আমার নিক পদ্মলোচন করে দেওয়া হোক
অনেকেই অনেক কিছু করেন ছোটবেলায় । কিন্তু ছোটবেলা থেকেই আমি বিশাল ত্যাদড় গোছের প্রানি। ত্যাদড়ামী ছাড়া কিছু করি নাই । যেই সময় পোলাপাইন হিসাব করে আজকে বাড়ির কাজ কি কি । আমি হিসাব করতাম আজকে কি কি বিচার আসবে এবং কতভাবে উছিলা বলে সেইগুলা থেকে বাচা যাবে।
বাবা বলে আমার ভিতর নাকি ভাংচুরের লক্ষন বেশ ছোটবেলা থেকেই বিদ্যমান । আমি বলব বৈজ্ঞানিক প্রতিভা।
আমার ১ম জন্মদিনে একজন একটা গ্লোব দিয়েছিল উপহার । আমি তো সুবোধ বাচ্চা । সেটা নিয়ে খেলা না কারে এক্সপেরিমেন্ট করলাম ।
বাবার মুখে শুনেছি গ্লোবটা পাওয়ার ১০ মিনিটের ভিতর আমি ওইটার ভিতর একটা কাঠি ঢুকায় দিয়েছিলাম । আমার মতে আমি দেখতে চাইছিলাম পৃথিবীর ভিতর কি আছে । কারন আমি নাকি বার বার বলছিলাম ভিতরে কি?
আমার সাথে কার দেখা হলে মনে করাবেন । আমার বাম হাতের একটা দাগ দেখাব। এখন দাগের গল্পে আসি ।
আমার তখন সোয়া ১ বছর হবে । বাবার একটা রেডিও ছিল। বাবা সেইটায় তার লাগিয়ে কেমনে করে জানি নেটওয়ার্ক পরিস্কার ভাবে ধরত। আমার তখনকার মত এখনও আগ্রহ আছে কি ভাবে বাবা কি করত । থিওরিটা আসলে কি ।
সেযাক আমি তো খালি বুঝি তার । একদিন খালি ঘরে কোন কিছুর তার ঝুলছিল । আমি আমার অদম্য আগ্রহের কাছে হার মেনে সেই তার ধরে শক খাই । হ্যা আমার বামহাতে সেই দাগ এখন আছে । থাকবেও সারাজীবন ।
আমার জানার আগ্রহ আরেকটু বড় হওয়ার পরে আর বাড়ল । বললে বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না । আমি এখন পর্যন্ত অন্যান্য ছেলেদের মত ভিডিও গেমস দিয়ে খেলতে পারি নি । আমাকে গেমস কিনে দেওয়ার পরে ঐটা সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট ঠিক থাকত। এরপরেই শুরু হত আমার মেকানিজম ।
ভিডিও গেমসের বাবার কি সাধ্য ঠিক থাকে । আমার গুতাগুতিতে নষ্ট তাকে হতেই হবে ।
ক্লাস থ্রিতে মাত্র উঠেছি বা উঠব । বাসায় কিছু একটা নষ্ট হওয়ার পরে বাবা সুইচ বোর্ড খুলে ঠিক করল আমি চুপচাপ আগ্রহ ভরে দেখলাম । বাবাকে বললাম বাবা আমি করি? সাথে সাথে উত্তর না।
আমার তো পেটের ভাত হজম হচ্ছে না । করতেই হবে । তার দুইতিন দিন পরে নানী বাসায় এসে বাসার যে ৩ পীন প্লাগ বোর্ড আছে ওইটা গভীর মনযোগ দিয়ে দেখছি দেখে আমার খালা বলল “ বাবা কি করিস। “ আমি স্বভাব সিদ্ধ উত্তর দিলাম কিছু না। দুপুরে খাওয়ার পরে যখন সবাই বিশ্রাম নিচ্ছে আমি নেইলকাটার নিয়ে নেইলকাটারের চাকুটা বের করে ৩ পীন প্লাগের বড় ফুটাতা দিয়ে ঢুকাইয়া দিসি ।
কারন তখন টেষ্টার কি জিনিস জানি না । ফল শক । খালা দৌড়ে আসছে যে কি হল । আমি কিছু না বললেও খালা ৩ পীন প্লাগের ভিতর নেইলকাটার ঢুকানো দেখেই যা বুঝার বুঝলেন । তখন মনে হচ্ছিল আমার বাবা কত শক্তিশালি ।
এত কষ্ট হচ্ছিল বাবার কই আমি তো বুঝি নি। বাবা কত শক্তিশালী হলে এত কষ্ট সহ্য করতে পারে । কারন আমি মনে করছিলাম যে বাবাও বুঝি আমার মত শক খেয়েছে । এখন বুঝি বাবা আসলেই কত শক্তিশালী । কত কষ্ট করে আমাদের জন্য ।
আমার বাবার কথায় আসলেই আমি একটু দুর্বল হয়ে যাই । আমার বাবাকে নিয়ে আমি এখন কিছু বলব না । কারন ইচ্ছা আছে বাবাকে নিয়ে সম্পূর্ন আলাদা একটা পর্ব লেখব ।
আবার আমার নিজের কথায় ফিরে যাই । আমি বিশাল দুষ্ট ও দাঙ্গাবাজ ছিলাম ।
নিজের চেয়ে অনেক বড়দের উপরে ঝাপাইয়া পড়াতেও আমার জুড়ি ছিল না। আমার কাজিনরা এই কারনে ছোট বেলা থেকেই আমাকে একটু ভয় করে আর হাতের রেঞ্জ থেকে দূরে থাকে।
ক্লাসে ২ এ থাকতে আমাদের ক্লাস ক্যাপ্টেন ছিল আরিফ। ওর সাথে আমার আগেই লাগালাগি ছিল । আমি ওর চকলেট ছিনতাই করেছিলাম ।
ক্লাসে কি যেন করার পর সে আমার নামে ক্লাস টিচারের কাছে আমার নামে বিচার দিয়েছে । টিচার আমাকে মারল । আমার তো মেজাজ খারাপ । শালারপুত বিচার দিসত । গরররররর ।
টিফিন পিরিয়ডে ধরলাম । অই শালাও কম খারাপ ছিল না আমাকে বলে মারবে । আমার তো মাথা নষ্ট । কিহ আমারে মারবি তুই? লেগে গেলাম মারামারি । জীবনের প্রথম রক্তারক্তি মারামারি ।
এক ঘুসিতে ওর নাকের হাড় ভেঙ্গে দিয়েছিলাম । রক্ত বেরুচ্ছিল । আমাদের ডেকে নেওয়া হ্ল হেড মিস্ট্রেসের রুমে । সব শোনার দরকার ও ছিল না আমাকে তো তিনি চিনেনই আমি কেমন । কারন গত এক বছরে আমি যত বান্দরামী করছি এত পুরা স্কুলে হয় না।
আমাকে পানিশমেন্ট দিলেন । টিফিনের পর থেকে আমাকে মাঠে রোদে দাড়াইয়া থাকা লাগবে ।
আমার মত শয়তানের জন্য এর চেয়ে খুশি আর কি হতে পারে যে ক্লাস করব না? কিন্তু ছুটির পর ডেকে যখন বললেন যে বাবা মাকে উনি জানাবেন । তখন ভয় পেলাম । প্রমিজ করলাম দুষ্টামী করব না ।
সেই প্রথম ওয়াদা ভঙ্গ করা শিখলাম । কারন পরের দিনই ক্লাসে ফিরে পিয়াসকে সাথে নিয়ে আরিফের ব্যাগে পানি ঢেলে দিয়েছিলাম ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।