরসুরিরা রাজনীতি করেন না। তাহাদের নাম বা বসতবাড়ি কি রক্ষা পাইবে না! তবে কি একটি দেশ কেবল রাজনীতিবিদদের লইয়াই পূর্ণতা পায়! বাকী সবার কোন ভুমিকা নেই দেশ গঠনে বা জাতি গঠনে! অথবা আমাদের সংস্কৃতিতে!
আপনারা কিন্তু সব রাজনীতিবিদদের নাম এবং স্মৃতি রক্ষা করেন না। কেবল যাহারা আপনাদের পরিবারের অথবা আপনাদের দল করিয়া থাকেন তাহাদের স্মৃতি-ই আপনারা অতিমাত্রায় রক্ষা করিতে চেষ্টা করেন। আপনি কি অশ্বিনী দত্তের নাম শুনিয়াছেন? তিনি রাজনীতি করিতেন। বরিশালের।
তাহার বাড়ি বরিশাল কলেজ কতৃপক্ষ অনেক আগেই দখল করিয়াছে। সেখানে একপাশে বিল্ডিং তোলা হইয়াছে। অন্যপশে মসজিদ। অশ্বিনী দত্তের স্মৃতিবিজড়িত পুকুরটি এখনও রিহয়াছে। সিটি করপোরেশন ময়লা-আবর্জনা ফেলিয়া পুকুরটি পূর্ণ করিতেছে।
কলেজ কতৃপক্ষও ওখানে ভবন নির্মাণের জন্য পায়তারা করিতেছে। হয়তো ভবন নির্মাণ হইবেও। তাহা হইলেই অশ্বিনী দত্ত নামটি একেবারে মুছিয়া যাইবে। কেন? তাঁর কোন উত্তরসুরি বর্তমানে আপনাদের রাজনীতি করিতেছেন না বলে?
বরিশালেরই আরেক কৃতি সন্তান জীবনানন্দ দাশ। তাহার বড়িতেও দোকানপাট তুলিয়া অনেকেই দিব্যি সংসার চালাইতেছে।
কেন জীবনানন্দের কোন উত্তরসুরি রাজনীতি করিতেছেন না বলে?
আরেকজন অকালপ্রয়াত প্রতিভাবান কবির কথা বলিব। সুকান্ত ভট্টাচার্য। আপনার এলাকায়ই তাঁহার পিতৃভূমি। তাহার ভিটে-বাড়িও এতকাল দখলে ছিল। এখন নাকি তাহা উদ্ধার করা হইয়াছে।
স্মৃতি রক্ষা করা হইবে। শুনিয়া শুধু ভাল লাগিল না, কাঁন্নাও পাইল। এতদিন কেন রক্ষা পায়নি? আগেও তো একবার ক্ষমতায় আসিয়াছিলেন! আপনারা তো নিজেদেরকে সংস্কৃতির কাছের মানুষ বলে নিজেদেরকে পরিচয় দেন। যদিও সংস্কৃতিতে বাজেট এবারও কম। যাহাহোক এবার আরেকজনের কথা বলি।
তিনি কিংবদন্তী নায়িকা সুচিত্রাসেন। তাহার বাড়ি ছিল পাবনা। তিনি এখানে শৈশব-কৈশোর কাঁটিয়েছেন। অনেক স্মৃতি এখানে তাহার, এখনও তিনি বলিয়া থাকেন। তাঁহার বাড়িটি এখন কি অবস্থায় আছে জানেন? জামায়াতের গবেষনা ইনস্টিটিউট এবং একটি জামাতী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
ভাবা যায়! কিংবদন্তী নায়িকার বাড়িতে জামাতের আখড়া! যেখানে রহিয়াছে সুচিত্রা সেনের শৈশব-কৈশোরের পায়ের ছাপ। সেখানে এখন জামায়াত-শিবির, রাজাকার-জঙ্গীরা ঘুরিয়া বেড়াইতেছে! ভারতের আজকাল পিত্রকায় দেখিলাম এ জায়গাটিও রক্ষা করা হইবে। আমাদেরকে কি আশাবাদী হইতে বলিতেছেন আপনি? আরো কত কি দেখিবো এদেশে। এরকম আরো কত খবর আমরা শুনিবো। আর আমরা নীরবে চোখের জল ফেলিবো।
মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী আপনার কাঁন্না পায় না এসব খবর পড়িয়া? নাকি রাজনীতি করিতেছেন বলিয়া বুকে পাথর চাপিয়া বিবেকের চোখ বন্ধ করিয়া রাখিয়াছেন! এই সব ব্যক্তিদের স্মৃতি রক্ষা না করিলে তাহাদের কিছু আসিবে যাইবে না। ক্ষতি আমাদের। এই লজ্জা আমাদের! মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী এখনো সময় আছে গুনীজনদের স্মৃতিবিজরিত স্থান দখলমুক্ত করিয়া তাঁহাদের স্মৃতি সংরক্ষণ করুন। তাহাতে আমাদের সংস্কৃতিই সমৃদ্ধ হইবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।